পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিভি টক-শোতে সরকারের তোষামোদকারী সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাবেক সামরিক ও বেসামরিক আমলা, সাবেক বিচারপতি, সাংস্কৃতির ব্যক্তিত্ব, সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা তদবির করছেন। জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ ৫টি দল তালিকা পাঠিয়েছে। আজ নামের তালিকা দেবে আওয়ামী লীগ
নতুন নির্বাচন কমিশনে জায়গা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে সার্চ কমিটির কাছে নাম দিয়ে আবেদনের হিড়িক পড়ে গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এই ব্যক্তি পর্যায়ের আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন টিভি টক-শোতে সরকারের তোষামোদকারী সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাবেক সামরিক ও বেসামরিক আমলা, সাবেক বিচারপতি, সাংস্কৃতির ব্যক্তিত্ব, সুশীলসমাজের তথাকথিত প্রতিনিধি ও ক্রিড়াঙ্গনের ব্যক্তিরা। এমনকি নানান সংগঠন থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনে জায়গা পেতে নামের প্রস্তাব অনলাইনে পাঠানো হচ্ছে। আবেদনকারীদর কেউ সিইসি কেউ কমিশনার হতে চাচ্ছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ ৫টি দল তাদের প্রস্তাবিত ১০ জনের নামের তালিকা সার্চ কমিটির জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করলেও আজ সে তালিকা জমা দেবে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যুগ্ম সম্পাদক দীলিপ কুমার সরকার বলেন, নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ইসি গঠনে কতটুকু স্বচ্ছতা অবলম্বন করা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে যারাই নাম দিক অনুসন্ধান কমিটি ৫ জন নারীসহ ১৫ থেকে ২০ জনের তালিকা করে তা গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করবেন। নামগুলো নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করবেন। তখন ওই সব ব্যক্তির সুনাম-দুর্নাম, কর্মজীবন, গ্রহণযোগ্যতা সামনে চলে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে এদের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত যারা ভালো তাদের মধ্যে ২ জন নারীসহ ১০ জনের নাম সার্চ কমিটি প্রকাশ করবেন। তাহলে মানুষের কাছে সার্চ কমিটির স্বচ্ছতা প্রকাশ পাবে। এর অন্যথা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করবেন না এমন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের পদগুলো ভয়াবহভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে। একজন সিইসি বা কমিশনার ৫ বছরে চিকিৎসার খরচ পান ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা, বিদেশ যাতায়াত খরচ লাখ লাখ টাকা পান। কোনো দায়দায়িত্ব নেই সরকারের ইচ্ছাপূরণ করেই বেতন-ভাতা সুবিধা মিলে বছরে কোটি টাকা আয় করেন। যারা সরকারের তোষামোদ করেন তারা এই সুবিধা চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্ট গঠিত সার্চ কমিটি ৬০ জন বিশিষ্ট জনের সঙ্গে বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য নাম দেয়ার আহবান জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিএনপিসহ নিবন্ধিত দলগুলোকে নামের তালিকা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। তবে আগেই বিএনপি, জাসদ (রব), এলডিপি, এনপিপি, জাগপা, সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি দল নাম দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য দলগুলো নাম দেবে না জানালেও আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো নাম পাঠাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে তারা জোটগত নয় দলগতভাবে নাম পাঠাবে। দলের প্রেসিডিয়ামের সভায় ১৯ জন সদস্যের কাছে ১০ জন করে নামের তালিকা চাওয়া হয়। সেখান থেকে ১০ জনের নাম চূড়াত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আজ সার্চ কমিটির জন্য মন্ত্রিপরিষদে নামের তালিকা পাঠানো হবে।
বর্তমান কে এম নূরুল হুদার ইসির কর্মকান্ড ও ভোগবিলাসী জীবন দেখে নতুন ইসিতে জায়গা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। সার্চ কমিটিতে দেয়ার জন্য কেউ অনলাইনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নাম পাঠাচ্ছেন, কেউ রাজনৈতিক দলগুলোতে নিজের নাম পাঠানোর জন্য ধরনা দিচ্ছেন; কেউ বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে ফোন করে, বায়োডাটাসহ মেসেজ পাঠিয়ে নিজের নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ করছেন। কেউ বা নিজেরা ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তুলে একসঙ্গে ৫ থেকে ৬ জনের নাম পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হিসেবে জায়গা পেতে সরকারের চাটুকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিদের মধ্যে নজিরবিহীন দেনদরবার ও তৎপরতা শুরু হয়েছে।
জাতীয় পার্টির এক নেতা জানালেন, জাপা ১০ জনের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মিত টিভি টক-শোতে সরকারের পক্ষে কথাবার্তা বলেন এমন ৪-৫ ব্যক্তি আমাকে ধরেছেন দল থেকে যেন তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়। দলের তৃতীয় সারির এই নেতা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ধরার পরামর্শ দিলে ওই সব সুশীল, তথাকথিত সরকারি বুদ্ধিজীবী উল্টো কিছু খরচ করে হলেও সিনিয়র নেতাদের তাদের প্রসঙ্গ তোলার অনুরোধ করেন।
গতকাল মিরপুর পল্লবী থেকে ‘জনস্বার্থে বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো নামের তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে সিইসি করে আরো ৪ জনকে কমিশনার করার প্রস্তাব দেয়া হয়। গতকাল মতিঝিলের একটি অফিসে দেখা গেল কয়েকজন মিলে একটি সংগঠনের ব্যানারে সিইসি ও কমিশনার পদে ৬ জনের নাম অনলাইনে পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই এমন একটি দলের নেতা জানালেন, তার কাছেও সাবেক দু’জন আমলা প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি যেন তাদের নাম সার্চ কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তার দল অনিবন্ধিত জানালে উল্টো তাকে বলা হয় বিএনপিসহ অনেক দলই নাম দিচ্ছে না কাজেই অনিবন্ধিত দল হলেও নাম দিতে বাধা নেই। ৫ বছর আগে তরিকত ফেডারেশনের প্রস্তাব করা ব্যক্তিকে ইসিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন ইসিতে জায়গা পেতে প্রায় এক হাজার জনের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়েছে। গতকাল বিকেলে মতিঝিল একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অনলাইনে ৫ জনের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে তা গ্রহণ করে ধন্যবাদ সম্বলিত ফেরত মেসেজ আসে সংগঠনটির কাছে। গতকাল ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি বৈঠক করে সরকারের প্রতি সার্চ কমিটির নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিদায় নেবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের পর সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ পাস করা হয়। অতঃপর আইন অনুযায়ী ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য ৫ সদস্য হলেন- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ১৫ কর্মদিবসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য ২টি এবং ৪ জন কমিশনারের জন্য মোট ৮ জনের নাম সুপারিশ করে প্রেসিডেন্টের কাছে উপস্থাপন করবে সার্জ কমিটি। এ নিয়ে আলোচনার জন্য সুশীলসমাজের অন্তত ৬০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১০ জন সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে সার্চ কমিটি আলোচনা করবে। কমিটি ইতোমধ্যেই দুই দফা বৈঠক করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।