Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এখনই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনীপন্থা খুঁজে বের করার তাকিদ দিয়েছে ঢাকা সফরে আসা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দল। তিনদিনের সফরের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রধান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন জ্যঁ ল্যাম্বার্টে এ তাকিদ দেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে ইইউ’র কোনো সুপারিশ আছে কিনা। জবাবে জ্যঁ ল্যাম্বার্টে বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতির বিষয়ে ইইউ অবহিত রয়েছে। এটি যে জরুরি, সবাই জানেন। এখানে পার্লামেন্ট আছে, সংবিধান আছে। দেশের রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডাররা আলোচনা করেই একটি গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে নিতে পারে। ইইউ বা অন্য কেউ এটা করে দেবে না। বাংলাদেশকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখনই আলোচনা হওয়া উচিৎ। দেশের অন্য রাজনীতিক, যাদের আগ্রহ রয়েছে অথবা যাদের চিন্তা আছে তারাও আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। বলাবাহুল্য, জ্যঁ ল্যাম্বার্টের জবানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই তাকিদ ও বক্তব্যের মধ্যে কোনো ঘোরপ্যাঁচ বা অসচ্ছতা নেই। অত্যন্ত সোজা-সাপটাভাবেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন জরুরি। সেটা সম্ভবপর করে তুলতে হলে নির্বাচনকালীন একটি গ্রহণযোগ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের বিকল্প নেই। সেই কর্তৃপক্ষ কিভাবে ও ভিত্তিতে গঠিত হবে, সেটা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে। অন্য কারো পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। সংবিধান, পার্লামেন্ট, রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডাদেরই তা করতে হবে। এ জন্য আলোচনায় বসতে হবে এবং সেটা এখনই।
দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে অপরিহার্য, তাতে কোনো ভিন্নমত নেই। কারণ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচনটি হয়েছে তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণীয়। ওই নির্বাচন না হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু আর না হয়েছে অংশগ্রহণমূলক। একতরফা ও জবাবদস্তিমূলক ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল, নির্দলীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্বাচন। সরকার তাদের দাবি না মেনে নির্বাচন করেছে। বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে অংশ না নেয়া এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াসহ ভোটারবিহীন, অনিয়ম ও জবরদস্তিমূলক নির্বাচন শুধু এদেশের ইতিহাসে নয়, গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সরকারের তরফে তখন আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচনটি করতে হচ্ছে, নির্বাচনের পরপরই আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে যা হবে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য। ইতোমধ্যে দু’বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা হয় নি। সরকার তার কথা থেকে সরে এসে এখন বলছে, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার আগে কোনো নির্বাচন নয়। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো তাদের নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অটল রয়েছে। বিএনপির তরফে বারবার বলা হচ্ছে, অবিলম্বে নির্বাচন দেয়া হোক এবং এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ব্যবস্থা করা হোক। সরকার বিএনপির দাবি ও বক্তব্য গ্রাহ্যে আনছে না। এমতাবস্থায় বলা যায়, রাজনৈতিক সংকট যেখানে ছিল এখনো সেখানেই অবস্থান করছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই কেবল বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা হতে পারে, এ অভিমত দেশি-বিদেশী সকল মহলের। ইইউ’র সর্বশেষ অভিমতেও মূলত একথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ভারত বাদে গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো শুরু থেকেই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাকিদ দিয়ে আসছে। দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল, জনগণ ও প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর এহেন পূর্বাপর তাকিদ উপেক্ষা করা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে না।
দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন যে বিপর্যয়কর অবস্থায় পতিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থার উত্তরণ নির্ভর করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাফল্যের ওপর। আমরা দেখেছি, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কেন, কোনো নির্বাচনেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের যে চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে, তাতে স্পষ্টই প্রতিভাত হয়েছে, জনগণ কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। সরকারী দলের প্রার্থীরা পেশিবলে ও রাষ্ট্রশক্তির মদদে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে নির্বাচনেও ব্যতিক্রম কিছু হবে বলে কেউ মনে করছে না। নির্বাচনের সংস্কৃতিটাই সরকার বদলে ফেলেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের যতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, দেশে তার সবই দৃশ্যমান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তির মতো সম্প্রতি ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক কূলদীপ নায়ারও কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন করেছেন, বাংলাদেশ কি তার পথ হারিয়েছে? দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিবেশী ভারত দ্রুত, উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করছে। অপর প্রতিবেশী মিয়ানমারও গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে এবং ইতোমধ্যেই তার উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ খুলে গেছে। অথচ আমাদের দেশ গণতন্ত্রহীনতার আবর্তে পতিত। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আশংকায় এর উন্নয়ন-অগ্রগতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকি ও বাধার সম্মুখীন। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই এ অবস্থার আশু অবসান কাম্য। সরকারকে বিষয়টি সর্বোচ্চ আমলে নিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য এখনই আলোচনা-সংলাপের আয়োজন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যত তাড়াতাড়ি এটা করা সম্ভব তত তাড়াতাড়িই দেশের মঙ্গল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করতে হবে
আরও পড়ুন