Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখন আর আপত্তি নেই সু চির অনুসারীদের

রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

মিয়ানমারে গতবছর সামরিক অভ্যুত্থানের পর অং সান সু চির দলের এমপি আর কর্মীদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যের ছায়া সরকার (এনইউজি) জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা বিচারের এখতিয়ার নিয়ে তাদের আর আপত্তি নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই মামলার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে যে আপত্তি জানানো হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলেছে এনজিইউ। মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনপ্রণেতা ও প্রশাসনিক কর্মীদের নিয়ে গঠিত এনজিইউ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তাদের এ অবস্থান তুলে ধরে। সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের আগে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সরকার প্রাথমিকভাবে এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সু চি নিজেই নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে উপস্থিতি থেকে মিয়ানমার সরকরের পক্ষে শুনানি করেন এবং রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হাতে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। ফাইল ছবিফাইল ছবিরয়টার্স লিখেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ এনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা মূলত বিচার প্রক্রিয়াকে দেরি করিয়ে দেয়ার একটি চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে এনজিইউর এই বিবৃতি আইজেসির আইনি প্রক্রিয়ায় আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

‘নির্বাসিত সরকার’ হিসেবে এনইউজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি ‘প্রশাসনিক ধ্যানধারণার মধ্যে থেকে’ আইসিজে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে জান্তার অধীনে থাকা মিয়ানমার দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং সেটা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইসিজে যদি সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রক্রিয়ায় থাকে, তাহলে তা জান্তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নৃশংস অপরাধ বাড়িয়ে তুলবে।’ এনজিইউ আহ্বান জানিয়েছে, আইসিজে যেন জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মোয়ে তুনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল হলেও কিয়াও মোয়ে তুন সামরিক জান্তার পক্ষে না থাকার ঘোষণা দিয়ে এনজিইউকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইসিজের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের তোলা আপত্তির ওপর গণশুনানির তারিখ ঘোষণা করে আইসিজে। দ্য হেগের পিস প্যালেসে ২১, ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এই শুনানি হবে। পাঁচ বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়। ২০১৯ সালের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর আইসিজেতে এ মামলার ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। তাতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।

অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করেন নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি, যিনি এখন মিয়ানমারের জান্তার হাতেই বন্দি। গতবছর ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে সু চির দল এনএলডির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে আবারও সামরিক শাসন ফিরিয়ে আনে দেশটির সেনা নেতৃত্ব। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুনানির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্র্বতীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আইসিজে। সেখানে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

কিন্তু তার পরের দুই বছরে দেশটির পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়নি। বরং রাখাইনসহ সেদেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের নতুন নতুন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। এ আদালত কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না, যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।

আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় আসতে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। সূত্র : রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Kumrul Parvez ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    এই মহিলার জেলে থাকা উচিত। কারণ এর দ্বারা মানবতার কোন উপকারে আসে না। একে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া উচিত হয় নি। তার নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাহার করা উচিত।
    Total Reply(1) Reply
    • Abu Abdullah ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:১৫ এএম says : 0
      SHE IS A KILLER LADY
  • M.A. Monsoor ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    সুচি পনর বছর গৃহবন্দী থাকার পর অনুধাবন করলেন, এভাবে কিছুই হবে না। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সেনাবাহীনির সাথে ভাগাভাগি করে ক্ষমতা ভােগ করা। কিন্তু বিধি বাম।শেষ পর্যন্ত তাও হারিয়ে এখন আবার কারাগারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Imam Hossain ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    মানব জাতিকে কষ্ট দিয়ে কেউ আরাম পাবে না।উজ্জ্বল উদাহরণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sayid Ahmad ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ত তোকে খেতে দেওয়া উচিত জেলে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ