Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

দেশে এখন চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও যথাযথ সরবরাহ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার অভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে এবং তা অপচয়ের মাধ্যমে দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতির মুখে পড়ছে। ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই ভর্তুকি কমাতে প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরও শুধু সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় না হওয়ায় যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে তার খরচ চাপছে গ্রাহকদের ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড শতকরা ৬৪ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে ভর্তুকি কমানোর অজুহাতে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ সালে দেশে উৎপাদিত ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ৪২ ভাগ। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না করে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পোষাণোর জন্য দাম বৃদ্ধি করে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। এমন অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিশ্বে আর কোথাও আছে কিনা, জানা নেই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনোমিকস অ্যান্ড ফিন্যানসিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানি নির্ভরতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বারবার বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য তেল, গ্যাস ও কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কুইক রেন্টাল ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। কুইক রেন্টাল নিয়ে দুর্নীতি ও এগুলোর কাছ থেকে সরকারকে অধিক দামে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। উল্টো এগুলো নিয়ে যাতে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা না যায়, এজন্য দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হোক বা না হোক, তাতেও সরকারকে বড় ধরনের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বর্তমানে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা খুব একটা না থাকলেও সরকার সেগুলো চালু রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত এক দশকে এ ধরনের অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরকার ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। এটা হয়েছে, দুর্নীতি, অতিরিক্ত সুদ এবং রাজনীতিকরণের কারণে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হলেও দেশের ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতার অভাব বড় সমস্যা হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে সরবরাহ ব্যবস্থার সক্ষমতা ৫০ ভাগ বেশি থাকতে হয়। ২০২৪-২৫ সালে সরবরাহ ব্যবস্থার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। তখন খরচ ও ভর্তুকি আরও বাড়বে এবং এর দায় গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তাদের মতে, ভুল পরিকল্পনা বিদ্যুৎ খাতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কোনো বাছ-বিচার করছে না। কয়লা, গ্যাস, তেল, এলপিজি, যেভাবে পারছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। পাশাপাশি আমদানিও করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর তা যে যথাযথভাবে সরবরাহ ও বিতরণ করতে হবে, এদিকে খুব একটা খেয়াল করছে না। অনেক সময় উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সমন্বয় করার জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ধরনের অপরিকল্পিত উৎপাদনে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান ও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর লোকসান পোষাণোর জন্য মহাজন পন্থা হিসেবে বিদ্যুতের যথেচ্ছ দাম বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা এ খাতের দুর্নীতিকেবা প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ণ পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর গড়ে শতকরা ১২ ভাগ হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণ করা যাচ্ছে না। উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা করা গেলে সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ণ যেমন সফল হতো, তেমনি অপচয় ও খরচ বৃদ্ধি পেতো না। আমদানির পরিবর্তে রফতানিও করা যেত। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, ব্যর্থতা ও দুর্নীতি এজন্য দায়ী। বিদ্যুৎ খাতে এমন অসামঞ্জস্য ও অপরিকল্পনা চলতে পারে না। জনগণের অর্থে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। উৎপাদিত প্রতি ওয়াট বিদ্যুৎ যাতে জনগণের কাছে পৌঁছে যায় এবং অপচয় না হয়, এ পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সমন্বয় দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষ্ঠু সরবরাহ
আরও পড়ুন