পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকার বাতাস বহু বছর ধরেই বিষাক্ত হয়ে রয়েছে। প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রতি নিঃশ্বাসে এই বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করছে। আবার নিঃশ্বাসের সাথে বিষাক্ত বাতাসও ছাড়ছে। সাধারণত মানুষ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, নিঃশ্বাসের সাথে কার্বনডাই অক্সাইড ছাড়ে। এই কার্বনডাই অক্সাইড বৃক্ষরাজি গ্রহণ করে অক্সিজেন নিঃসরণের মাধ্যমে বাতাসকে সজীব ও নির্মল রাখে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দেখা যাচ্ছে, বাতাস এখন এতটাই দূষিত যে, এতে অক্সিজেনের আধিক্য দূরে থাক, কার্বনডাই অক্সাইড, মনো অক্সাইড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত উপাদানে ভারি হয়ে থাকছে। এই ভারি বাতাস নগরবাসী নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, হাঁপানি থেকে শুরু করে মানসিক বৈকল্যর শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্বল শ্রেণীর বৃদ্ধ ও শিশুরা তাতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সুস্থ-সবল মানুষও কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাপ করা সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলা যায়, বায়ু দূষণের কারণে কোটি কোটি মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। একটি অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। অসুস্থ জাতি নিয়ে কখনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না, উন্নতি করতে পারে না। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর আছে বলে মনে হয় না। সরকারও এটা বুঝতে পারছে না, মানুষই যদি অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে এত উন্নতি কার জন্য? কে ভোগ করবে উন্নতি? শুধু বায়ু দূষণই নয়, শব্দদূষণ, পানিদূষণসহ সামগ্রিক পরিবেশ দূষণে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চল আক্রান্ত। সুস্থভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের নির্মল পরিবেশ দরকার, তা এখন সীমিত।
দুই.
পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত, অবাসযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে ঢাকার দুর্নাম হলেও, এটি আমাদের প্রত্যেকেরই প্রিয় শহর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিকসহ উন্নতজীবনের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে আছে এই নগরী। যত সমস্যাই থাকুক, ঢাকা ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। সবাই ঢাকায় থাকতে চায় এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ঢাকায় আসতে চায়। এটা সবার কাছেই স্বপ্নের শহর হয়ে আছে। কোনো রকমে ঢাকায় থাকার মতো ব্যবস্থা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে। বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার পরিবেশ কারো জন্যই সুস্থ্যভাবে বসবাসের উপযোগী নয়। তারপরও প্রতিদিন মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে এর জনসংখ্যা। সরকারি হিসেবেই এখন ঢাকায় বসবাস করে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ। বেসরকারি হিসেবে আরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের দিকে এ জনসংখ্যা দাঁড়াবে আড়াই কোটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা নগরীর প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। বিশ্বে এমন ঘন বসতিপূর্ণ শহর আর একটিও নেই। একটি আদর্শ রাজধানীর সুযোগ-সুবিধা কেমন, নগরবাসীর জানা নেই। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত সিটি করপোরেশনসহ যেসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো পরিচালনার জন্য নগরবাসী ট্যাক্স দিলেও, এ অনুযায়ী তারা সেবা পাচ্ছে না। সেবার কথা দূরে থাক, মানুষ যে বুকভরে নিঃশ্বাস নেবে এ ব্যবস্থাটুকু যথাযথভাবে করতে পারছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় পরিসংখ্যান প্রকাশিত হচ্ছে। পরিসংখ্যানে উঠে আসছে, পৃথিবীর দূষিত নগরীর শীর্ষে ঢাকা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৫ বছর ৪ মাস। আর ঢাকাবাসীর কমেছে ৭ বছর ৭ মাস। প্রতি বছর বায়ুদূষণে মারা যায়, ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কি এক বিষাক্ত ও ভয়াবহ পরিবেশে মানুষ বসবাস করছে। যে বাতাস মানুষের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান, সেই বাতাসই মানুষের মৃত্যু ও দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টের মাতো রোগে আক্রান্ত, তাদের পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন পরিবারটির কি অবস্থা হয়, তা শুধু তারাই জানে। রাজধানীতে পানিদূষণ ভয়াবহ। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব যে ওয়াসার, সে তা নিশ্চিত করতে পারেছে না। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত পানি ময়লা-আবর্জনা, ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এ পানি পান করা দূরে থাক, ঠিকমতো রান্না-বান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়া ও গোসল করা মুশকিল। ঢাকা শহরের কত ভাগ মানুষ ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পান করে, তার পরিসংখ্যান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই দূষিত পানিই ওয়াসা বেশ চড়া দামে নগরবাসীর কাছে বিক্রি করছে। গোপনে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক দেশেই সরকারিভাবে যে পানি সরবরাহ করা হয়, তা নিঃশংসয়ে মানুষ পান করে। উন্নত বিশ্বের নাগরিকরা তো সরাসরি ট্যাপের পানি পান করে। পরিতাপের বিষয়, মিষ্টি পানির অফুরন্ত ভাণ্ডারের দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ওয়াসার কাজ শুধু বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাই নয়, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ঠিক রাখা। ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের কী করুণদশা তা বোধকরি নতুন করে বলার কিছু নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই বেশিরভাগ সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। রাজধানীর যে চিরায়ত যানজট, এ জট তীব্র আকার ধারণ করে বৃষ্টির সময়। রাস্তায় জমে থাকা পানি দিয়ে মানুষ চলাচল দূরে থাক যানবাহনও চলতে পারে না। বাধ্য হয়ে চলতে গিয়ে খানাখন্দ ও ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে অনেককে হতাহতও হতে হয়। আমরা দেখেছি, ওয়াসার ম্যানহোলে পড়ে শিশুর করুণ মৃত্যু হতে। আবার জমে থাকা পানিতে রিকশা থেকে পড়ে অনেক মানুষকে আহত হতে। বলা হয়, যানজটই ঢাকাকে অচল ও স্থবির একটি শহরে পরিণত করেছে। শুধুমাত্র যানজটে আটকা পড়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন মানুষের প্রায় ৮০ লাখ শ্রমঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। এই শ্রমঘন্টার মূল্যমান গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে যদি শুধু যানজটের কারণে এই বিপুল আর্থিক লোকসান গুণতে হয়, তবে উন্নয়নের চাকাটি সচল থাকবে কিভাবে? যদি এ অর্থ ক্ষতি না হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো, এ চিন্তাটি কেউ করছে বলে মনে হয় না। সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরও যেন কোনো মাথাব্যাথা নেই। যানজটে যে শুধু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, মানুষের কাজকর্মও স্থবির করে দিচ্ছে, অসুস্থ করে দিচ্ছে। যে কাজ এক ঘন্টায় শেষ হওয়ার কথা, সে কাজ করতে চার-পাঁচ ঘন্টা, এমনকি দিনও চলে যায়। এতে কর্মজীবী একজন মানুষের যে মানসিক অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এর দায় কেউ নেয় না। এমন চিত্র-দৃশ্য কোনো দেশের রাজধানীতে দেখা যায় না। যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাটের স্বল্পতার কথা বলা হয়। একটি আদর্শ নগরীতে সড়ক পথের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ জায়গা থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ৭ ভাগ। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন যাতায়াত করে। এই সড়কেরও একটি বিরাট অংশ বেদখল হয়ে আছে। পরিস্থিতি যদি এই হয়, তবে যানজট থেকে কোনো দিনই মুক্তি মিলবে না। বড় বড় ফ্লাইওভারও খুব একটা কার্যকর হবে না। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, বিদ্যমান সড়কও যদি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবহার করা যেত, তাহলে যানজট কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে থাকত। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কাজটি করবে কে? সড়ক দখলমুক্ত করার দায়িত্ব যে সিটি করপোরেশনের সেই সিটি করপোরেশনই ফুটপাতে দোকানপাট বসা এবং মূল রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের অনুমতি দিচ্ছে। এমনকি সিটি করপোরেশন এ বিষয়টিও আমলে নিচ্ছে না যানজটের অন্যতম কারণ যে রিকসা, সেই রিকসা যেকোনো সড়ক দিয়ে অবাধে চলাচল করছে। ডিজিটাল যুগে এসে যদি রাজধানীকে রিকশার রাজধানীর পরিচিতি নিয়ে থাকতে হয়, তবে এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে? দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় যারা বসবাস করছে, তারা যেন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা একটি জেলখানায় বসবাস করছে। যেখানে সভ্য নগরী ও তার নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল।
তিন.
একটি দেশ কতটা উন্নত তার পরিচয় ফুটে উঠে রাজধানীর চিত্রের মাধ্যমে। রাজধানীকে বলা হয় দেশের মুখ। মানুষের মুখ দেখে তার রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনা যেমন বোঝা যায়, তেমনি রাজধানীর চেহারার মাধ্যমে দেশের সার্বিক অবস্থার চিত্র পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ, তা ধনী হোক আর দরিদ্র হোক, রাজধানীকে পরিপাটি রাখতে চেষ্টার ত্রুটি করে না। রাজধানীকে সুন্দর করে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে নামী-দামী ব্যক্তিবর্গ ও পর্যটকরা রাজধানীতেই আসেন। রাজধানীর চেহারা দেখে তারা দেশটির উন্নতি, অগ্রগতি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারেন। ঢাকার আয়তনের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী যেভাবে পরিপাটি ও নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে সাজানো, হয়েছে তা উদাহরণ হয়ে রয়েছে। পর্শ্ববর্তী ভারতের রাজধানীসহ বড় বড় শহরগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো হয়েছে। ঝকঝকে ও চকচকে উপস্থাপন করে স্লোগান দিচ্ছে ‘সাইনিং ইন্ডিয়া’। অথচ দেশটির জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ এখনও খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করে। যথাযথ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। রাজধানী ও কিছু শহরকে আধুনিক করে বিশ্বকে দেখাচ্ছে, তারা বিরাট উন্নতি সাধন করছে। কয়েক দশক আগেও আমাদের ঢাকার এমন দুরবস্থা ছিল না। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ এবং নগরীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। তারপরও আমরা শত কষ্ট সত্ত্বেও এ শহরেই থাকি। এটাই অনেকের কাছে বিদেশ। এখানে এলে মনে করে বিদেশ এসেছি। বিদেশ মানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। জীবনমানের উন্নয়ন। অথচ ঢাকা এমন এক নগরী, যেখানে জীবনযাপন খুবই কঠিন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। যে যেভাবে পারছে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণের কারণে এটি প্রায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সময়ের সাথে সাথে এবং নাগরিক প্রয়োজনে নগরের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তবে এ পরিধি বৃদ্ধি ঘটাতে হয় মূল নগরকে ঠিক রেখে সুষম পরিকল্পনা এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। ঢাকার পরিধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। মূল শহরের কাঠামো ভেঙ্গে যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবে এর সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। এক সময় ঢাকা শহরে প্রায় ৪৬টি খাল ছিল। এসব খালের অধিকাংশই এখন নেই। অবৈধ দখলের কারণে হারিয়ে গেছে। অথচ এই খালগুলোর কারণেই ঢাকা একসময় ‘জলেভাসা পদ্ম’ নামে পরিচিত ছিল। রাজধানীর সব খাল দখল হয়ে যাওয়ায় নগরবাসীকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শহরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। রাজধানীর বায়ু দূষণ এবং নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পার্ক অত্যন্ত জরুরী। এগুলোকে বলা হয় রাজধানীর ফুসফুস। ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি পার্ক থাকলেও অযত্ন ও অবহেলায় এগুলো বেহাল হয়ে রয়েছে। ইট-পাথরের ভবন থেকে বের হয়ে পার্কে গিয়ে যে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে, তার উপায় নেই। রাজধানীর চির দুঃখ হয়ে রয়েছে, সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার নামে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি। এর মাধ্যমে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ হচ্ছে। তাদের এই সেবা বৃদ্ধিকরণ কর্মকাণ্ডে নগরবাসীর দুর্ভোগ স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। একটা সময় আমেরিকায় স্বর্ণ অনুসন্ধানের জন্য মানুষ শাবল-খুন্তি নিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করত। তাদের মতোই ঢাকার সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো সেবার লক্ষ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করলেও, সেবার পরিবর্তে নগরবাসী কেবল দুঃখই পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যেন রাস্তা খোঁড়ার পরিবর্তে সরকারি কোষাগার খুঁড়ে অর্থ বের করে নিচ্ছে।
চার.
বিশ্বের খুব কম রাজধানীতে একই সাথে প্রশাসনিক, আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পকারখানা থাকে। রাজধানীকে তারা যতটা সম্ভব আবাসিক এলাকা থেকে আলাদা করে রাখে। আবাসিক এলাকা থাকবে রাজধানীর মূল কেন্দ্র থেকে বাইরে। এক সময় ঢাকায় এই আদর্শ পরিবেশ ছিল। পঞ্চাশের দশকে আবাসিক এলাকা হিসেবে ধানমন্ডিকে মূল শহরের বাইরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়। সেখানে তিন বিঘা করে একেকটি প্লট এবং এতে পঞ্চাশ জনের বসবাসের উপযোগী করে পরিকল্পনা করা হয়। পুরো ধানমন্ডির মানুষের সংখ্যা হিসেবে করে সেখানে স্কুল, খেলার মাঠ, পার্ক, লেক, মার্কেট ও প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। অর্থাৎ ঢাকার অদূরে একটি গার্ডেন সিটি হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। গুলশান, বনানী পরবর্তীতে উত্তরাও একই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়। মূল শহর থেকে দূরে আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলাই এর মূল পরিকল্পনা ছিল। অতীতে এসব এলাকা ঢাকার বাইরে ছিল, এখন তা বিশ্বাসই করা যায় না। নগরীর সম্প্রসারণ এত দ্রুত হয়েছে যে এসব এলাকা এখন মূল ঢাকায় পরিণত হয়েছে। এখন যে যেভাবে পেরেছে নিজেদের মতো সম্প্রসারিত করে চলেছে। এটা এখন স্পষ্ট, রাজধানীর দূষণ ও অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ দায়িত্বরত কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ঠেকাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন, নাগরিক সেবা বাড়াতে ঢাকাকে ভেঙ্গে আরও ছোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। তবে তা কবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিশ্চিত নয়। একটি দেশের রাজধানীর নির্দিষ্ট আয়তন থাকা দরকার। এই আয়তনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য এলাকা স্বতন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এক সময় রাজধানীর আশপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা শোনা গিয়েছিল। এখন আর শোনা যায় না। সবচেয়ে বড় বিষয়, ঢাকাকে বাসযোগ্য ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রশাসনিক কোনো ছোটো-খাটো কাজে যেন দেশের আনাচ-কানাচ থেকে মানুষকে রাজধানীতে ছুটে আসতে না হয়, এ ব্যবস্থা করতে হবে। রাজধানীর সুবিধা বিভিন্ন জেলা শহরে সৃষ্টি করতে হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার রাজধানী থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জ নেয়া হয়েছে। হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে নেয়া হয়েছে। এভাবে যদি শিল্পকারখানা ও প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ঢাকাকে ভারমুক্ত করা সম্ভব হবে। এতে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণও কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।