Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনায় বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকেরা, কোল্ড ইনজুরির আশংকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৬ পিএম

শৈত্য প্রবাহ, ঘন কুয়াশা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সব মিলিয়ে কৃষির জন্য বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে সারা দেশে। শীতের দাপট উপেক্ষা করে এরই মধ্যে খুলনায় বোরো আবাদে নেমেছেন কৃষকেরা। বৈরী আবহাওয়ায় কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা দিলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তারা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করছেন জমি চাষ, বীজ বপন ও চারা তৈরিতে। খুলনার বেশীর ভাগ স্থানেই কৃষকের ক্ষেতে বীজ থেকে সবুজ চারা (পাতো) বের হয়েছে। এ মাস পুরোটাই চারা লাগানো হবে লাঙ্গল চষা জমিতে। খারাপ আবহাওয়া সাথে সাথে কোল্ড ইনজুরির আশংকায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।

বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, তেরোখাদা, দাকোপ, রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাসহ সমগ্র খুলনা জেলায় এবার ৬০ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এর চেয়ে বেশি আবাদ হবে। মাস খানেক আগে কৃষক ঘরে আমন তুলেছেন। পুরো পৌষ-মাঘ মাস জুড়ে চলবে বোরো আবাদ।
বোরা চাষে কৃষকদের এ মুহুর্তে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ চারাতে কোল্ড ইনজুরি। অতিরিক্ত শীত ও ঘন কুয়াশায় বীজতলায় ধানের চারার সবুজ পাতা হলুদ ও সাদা হয়ে যায়, গোড়ায় পচঁন ধরে চারাগুলো এক পর্যায়ে মারা যায়। একবার বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা কৃষকের পক্ষে পুষিয়ে নেয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, প্রচন্ড শীতের মধ্যে আগাম জাতের বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকেরা। অনেক কৃষক বোরো চাষের বীজতলায় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেকেই জমিতে হাল চাষ করছেন। আগাম যারা বীজতলা তৈরি করছিলেন তারা জমিতে চারা রোপণের কাজ করছেন। তবে খরচ বাড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন বেশির ভাগ কৃষক। উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা কৃষক আব্দুল গনি গাজী বলেন, তিন একর জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। গত দু’দিন ধরে জমিতে চারা রোপণ করছি। সবকিছুর দাম বাড়ায় ধান চাষে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। উপজেলার শোভনা এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, দুই একর জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। খারাপ আবহাওয়ায় চারা গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বাড়ায় সেচ ও হাল চাষে অনেক খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম বাড়েনি। চারার বয়স ৩০-৪৫ দিনের ভেতরে রোপণ করব। হাইব্রিড ও দেশি ধানের চারা তৈরি করছি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বোরো ধান চাষ করার জন্য আমরা কৃষকদের সহযোগিতা ও উৎসাহ দিচ্ছি। এ উপজেলায় আগের তুলনায় বোরো চাষ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার অনেক কৃষক আগাম জাতের বোরো ধানের চারা রোপণ করতে শুরু করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার খরচ কিছুটা বাড়লেও তেমন কোন সমস্যা হবে না।

বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, বলেন, পাতো (ধান গাছ) দুই থেকে তিন ইঞ্চি হয়ে গেছে। বৈরী আবহাওয়ায় বীজতলায় এক ধরনের পোকা আসে। তাতে পাতো (ধান গাছ) আক্রান্ত হয়। ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে বোরো চাষে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি। খারাবাদ এলাকার কৃষক সোবহান শেখ বলেন, ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ায় বীজতলা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিরিক্ত শীতের কারণে বীজ ও চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ চারাগুলো পরবর্তীতে লাগানো হলেও এতে ভাল ফসল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মাঠে এ মুহুর্তে বোরো আবাদে ব্যস্ত রয়েছ। বোরো চারাতে ঠাণ্ডা বেশি পড়লে কোল্ড ইনজুরি দেখা দেয়। কোল্ড ইনজুরি যাতে না হয় সে জন্য বিকালে ক্ষেতে সেচ দেয়া, পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে রাখাসহ কিছু পদ্ধতি আছে। কৃষকদের সে সব পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বীজতলা তৈরির কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। এখন চারা লাগাচ্ছেন কৃষকরা। এখন পর্যন্ত কোল্ড ইনজুরির কোনো খবর পাইনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে বরাবরের মত এবারও খুলনায় বোরোর বাম্পার ফলন হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ