পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী তো বটেই যেকোনো সুশৃঙ্খল শহরে মার্কেট, শপিংমলে সাপ্তাহিক বন্ধের নিয়ম নগর কর্তৃপক্ষ করে থাকে। বিধিবদ্ধ নিয়মের মধ্যে এগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধ পালন করা হয়। আমাদের দেশেও মার্কেট, শপিংমলের সাপ্তাহিক বন্ধের বিধি করা হয়েছে। তবে এ বিধি-নিষেধ মার্কেট ও শপিংমল কর্তৃপক্ষ মানছে না। ফলে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে এক ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু মার্কেট ও শপিংমলই নয়, ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট স্থানে হলি ডে মার্কেটেরও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা হকাররা না মেনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন হকার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও তার কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটপাত বলে কিছু থাকছে না। ফুটপাতগুলো মার্কেটে পরিণত হয়েছে। এতে পথচারীরা যেমন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে না, তেমনি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করায় সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। ফুটপাত হকারদের কাছে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী ও শ্রমিক নেতা মাসে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। মার্কেট-শপিংমলগুলোও এখন সাপ্তাহিক বন্ধের তোয়াক্কা করছে না। বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেই সপ্তাহের ৭ দিন খোলা রাখছে। এতে নগরজুড়ে এক ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে।
উন্নত বিশ্বে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে মার্কেট, শপিংমলের সাপ্তাহিক বন্ধ কঠোরভাবে প্রতিপালিত হয়। নগরীর শৃঙ্খলা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী এ বিধিনিষেধ মানা হয়। রাজধানীকেন্দ্রিক মার্কেট-শপিংমল আবশ্যিকভাবে সাপ্তাহিক বন্ধের আওতায় থাকে। কেউ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের দেশেই কেবর ব্যতিক্রম। উল্লেখ্য, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাজধানীকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করে মার্কেট, শপিংমল বন্ধের দিন ধার্য করা হয়েছে। ২০১০ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয়। অবশ্য তারও আগে থেকেই আমরা দেখেছি, এলাকাভিত্তিক মার্কেট ও শপিংমল কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক বন্ধ পালন করত। রাজধানীর প্রাচীন মার্কেট নিউ মার্কেট সোমবার অর্ধদিবস, মঙ্গলবার পূর্ণ দিবস বন্ধ পালন করে আসছে। এর সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা অন্যান্য মার্কেট ও শপিংমলও একইভাবে সাপ্তাহিক বন্ধ পালন করে। বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকায় শুক্রবার পূর্ণ ও শনিবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। উত্তরাস্থ বিভিন্ন মার্কেট বুধবার বন্ধ থাকে। এভাবে রাজধানীর ৭টি অঞ্চলে বিভক্ত এলাকাভিত্তিক সপ্তাহের ৭ দিন পূর্ণ ও অর্ধদিবস বন্ধ থাকার নিয়ম প্রচলিত। এখন এ নিয়ম অনেকেই মানছে না। তারা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সপ্তাহে ৭ দিন খোলা রাখছে। শপিংমলগুলোর কোনো কোনোটি বন্ধের দিন খোলা রাখে। সাধারণত পাড়া-মহল্লায় ও অন্যান্য স্থানে গড়ে উঠা নিত্যপণ্যের দোকানপাট ও কাঁচাবাজার বন্ধের বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নগরীর যানজটের অন্যতম কারণ মার্কেট ও শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্ক ও যানবাহনের যাতায়াত। এগুলোর সামনে সবসময়ই ক্রেতাসমাগম ও ভিড় লেগে থাকে। মার্কেট ও শপিংমলে সাপ্তাহিক বন্ধের বিধিনিষেধ না মানায় নগরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎও খরচ হচ্ছে। সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক এবং ১ মার্চ থেকে প্রাইমারি স্কুল খুলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় অঞ্চলভেদে মার্কেট ও শপিংমলগুলো যদি সপ্তাহের ৭ দিন খোলা থাকে, তাহলে যানজট পরিস্থিতি কী ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, তা সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে, ফুটপাতগুলোও হকারদের দখলে রয়ে গেছে। ফুটপাত হকারমুক্ত করতে নির্দিষ্ট স্থানে হলি ডে মার্কেটও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এতে বছরের পর বছর ধরে যানজট ও বিদ্যুৎ অপচয় চলছে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখা ও সাপ্তাহিক বন্ধের ক্ষেত্রে অবিলম্বে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দিনের পর দিন এ ধরনের বিশৃঙ্খলা চলতে পারে না। সাপ্তাহিক বন্ধের সময়সূচি ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মানার বাধ্যবাধকতা বলবৎ করতে হবে। যারা বিধিনিষেধ অমান্য করে মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কেট ও শপিংমল কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। স্ব স্ব মার্কেট ও শপিংমলের সাপ্তাহিক বন্ধ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা। মার্কেট ও শপিংমল সাপ্তাহিক বন্ধের বিধিনিষেধ অমান্য করলে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সিটি করপোরেশনের উচিৎ এলাকাভিত্তিক নজরদারি জোরদার করা। বন্ধের দিন কোনো মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখলে বিদুৎ কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেয়া। ফুটপাত হকারমুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।