পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী চেতনাবোধ ধ্বংসের চক্রান্তের ঘটনায় বিভিন্ন ইসলামী দলের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দিলে মুসলমানদের হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম জনগণের ঈমান আক্বিদা, বিশ্বাস ও অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত। এ দেশের মাটিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না।
ইসলামী ঐক্যজোট : বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী চেতনাবোধ ধ্বংসের চক্রান্তের প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মাওলানা আব্দুর রকিব এবং মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবুল করিম খাঁন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম করার বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ১৯৮৪ সালের ১৮ মার্চ সামরিক সচিবালয়ে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর সকল বিভাগের সমন্বয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সংরক্ষিত তদানীন্তন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এ আর ইউসুফের সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অত:পর পরবর্তীতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম গৃহীত হওয়ার পর সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে দেশের সকল মহল অবগত আছেন। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার ফলে সকল ধর্মাবলম্বীরা ধর্মপালনের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এই অবস্থায় সংবিধান হতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিলে দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে জ্বলবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পাটি : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান, নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা একে এম আশরাফুল হক, সহ-সভাপতি শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা খলিলুর রহমান, শায়খুল হাদিস মাওলানা ওলি উল্লাহ, মাওলানা নওফল আহমদ, মাওলানা মাহবুবুর রহমান নড়াইলি, প্রিন্সিপাল রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মিজানুর রহমান রাজাপুরি,অর্থসচিব মাওলানা মুমিনুল ইসলাম, যুগ্মসচিব মাওলানা যোবাইর হোসেন নেজামী, মাওলানা নজরুল ইসলাম, হাফেজ সাইদুর রহমান, সংগঠন সচিব আমির হোসেন হিরা গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দেশের ৯২ শতাংশ জনগণের ঈমান আক্বিদা, বিশ্বাস ও অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতি ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে। যা এদেশের জাতিসত্ত্বার পরিচয় বহন করে। সুতরাং যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতি বুঝতে সক্ষম নয়, যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিম পরিচিতি বাদ দিতে চায়, যারা মুসলিম জাতিসত্ত্বা মুছে দিতে চায় তারাই কেবল রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কারো পক্ষে বাদ দেয়া সম্ভব নয়। হাইকোর্টে বার বার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে আলোচনা ও শুনানি বাংলাদেশ ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন।
নেতারা আরো বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। কেউ ইচ্ছা করলেই সংবিধান থেকে রাষ্টধর্ম ইসলাম বাদ দিতে পারবে না বলেও এসময় তারা মন্তব্য করেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করান। এতে কয়েকটি অনুচ্ছেদকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হিসবে নির্ধারণ করা হয়। এই মৌলিক কাঠামো কারো পক্ষেই সংশোধন করা সম্ভব নয় বলেও নেতারা উল্লেখ করেন। তারা আরো বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হচ্ছে, সংবিধানের প্রথম ভাগের অংশ (২ক)। আর সংবিধানের প্রথম ভাগ হলো সংশোধন অযোগ্য। সুতরাং কোনো দল বা গোষ্ঠী, এমনকি জাতীয় সংসদ চাইলেও সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধন করতে পারবে না। কেউ যদি মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
তারা আরো বলেন, যারা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার জন্য বার বার বিষয়টিকে হাইকোর্টে আলোচনা ও শুনানির চেষ্টা করছেন, তাদের উচিৎ হবে সংবিধান ভালো করে পড়ে নেয়া অথবা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ব্যাপারটি বুঝে নেয়া। কারণ, ১৫তম সংশোধনীটি একটি কমিটি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই কাজটি করিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন তারা মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। দেশে ধর্মীয় সংঘাত, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ : ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ এ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছিলো, আছে, থাকতে হবে।
বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোটে যদি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল যদি রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য নির্বাচিত হতে পারে তবে ৯৫% মুসলমানদের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও থাকবে। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে যারা ইসলামকে রাষ্টধর্ম হিসেবে থাকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদেরকে দুশমন। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে যদি কোন চক্রান্ত হয় তবে দেশের জনগণ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।
এছাড়াও সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় সংহতি মঞ্চ, বিশ্ব মুসলিম পরিষদ, জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, মুসলিম ল’ এসোসিয়েশন, কওমি মাদরাসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও কওমি মাদরাসা শিক্ষক ফেডারেশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।