২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মাতৃত্ব নিঃসন্দেহে যেকোন মহিলার নিকট একটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আর এটি মহান আল্লাহ তায়ালার একটি শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। নারী জীবনের সার্থকতা ও পূর্ণতা আসে সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে। আর অনাগত সন্তানকে কেন্দ্র করে সংসার জীবনের সুখ শান্তি পরিতৃপ্তি আসে। যেদিন একজন স্ত্রী তার সন্তানের আগমনের আভাস নিজ দেহে অনুভব করেন সেই খুশির অনুভূতি আনন্দ আর অভিজ্ঞতার কথা শুধু সেই মা’ই জানে। এসময় মাকে অনকে সচেতন ও সতর্ক হতে হয়। আমাদের অনেকের অজানা কারণে নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কিছু কিছু মহিলা গর্ভধারণের কয়েক মাস পরেও বুঝে নিতে পারেন না যে তিনি গর্ভবতী। গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস অত্যন্ত সতর্কতা ও সচেতন হয়ে চলতে হয়।
গর্ভধারণ প্রক্রিয়া ঃ উপযুক্ত একজন নারী তার মাসিক চক্রের পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিণত ডিম্বাণু বের হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ওভুলেশন। তারপর এ ডিম্বাণুটি ডিম্বনালীতে আসে। এসময় স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনের ফলে স্বামীর উপযুক্ত শুক্রাণু স্ত্রীর ডিম্বনালীতে গিয়ে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়। একে বলা হয় নিষিক্তকরণ বা ফার্টিলাইজেশন। নিষিক্ত ডিম্বানুই তৈরী করে জাইগোট। এই জাইগোট তারপর চলে যায় স্ত্রীর জরায়ুতে এবং জরায়ুর গায়ে প্রোথিত হয়। জাইগোট থেকে তৈরী হয় ভ্রুণ। এখানেই শুরু একটি নতুন প্রাণের অস্তিত্ব। জরায়ুতে ভ্রুণের সৃষ্টিকে বলা হয় গর্ভসঞ্চালণ বা গর্ভধারণ। তারপর থেকে নারীর দেহে নানা পরিবর্তন ও নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা দেখে বা অনুভব করে স্ত্রী বুঝতে পারেন তিনি মা হতে যাচ্ছেন। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ নিম্নে বর্ণনা করা হল:
১) মাসিক বন্ধ হওয়া : গর্ভধারণের সর্বপ্রথম একটি সাধারণ লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হওয়া। মহিলাদের প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ২৮ দিন পরপর মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে ৪-৫ দিন কম বেশী হতে পারে। সাধারণভাবে একজন সুস্থ নারী যেদিন থেকে মাসিক শুরু হয় তখন থেকে তিনি একজন পূর্ণ নারী ও সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা দেহে তৈরি হতে থাকে। এই মাসিক প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে হওয়াকেই গর্ভবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা মনে করা হয়। তবে মনে রাখবেন শুধু মাসিক বন্ধই গর্ভবর্তী হওয়ার একমাত্র লক্ষণ নয়। নানা কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে।
২) বমি বমি ভাব : বমি বমি ভাব বা বমি করা গর্ভবর্তী হওয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি সকালের দিকে বেশি হয়। তবে শুধু সকালের দিকেই নয় যেকোন সময় হতে পারে। দেহের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোনের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে। এ লক্ষণটি আপনাকে মা হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
৩) মাথা ঘোরা : গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে মাথা ঘোরা একটি সাধারণ লক্ষণ। রক্ত সঞ্চালন ও হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এমন হয়। রক্তবাহী নালীগুলো স্ফীত হয়ে উঠে ফলে রক্তচাপ কমে যায়। এরপর মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতার অনুভূতি হতে পারে। তবে মাথা ঘোরার সাথে যদি প্রস্রাবের রাস্তায় রক্তপাত হয়, পেট ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
৪) সামান্য মাসিক হওয়া : আপনার মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ে খুব সামান্য পরিমাণ রক্তপাত হয়ে যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এ লক্ষণটিকে অবহেলা করবেন না। এটি গর্ভধারণের একটি লক্ষণ।
৫) স্তনের পরিবর্তন : গর্ভে সন্তান জন্ম নেওয়ার ফলে ধীরে ধীরে স্তনের পরিবর্তন দেখা দেয়। ইস্ট্রোজোন নামক হরমোনের প্রভাবে স্তন দুটি বড় হতে থাকে। শিশুর জন্য দুধ তৈরি হতে শুরু করে। ফলে স্তনের ব্যথা অনুভব করতে পারেন। স্তনের বোটা বা নিপল বড় ও দৃঢ় হয় এবং এর চার পাশ কালো হতে থাকে। এগুলো গর্ভবর্তী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৬) কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া : পায়খানা শক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। দেহের প্রজেস্টোরোন হরমোন পায়খানাকে শক্ত করে দেয়। গর্ভাবস্থায় এ হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। আসলে এ হরমোন পাচকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যে গতিতে খাবার বাহিত হয় সেই গতি কমিয়ে দেয় তাই এ অবস্থা দেখা দেয়।
৭) মাথা ব্যথা : দেহের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরণ হরমোন শিশুর জন্য জরায়ুকে উপযোগী করে তুলতে অধিক সময় ধরে কাজ করতে হয়। এ হরমোনগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো কম মাত্রার চিনির সরবরাহের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে সংগ্রাম করে তাই মাথা ব্যথা করে।
৮) শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি : গর্ভধারণকালে দেহে প্রজেস্ট্রেরোন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। এটি গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ। তবে একটা ১৮দিন শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করান।
৯) অবসাদ ও ক্লান্তি : অবসাদ ও সারাক্ষণ ক্লান্তি, ঘুমঘুম ভাব গর্ভধারণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। সামান্য কাজ করতে ক্লান্তি লাগা এবং ঘুম লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক লক্ষণ। শরীরে বাড়তে থাকা ভ্রুনের জন্য অধিক রক্ত উৎপাদন করতে শুরু করে। যার ফলে অবসাদ ও ক্লান্তি বৃদ্ধি পায়।
১০) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া : মায়ের জরায়ুতে ভ্রুণের বৃদ্ধির ফলে মূত্রাশয়ের গায়ে জরায়ু চাপ দিতে শুরু করে ফলে ঘন ঘন প্রস্রবা হতে পারে। তাছাড়া হরমোনের পরিবর্তন ও অতিরিক্ত রক্ত উৎপাদনের কারণে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায়। শরীরের মধ্যে রক্তে ফিল্টার করার জন্য কিডনী বা বৃক্ক অতিরিক্ত সময় কাজ করে ফলে বার বার প্রস্রাব করার ইচ্ছে হয়। এ লক্ষণটি প্রায় সব মহিলারাই ভুগে থাকেন।
গর্ভবতী হওয়ার পরীক্ষা ঘরে বসে করা যায় : ঔষধের দোকান গুলোতে প্রেগনেন্সি টেষ্ট স্টিক পাওয়া যায়। সকালের প্রস্রাবের একটি পরিস্কার কাপে বা কাচের পাত্রে সংগ্রহ করে স্টিকের প্যাকেটের যে স্থানে একটি কাটা দাগ আছে সেই জাগা ছিড়ে স্টিকটি বের করে চিহ্নিত স্থানে ধরে নিচের অংশটুকু প্রস্রাবে ডুবিয়ে দেয়। ১০ সেকেন্ড পরে প্রস্রাব থেকে তুলে আনুন। ১/২ মিনিটের মধ্যে যদি উক্ত স্থানে ২টি লাল দাগ দেখা যায় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী। আর যদি একটি লাল দাগ দেখা যায় তাহলে আপনি বুঝবেন আপনি গর্ভবতী নন।
সতর্কতা : গর্ভধারণের লক্ষণ বুঝতে পারার পর সময়মত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আশেপাশে হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শমতে এবং নিজে নিজে কোন ঔষধ খাবেন না। প্রতিদিন দুপুরের দিকে বিশ্রাম নিন পুষ্টিকর খাবার খান। সুস্থ্য থাকুন।
মো: জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।