মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ফ্রান্সে ইসলাম ধর্মকে সংস্কার ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে একটি নতুন কমিটি গঠন করেছে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ’র ফরাসি সরকার। শনিবার গঠিত এই কমিটিতে রয়েছেন ধর্মবিশারদ, সাধারণ মানুষ ও নারী। পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দেবে এই কমিটি।
তবে সরকার সমালোচকরা ইসলাম ধর্মকে সংস্কারের এই উদ্যোগকে রাজনৈতিক চক্রান্ত মনে করছেন। তাদের মতে, এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর মধ্যপন্থী দলে ডানপন্থী ভোটারদের টেনে আনতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন এই কমিটির নাম ‘ফোরাম অব ইসলাম ইন ফ্রান্স’। শনিবার এই কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর সমর্থকরা বলছেন, এর ফলে ফ্রান্সে বসবাসরত ৫০ লাখ মুসলিমকে নিরাপত্তা ও বিদেশিদের প্রভাব থেকে রক্ষা এবং জনজীবনে সেকুলার মূল্যবোধ ঊর্ধ্বে তুলে ধরা ফ্রান্সে মুসলিমদের ধর্মচর্চা নিশ্চিত করবে। ধর্মকে তাদের ফরাসি পরিচয়ের অংশ বলে মনে করা অনেক মুসলিমসহ এই কমিটির সমালোচকদের মতে, সরকারের এই সর্বশেষ উদ্যোগ হলো বৈষম্য প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেওয়ার আরেকটি পদক্ষেপ। যে বৈষম্য ব্যবস্থায় সহিংস হামলা চালানো গুটিকয়েকের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা হয় এবং তাদের প্রকাশ্য জীবনে আরেকটি বাধা হাজির করে।
নতুন কমিটিতে ইমাম, সুশীল সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়িক নেতারা রয়েছেন। কমিটির সব সদস্য সরকার কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, কমিটির অন্তত এক-চতুর্থাংশ সদস্য হবেন নারী। এই কমিটি গঠনে বিলুপ্ত হলো ২০০৩ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি গঠিত ‘ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব মুসলিম ফেইথ’। ওই কাউন্সিল সরকার ও ধর্মী নেতাদের মধ্যে আলোচনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড ডারমানিন জানান, এই মাসে ম্যাখোঁ সরকার কাউন্সিলটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। কারণ একটি মুসলিম সম্প্রদায় ও ফরাসি সমাজে ভূমিকা রাখতে পারছিল না।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডারমানিন বলেছেন, ইসলামে বিদেশি প্রভাবের ইতি ঘটিয়ে আমরা একটি বিপ্লব ঘটাতে চাই। ফ্রান্সে ইসলাম বিদেশিদের ধর্ম নয়, কিন্তু একটি ফরাসি ধর্ম। যে ধর্মের বিদেশি অর্থ ও কোনও কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করা উচিত না। ম্যাখোঁর ইসলাম সংস্কারের পরিকল্পনায় রয়েছে, তুরস্ক, মরক্কো বা আলজেরিয়া থেকে আনার বদলে ফ্রান্সে ইমামদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন। তবে সামগ্রিকভাবে ফ্রান্সের মুসলিমরা এই প্রকল্প নিয়ে বিভক্ত।
শুক্রবার প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদে আসা মুসল্লিদের একাংশ সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যরা বলেছেন, তাদের ধর্মকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মাধ্যমে সরকার অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। তারা শুধু ইসলাম ধর্মের জন্য এমন কিছু করছে, কিন্তু খ্রিষ্টীয় ধর্মে এমন কোনও পরিবর্তন আনার সাহস করতে পারবে না সরকার। ৫১ বছর বয়সী হামদুদ বেন বৌজিদ ম্যাখোঁর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী। তার মতে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে মুসলিম সমাজের বিভিন্ন কণ্ঠ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যাতে সমাজের বিস্তৃত বৈচিত্র্যময়তা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম বিশারদরা ফ্রান্সের প্রত্যেক মুসলিমের হয়ে কথা বলেন না। আমরা একটি সেক্যুলার দেশে বাস করছি। তাহলে কেন এই ফোরামের সম্প্রসারণ এবং ফ্রান্সের আরও বেশি মুসলিমের পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে না? এই দেশে নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের কথা শোনা হোক, মুসলিম হিসেবে নয়।’
ফ্রান্সের মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাত্যাহিক জীবনে কলঙ্কবাদের অভিযোগ করে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে, পরিচয় যাচাইয়ে পুলিশি তল্লাশি থেকে শুরু করে কাজ খোঁজা। যখনই ফ্রান্সে বা বিদেশে জন্ম নেয়া কোনও তরুণ দ্বারা সন্ত্রাসী হামলা হয় মুসলিমরা সন্দেহের মধ্যে পড়েন। ইউরোপে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। তবে এই ধর্মের কোনও একক নেতা নেই এবং একাধিক মত প্রচলিত আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্যপন্থী সালাফিবাদী থেকে শুরু করে ধর্মের কট্টর ব্যাখ্যাদানকারী মৌলবাদী গোষ্ঠী। গত বছর ফরাসি পার্লামেন্টে একটি নতুন আইন অনুমোদিত হয়। এতে মসজিদ, স্কুল ও স্পোর্টস ক্লাবে নজরদারি শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। সরকার বলছে, ইসলামি জঙ্গিদের হাত থেকে ফ্রান্সের সুরক্ষা এবং সেক্যুলারবাদ ও নারীদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রসারের জন্য এটি প্রয়োজন। এই আইনটি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগের জন্ম দেয়। এর আওতায় বেশ কয়েকটি মসজিদ ও কমিউনিটি গ্রুপ বন্ধ করা হয়েছে। সূত্র : এপি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।