পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দশ দিন আগে বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের মৃত্যু হয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সুরেশের সাত ছেলে ও দুই মেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয় একটি মন্দিরে যান। সেখান থেকে নয় ভাই-বোন একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে পিকআপের ধাক্কায় একসঙ্গে নিহত হয়েছেন পাঁচ ভাই। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশের মালুমঘাট এলাকায়।
নিহতদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রিংভং গ্রামে। একই পরিবারের এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় চলছে শোকেব মাতম। অথচ হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, বিআরটিসি যেন নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন। শুধু কক্সবাজারের চকরিয়ার সড়কে নয়; সারাদেশে প্রতিদিন সড়কে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশ যেন ঘুমিয়ে থাকেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। সড়কের যারা দায়িত্বে বিআরটিসি, বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত মৃত্যুর ব্যাপােে কারোরই যেন ভ্রƒক্ষেপ নেই। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে ‘সড়কে মৃত্যু’ রোধে দায়িত্বশীলরা কিছুদিন সরব থাকেন; কয়েকদিন পর আবার দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়।
জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। এ জন্য সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বেঘোরে পাণ হারাচ্ছেন মানুষ। পথচারীরাও যে যেভাবে পারছেন চলছেন। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো ঘুমিয়ে থাকেন। যার অনিবার্য পরিণতি বেঘোরে প্রাণ দেয়া ছাড়া গতি নেই।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রিংভং গ্রামের স্থানীয়রা জানান, মন্দিরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নয় ভাই-বোন একসঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা পার হতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় চার ভাই নিহত হন। নিহত চার ভাই হলেন অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল ও চম্পক সুশীল। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন ভাই সুস্মরণ শীল, রক্ষিত সুশীল ও প্লাবন সুশীল এবং বোন হীরা সুশীল। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মরণ সুশীলের মৃত্যু হয়। তবে ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা আরেক বোন মুন্নী সুশীল অক্ষত ছিলেন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম বলেন, বাবার মৃত্যুর ১০ দিন পার না হতেই চার ছেলের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরে ইউপির পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের লাশ সৎকারের ব্যবস্থা নেয়া হয়। শুধু কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই নয়, দেশের অন্যান্য মহাসড়ক, মহানগর, জেলা শহরের সড়কগুলোতেই প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার দায় কার সেটাই প্রশ্ন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত ৪৬৮ জন। বিগত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শেষ বছরের দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে এ সময়ে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়েছে। তবে এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে সড়কে প্রতি বছর আহত এবং নিহতের হার বাড়ছেই। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে, যা বিশ্বে আর কোথাও নেই। এসব অদক্ষ চালকদের দাপটে দুর্ঘটনা বাড়ছেই। লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের অবহেলাও দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের সংগঠনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত দুই বছর অনেকটা সময় গাড়ি চলাচল সীমিত থাকলেও সড়কে দুর্ঘটনা ছিল বেশি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের সড়ক দুর্ঘটনা গত বছর বিগত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০২১ সালটিও ছিল করোনাভাইরাসের মহামারির বছর, প্রায় ছয় মাস জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা আরো কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এ বছর সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যানে।
গত দুই বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য নিসচা যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাব, দৈনিক চুক্তিভিক্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি, মহাসড়কে নির্মাণ ত্রুটি ইত্যাদি। পরিবহন খাতের নেতৃত্বে পরিবর্তন না হলে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র বদলাবে না বলেও মন্তব্য করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
এদিকে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে একাধিকবার রাজপথে আন্দোলন করলেও এখনো তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। খিলগাঁও মডেল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা বলেন, আন্দোলন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। সড়কে সাংবাদিকরাও মারা যাচ্ছেন, দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, ছোট ছোট শিশুরা, সড়কে দেশের মেধাবী সম্পদ পিষে মারা যাচ্ছে। শ্রমজীবীরা মারা যাচ্ছেন। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
কক্সবাজার থেকে জাকের উল্লাহ চকোরী জানান, ১০ দিন আগে তাদের বাবার মৃত্যু হয়। আর মৃত বাবার শ্মশানে ক্ষৌরকর্ম করতে যাওয়ার পথে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপের চাপায় একই পরিবারের ৫ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মালুমঘাট হাইওয়ে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক সাফায়েত হোসেন বলেন, কক্সবাজারমুখী দ্রুতগামী পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই চার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর পিকআপটি নিয়ে এর চালক পালিয়ে গেছেন। পিকআপ ও এর চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, গতকাল নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুরেশের মৃত্যুর ১০ দিন পূর্ণ হওয়ায় পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ উপলক্ষে সুরেশের ছেলেমেয়েরা বাড়িতে এসেছিলেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দীপক সুশীল বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে কাতার থেকে দেশে এসেছিলেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাড়ির আঙিনায় সামিয়ানাও টানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সামিয়ানার নিচে কাপড় দিয়ে সুরেশের সন্তানদের লাশ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।
লাশের পাশে বসে এক বৃদ্ধা বিলাপ করছিলেন। তার নাম মানু রানী সুশীল। নিহত ব্যক্তিরা সবাই তার সন্তান। কাঁদতে কাঁদতে মানু রানী বলেন, বাপ (সুরেশ) মারা গেল ১০ দিন আগে। এই শোক কাটিয়ে না ওঠার আগেই আবার চার সন্তানকে কেড়ে নিলা। এ কোন পরীক্ষায় ফেললা ভগবান। বেঁচে থেকে আর লাভ কী! কার জন্য বাঁচিয়ে রাখলা ভগবান! যারা আমার ছেলেদের কেড়ে নিয়েছে, তুমি তাদের বিচার করো ভগবান।’ সন্তানের লাশের পাশে আহাজারি থামছিল না মায়ের। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরা তাকে বারবার শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মানু রানীর কান্না থামছেই না।
জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত ১ মাসে ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ১৫ জন এবং আহত হয়েছে অর্ধশত মানুষ। গতকাল সকালেও একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, লবণ বোঝাই ট্রাক থেকে নির্গত লবণাক্ত পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
এদিকে, গতকাল কক্সবাজারের চকরিয়া ছাড়াও আরো কয়েকটি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘেেটছে। এতে আরো সাতজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাহজাদপুর এলাকায় বাসের ধাক্কায় রোকেয়া বেগম (৩৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা সাত থেকে আট বছরের তার এক সন্তান আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে শাহজাদপুর এলাকার বাঁশতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনায় ওই নারী মারা যায়। গুলশান থানার এসআই ওহেদুল ইসলাম জানান, পুলিশ জানতে পারে একটি বাসের ধাক্কায় ওই নারী মারা গেছেন। এ ঘটনার সময় তার সন্তান আহত হয়েছে। তবে, সে বর্তমানে ভালো আছে।
গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান জানান, বৈশাখী পরিবহন নামে একটি বাসের ধাক্কায় রোকেয়া নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বাস জব্দ করা হয়েছে। নিহত নারীর স্বামীর নাম জাকির হোসেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকত দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায়। বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এছাড়াও রাজধানীর গাবতলীতে এবার সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় এক যুবকের পা পিষ্ট হয়েছে। তার নাম রুস্তম আলী। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গাবতলী পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন বাসন্তী বাসস্ট্যান্ডের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় ময়লার গাড়িটি তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার ডান পা সম্পন্ন পিষ্ট হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দারুসসালাম থানা পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার একনেক সভায় সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িগুলোতে দক্ষ চালক নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তিনি এসব গাড়ির চাপা বা ধাক্কায় আর কোন হতাহত দেখতে চান না বলেও জানিয়েছেন। আর মঙ্গলবার ভোরেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এ দুর্ঘটনায় ঘটায়।
দারুসসালাম থানার এসআই রহমত উল্লাহ বলেন, গাবতলীতে ট্রাকের নিচে পড়ে একজন আহতের খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, কিছু লোক উৎসব মনোভাব নিয়ে তাকে উদ্ধার না করে ফেসবুকে দেয়ার জন্য মোবাইলে ছবি নিচ্ছে। তখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় যুবককে আমাদের গাড়িতে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। তার ডান পা থেঁতলে গেছে। গাড়িটি আটক করা সম্ভব হয়নি। আটকের চেষ্টা চলছে।
রহমত উল্লাহ বলেন, আহত রুস্তম বলেছে, গাড়িটি ময়লার গাড়ি ছিল। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে গাড়ি ও এর চালককে শনাক্তের চেষ্টা করছি। তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে, তারা ঢাকায় আসছেন। পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে ভর্তি রুস্তম আলী জানান, তার বাড়ি রাজশাহী জেলার শাহ মখদুম থানার নওদাপাড়া গ্রামে। তিনি একটি ওয়ার্কসপে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে ভোরে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন এবং গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাসন্তী বাসস্ট্যান্ডের সামনের রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এসময় সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি বেপরোয়া গতিতে এসে ডান পায়ের ওপরে চাকা তুলে দেয়। আমি তখন একপাশে কাথ হয়ে পড়ে যাই। তা না হলে পুরো শরীর চাকার নিচে পড়ত। চালক না দাঁড়িয়ে ওই বেপরোয়া গতিতেই চলে যায়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়পাড়া মোড়ে মঙ্গলবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম নাদির উদ্দিন। তিনি উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত বয়েজ উদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, নাদির উদ্দিন নিজ বাড়ি থেকে মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আড়ানী-বাঘা সড়কের আড়পাড়া মোড়ে পৌঁছলে সামনে একটি মালবাহী ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাকা রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাঘা থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, সুবর্ণচর উপজেলায় প্রাইভেটকার-সিএনজি ও মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। নিহতরা হলো কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা জসিম ও চরজব্বর উপজেলার চরআমান উল্যাহপুর গ্রামের কিরণ চন্দ দাসের ছেলে জুয়েল চন্দ দাস। গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াপদা এলাকার সোনাপুর টু চেয়ারম্যান ঘাট সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানান, বেলঅ আড়াইটার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার আল আমিন বাজারের সংযোগ সড়ক থেকে আসস্মিক সোনাপুর টু চেয়ারম্যান ঘাটের মূল সড়কের মাঝখানে একটি মোটরসাইকেল উঠে পড়ে। এ সময় চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সোনাপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা আল আমিন বাজার সড়ক এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেটকারের সাথে মাঝখানে পড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। অপরদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
চরজব্বর থানার ওসি মো. জিয়াউল হক বলেন, আহতদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা শহরে সরকারি খাদ্যগুদামের সামনে দ্রুতগতির মাটি বোঝায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ওয়াজেদ আলী (৬৫) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নুরনগরের কালু মিয়ার ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন জানান, ঘটনার সময় ওয়াজেদ আলী বাইসাকেলে চেপে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার পেছন দিক থেকে দ্রুতগতির একটি মাটি বোঝায় ট্রাক্টরের চালক ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান। এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে নিহতের পরিবারের সদস্যদের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের কাছে দিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর কাঁঠালতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১ জন আহত হয়েছে। দ্রুতগতির অবৈধ স্যালোমেশিনের ইঞ্জিন চালিত আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে গত সোমবার রাতে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আলমসাধু চালক লাল্টু মিয়া ও দর্শনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রিফাত। ঘটনাস্থলেই আরেক মোটরসাইকেল আরোহী দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ্ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও নিহত রিফাতের বন্ধু মানিক আহত হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আকন্দবাড়ীয়া গ্রামের কায়েস উদ্দিনের ছেলে দর্শনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রিফাত তার বন্ধু দর্শনা পৌরসভার রামনগর এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ্ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মানিককে নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে চুয়াডাঙ্গায় বেড়াতে গিয়েছিল। রাতে সেখান থেকে ফেরার পথে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দিকে আসা দ্রুতগতির অবৈধ স্যালোমেশিনের ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মারত্মক জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই আলমসাধু চালক দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছী ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামের ইমান আলীর ছেলে লাল্টু মিয়া নিহত হয়। খবর পেয়ে দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত অবস্থায় মোটরসাইকেল আরোহী রিফাত ও মানিককে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম রিফাতকে মৃত ঘোষণা করে এবং আহত মানিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।