পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে মানুষ এখন সার্চ কমিটি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সার্চ কমিটিতে কোন দল নাম জমা দিয়েছে, জমা দেয়া তালিকায় কার কার নাম রয়েছে ইত্যাদিই হলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে কারা নিজের নাম রাজনৈতিক দলের তালিকায় ঢোকাতে পেরেছেন; কারা নিজেরাই মন্ত্রিপরিষদে নাম পাঠিয়েছেন স্বতন্ত্রভাবে সে আলোচনার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সর্বোত্রই এ আলোচনা। এর মধ্যে আজ ও কাল সার্চ কমিটি দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ১০ জন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে তাদের পরামর্শ নেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন দুই শতাধিক নামের তালিকা সার্চ কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। এ ছাড়াও ই-মেইলে কিছু নাম এসেছে। বিএনপি, সিপিবি, জাসদ (রব), এলডিপি, জাগপা, এনপিপিসহ নিবন্ধিত কয়েকটি দল নামের তালিকা জমা দেয়নি। তবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারাসহ ১৫ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর মধ্যেকার নিবন্ধিত দলগুলো নামের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে দেখা গেছে অধিকাংশ দল পূর্ণাঙ্গ (১০ জন) নামের তালিকা জমা দিতে পারেননি। বেশির ভাগ দল ৫ জন, ৬ জন ও ৭ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। তবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) মাত্র একজনের নামের তালিকা জমা দিতে পেরেছে। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির র্(ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, তারা ইসিতে নিয়োগের জন্য মাত্র একজনের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, সময় কম পাওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা যায়নি। তাছাড়া দু’একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সম্ভাবনা নেই বলে তারা নাম দিতে রাজি হননি।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে ১০ সদসের নাম চূড়ান্তের জন্য ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সার্চ কমিটির অনুসন্ধান করা ১০ ব্যক্তির মধ্যে একজন নারীসহ ৫ ব্যক্তিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের সিইসি ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। এ সার্চ কমিটি গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংলাপ, পরবর্তীতে এ কমিটির কাছে নামের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে মাঠের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপিসহ কয়েকটি দলের তেমন আগ্রহ নেই। বিএনপি বলছে, সার্চ কমিটির নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নাটক করছে। বিএনপিসহ নিবন্ধিত কয়েকটি দলের এ নিয়ে আগ্রহ না থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
জানিয়েছে, সার্চ কমিটিতে নাম দিয়েছেন ৩০টি রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন। এ ছাড়াও নতুন ইসিতে নিজেকে রাখতে বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবী, সাবেক সামরিক ও সেসামরিক আমলা, নিজেদের নাম দিয়েছেন। কেউ তদবির করে রাজনৈতিক দলের তালিকায় নাম ঢুকিয়েছেন। কেউ ভুঁইফোর সংগঠননের প্যাড তৈরি করে কেউ বা নিজেরাই ব্যক্তি পর্যায়ে সার্চ কমিটিতে তোলার জন্য মন্ত্রিপরিষদে নাম জমা দিয়েছেন।
গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সার্চ কমিটি আমরা মানি না। আমরা কারো নাম প্রস্তাব করব না। এ সার্চ কমিটির কাছে নিরপেক্ষতা আশা করার কোনো মানে নেই।
গত দু’দিন থেকে সর্বোত্রই আলোচনা সার্চ কমিটিতে কোন দল কাদের নাম দিলো? বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী একে অপরের সঙ্গে দেখা হলেই একে অন্যের কাছে জানতে চান সার্চ কমিটিতে কোন দল কার নাম দিলেন? আওয়ামী লীগ থেকে কাদের নাম দেয়া হলো? বিএনপি শেষ পর্যন্ত নাম দেবে কি-না? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্চ কমিটির নাম দেয়া নিয়ে বিস্তর মতামত, মন্তব্য, তীর্যক মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সার্চ কমিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনুগত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, টিভি টক শোতে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে। বলা যায়, টিভি টক শোতে যারা নিয়মিত সরকারের পক্ষে কথাবার্তা বলেন, তাদের অধিকাংশই প্রত্যাশা এবার ইসি গঠনে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিজেদের প্রস্তাবিত নামে তালিকা সার্চ কমিটিতে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে সার্চ কমিটির দফতরে এই তালিকা জমা দেন। আওয়ামী লীগের তালিকা সার্চ কমিটিতে জমা দেওয়ার পর ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, দলের পক্ষ থেকে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। মানুষ ভোট দিলেই ক্ষমতায় থাকবে আওয়ামী লীগ, না হলে নয়।
এর আগে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের কাছ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম নিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব নাম নিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আলোচনাও করেছেন। প্রস্তাবিত নামগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে তার বাসভবনে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডিয়ামের সব সদসের কাছে নামের আহ্বান করেছিলেন। তারা যে নাম দেন, সেখান থেকে বাছাই করে ১০ জনের নাম জমা দেয়া হয়।
মূলত আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিবন্ধিত সবাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে দলের পছন্দের ব্যক্তিদের নামের তালিকা সার্চ কমিটিতে জমা দিতে মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দলগুলোর পক্ষ থেকে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তালিকা পাঠানো হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) বৃহস্পতিবার ১০ জনের নামের তালিকা পৌঁছে দিয়েছে বলে দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জীবন বৃত্তান্তসহ নামের তালিকা শুক্রবার পৌঁছে দেওয়া হয়। তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, তারা যোগ্যদের দেখে ১০ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। তাদের তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন সেক্টরের সফল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। গতবার আমাদের তালিকা থেকে একাধিক ব্যক্তি ইসিতে স্থান পেয়েছিলেন। আশা করি, এবারও থাকবে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া জানান, তারা ৬ জনের নাম পাঠিয়েছেন। জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম জানান, তারা ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পদক ডা. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, তারা ৬ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। এছাড়া একসময় ১৪ দলের জোটে সক্রিয় থাকলেও এখন নিষ্ক্রিয় জাকের পার্টি ৭ জনের নাম পাঠিয়েছে।
এদিকে গত একাদশ জাতীয় সংসদে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান জানান, তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৫ জনের নামের তালিকা পঠিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞার নাম প্রস্তাব করেছে। এছাড়া দেশের চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা হলেন: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ (কমিশনার), সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান (কমিশনার), ফেমার সাবেক সভাপতি মনিরা খান (কমিশনার) ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর (কমিশনার)।
উল্লেখ্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের মধ্যে বাসদ, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও বাংলাদেশ জাসদ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হওয়ায় তারা নাম দিতে পারেননি।
এর আগে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ পাস করা হয়। অতপর আইন অনুযায়ী ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য ৫ সদস্য হলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ১৫ কর্মদিবসে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন ২টি এবং ৪ জন কমিশনারের জন্য মোট ৮ জনের নাম সুপারিশ করে প্রেসিডেন্টের কাছে উপস্থাপন করবে সার্চ কমিটি। এ নিয়ে আলোচনার জন্য সুশীল সমাজের অন্তত ৬০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১০ জন সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বসবে সার্চ কমিটি আলোচনা করবে। কমিটি এর মধ্যেই দু’দফায় বৈঠক করেছে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দল রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে সার্চ কমিটি প্রেসিডেন্টকে নামের যে তালিকা দেবে সেটা প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পলিটব্যুরোর সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবনা সভায় আলোচনার জন্য গৃহীত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।