পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক পথের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি সবারই জানা। শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন থাকা মানেই যেন বিস্ময়কর ব্যাপার। ঢাকার মতো বিশ্বের কোনো দেশের রাজধানীর সড়ক পথে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা যায় না। যানজট থেকে একটু নিস্তার ও সময় বাঁচিয়ে দ্রুত যাতায়াত করার জন্য যেসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, এখন দেখা যাচ্ছে সেগুলোতেও অনিয়ম বাসা বেঁধেছে। রাজধানীতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ হানিফ ফ্লাইওভারে অনিয়মের বিষয়টি নতুন নয়। চালু হওয়ার পর থেকেই তা চলে আসছে। লেখালেখি হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে, তারপর আবার অনিয়ম আরও জোরেসোরে শুরু হয়। ফ্লাইওভারটির অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, এটি অনেকটা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানো, বাস স্টপেজ সৃষ্টিসহ নানা অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানিসহ বহু মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফ্লাইওভারের উপর ৭টি স্থানে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বাস স্টপেজে যাত্রী উঠার জন্য নিচ থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত সিঁড়িও তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে যানবাহন চলাচল যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটছে। ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ার পর গত তিন বছরে দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু এবং অনেকে আহত হয়েছে বলে এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বলা বাহুল্য, ফ্লাইওভার নির্মাণ করাই হয় কোনো ধরনের স্টপেজ ছাড়া দ্রুতগতিতে যাতায়াত করার জন্য। এতে যাত্রী উঠা-নামার কোনো সুযোগই নাই। বিশ্বের যে কোনো দেশের ফ্লাইওভারের বৈশিষ্ট্যই এরকম। যাত্রী উঠা-নামা দূরে থাক, যানবাহন থামার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয় না। এটিকে বলা হয় দ্রুতগতির অবকাঠামো। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যে যানজট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এগুলো নির্মিত হয়েছে, সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। অনেকটা নিচের সড়কের যানজট ও অনিয়ম যেন মাথার উপর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই অনিয়মকে ভয়াবহ ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! এমনিতেই বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ তুলেছেন, কোনো কোনো ফ্লাইওভার ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, এগুলো একসময় রাজধানীর জন্য মহাসমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হবে। আধুনিক বিশ্ব যেখানে ফ্লাইওভারের কুফল উপলব্ধি করে তা নির্মাণ থেকে সরে আসছে, সেখানে আমরা শুরু করছি। যে যানজট থেকে মুক্ত থাকার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনার কারণে ইতোমধ্যে তাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যানজট এখন ফ্লাইওভার পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। ফ্লাইওভার দিয়ে দ্রুত কিছু পথ অতিক্রম করার পরই দেখা যায় তার মুখে জট লেগে রয়েছে। উঠতেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। এর উপর রয়েছে অনিয়ম। ফ্লাইওভারের উপর গাড়ি থামানো এবং লোকজনের চলাচল নিষেধ হলেও হরহামেশা তা দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে দীর্ঘ হানিফ ফ্লাইওভারে যে অনিয়ম শুরু হয়েছে, তাতে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ফ্লাইওভারের মুখেই যদি বাস স্টপেজ গড়ে তোলা হয়, তবে ফ্লাইওভারের কার্যকারিতাই তো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবে তাই হচ্ছে। শুধু উঠার মুখেই নয়, আরও ৭ জায়গায় স্টপেজ করা হয়েছে। এসব স্টপেজে যাত্রীদের যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভারের দেয়াল ভেঙ্গে সিঁড়িও করা হয়েছে। এত বড় অনিয়মে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো, যাত্রীরা ফ্লাইওভারের সড়ক হুটহাট করে পার হতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহনের নিচে চাপা পড়ছে। অনেক সময় দ্রুতগামী যানবাহনের চালকদের আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়াতে হচ্ছে এবং তাতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে যে উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছে, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ফ্লাইওভারের ধরণ, বৈশিষ্ট্য এবং নকশা অনুযায়ী এর উপর কোনো ধরনের বাস স্টপেজ ও পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। থাকারও কথা নয়। বিশ্বের কোথাও তা রাখা হয় না। দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচলের জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের ফ্লাইওভারগুলোতে এ নিয়ম থাকলেও ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একশ্রেণীর লোকজন তা মানছে না। তারা নকশাবহির্ভূত ও নিয়ম ভঙ্গ করেই নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। তা নাহলে হানিফ ফ্লাইওভারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভারে এই অনিয়ম হবে কেন? যেখানে একটু স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করার জন্য যানবাহন ও যাত্রীদের টোল দিতে হয়, সেখানে এই অরাজকতায় পড়তে হবে কেন? সবচেয়ে বড় কথা, এই অনিয়মের জন্য অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাাচ্ছে, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। কর্তৃপক্ষের কানে কি এসব দুর্ঘটনার সংবাদ পৌঁছায় না? নাকি তারা জেনেও না জানার ভান করছে? আর কত দুর্ঘটনা ঘটলে এবং প্রাণ গেলে তাদের হুঁশ হবে? আমরা মনে করি, হানিফ ফ্লাইওভারে যে অনিয়ম চলছে এবং ফ্লাইওভারের চরিত্র হারাচ্ছে, তা দ্রুত নিরসন করা উচিত। এভাবে একটি ফ্লাইওভার চলতে পারে না। এর যত অনিয়ম রয়েছে, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা দূর করতে হবে। ফ্লাইওভারটিকে যানবাহন চলাচলে নির্বিঘœ করতে হবে। আর যাতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি না ঘটে, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।