Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুদ্ধের হুঙ্কার ধ্বনিত হচ্ছে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

যুদ্ধের হুংকার ধ্বনিত হচ্ছে ইউরোপে। এশিয়ায়ও যুদ্ধের হুংকার চলছে অনেকদিন থেকেই। এসব হুংকার থেকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হবে কিনা, সে প্রশ্ন অনেকেরই। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, আশংকিত যুদ্ধটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়ে পরমাণু ও সাইবার যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। হঠাৎ করে ইউরোপের চলতি সংকটের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে দখল করতে পারে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হুঁশিয়ার জানানোর পর থেকেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো সেখানে বিপুল পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র পাঠিয়েছে। রাশিয়াও ইউক্রেন সীমান্তে ১.২৫ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে। পূর্ব ইউরোপে বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে ব্যাপক বাকযুদ্ধ। বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলে কিয়েভের বিরুদ্ধে লড়াইরত রুশপন্থী বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সহায়তার নামে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মস্কো। ইউক্রেন ন্যাটোর সেনা মহড়ার সাথে যুক্ত হয়েছে। দেশটি ন্যাটো ও ইইউ’র সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোপূর্বে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করেছে। ইউক্রেনের অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া বলেছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ঐ সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটোর ও ইইউ’র সদস্য হওয়ার প্রচণ্ড বিরোধিতা করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর সাথে ফোনালাপে বলেছেন, পূর্ব ইউরোপে ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনা কমাতে রাশিয়ার উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার প্রস্তাবের অন্যতম হচ্ছে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ না করা, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে আগ্রাসী সমরাস্ত্র মোতায়েন না করা ও পূর্ব ইউরোপের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ওয়ারশ প্রতিরক্ষা চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর ন্যাটো জোটে প্রবেশের আগে সামরিক সামর্থ্য ও স্থাপনা পূর্বের অবস্থানে সরিয়ে নেয়া।

গত ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালাবে রাশিয়া। তাই শিগগিরই আমি পূর্ব ইউরোপ ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে মার্কিন সৈন্য পাঠাবো। এর আগে পেন্টাগন ৮,৫০০ সৈন্যকে সর্বোচ্চ সতর্ক পরিস্থিতিতে প্রস্তুত রাখার কথা জানায়। পেন্টাগনের মুখপাত্র কিরবি জানান, প্রাথমিক এই বাহিনীই প্রয়োজনে ইউরোপে লজিস্টিক, অ্যাভিয়েশন, ইন্টেলিজেন্স, পরিবহন ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সামর্থ্য যোগ করতে পারে। মার্কিন জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমাগত বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এবার ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়া যে বাহিনীগুলো জড়ো করেছে, প্রতিবেশী দেশটিতে আগ্রাসন চালাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে পরিণাম ‘ভয়াবহ’ ও হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হবে। অবশ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন বলেছেন, এখনো কূটনীতির মাধ্যমে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, ইউরোপে মোতায়েন করা নিজেদের সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের পরিমাণ বাড়াতে ন্যাটোকে প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে ৭০ টন অস্ত্র প্রেরণ করেছে। ন্যাটোও বিপুল সমরাস্ত্র প্রেরণ করেছে। ন্যাটোর মহাসচিব স্টোলটেনবার্গ বিবিসিকে বলেছেন, ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের। আমরা বরং অন্য সহযোগিতা প্রদানে বেশি মনোনিবেশ করছি। কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নাগরিকদেরও ইউক্রেন ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়, তাহলে দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রস বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা হলে পুতিনের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাসহ যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা ঐক্যবদ্ধ। রাশিয়া সাইবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিত্তোরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেছেন, তার দেশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট ব্যবহার করতে না দেয়ার অর্থ হবে মস্কোর সাথে পাশ্চাত্যের সম্পর্ক ছিন্ন করা। ইউক্রেনে হামলার অজুহাত তুলে দেশটিতে সমরাস্ত্রের ঢল নামিয়েছে পাশ্চাত্য। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে জোর করে যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে যে দেশকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের দামামা বাজছে, সেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার দেশে রাশিয়া হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কার বিরোধিতা করেছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে এক টেলিফোনালাপে এ ধরনের দাবির পুনরাবৃত্তি না করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, তিনি গত বসন্তে করা একই আকারের রুশ সেনা সমাবেশের চেয়ে এখন তেমন বড় হুমকি দেখছেন না। ইউক্রেন থেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাহারের বিষয়টিও বড় ভুল হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। উপরন্তু তিনি ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি না করতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান রেখেছেন এই বলে, আড়াই লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীর আধুনিকা নে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী তিন বছরে আরো এক লাখ নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। সৃষ্টি করা হবে নতুন ২০টি ব্রিগেড। সেটা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নয়, ভবিষ্যতের শান্তির জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ৩১ জানুয়ারি। এ বৈঠকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম বিতণ্ডা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়াকে ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হবে। তবে মস্কো আলোচনার পথে হাঁটলে তারাও টেবিলে বসতে রাজি। চীন বলেছে, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উচিত সংলাপের মাধ্যমে মতৈক্য সৃষ্টি করা এবং ইউক্রেন সংকটের সমাধান করা। ওদিকে ইউক্রেনে ন্যাটো বাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে সংস্থাটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কয়েকটি দেশ এই নীতির তীব্র প্রতিবাদ করে জানিয়েছে, রাশিয়ায় ন্যাটো আক্রমণ চালালে তারা ন্যাটো থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করবে। এছাড়া, ন্যাটোর অন্যতম সদস্য তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ব্যাপক। এসবের ক্ষতি হোক এমন ঝুঁকি নেবে না তুরস্ক। ইতালি ও হাঙ্গেরির সাথেও ক্রেমলিনের সম্পর্ক ভালো। নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি দুই দেশই বলছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন চালুর কাজ পিছিয়ে যাবে। ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি-৩৫% প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে রাশিয়া। খাদ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসার বিরাট অংশ রয়েছে রাশিয়ার সাথে। তাই ভবিষ্যৎ নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করার জন্য অন্য দেশ থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা এবং পারস্পরিক আলোচনা করেছেন ইউরোপের নেতারা। পুতিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই প্রাকৃতিক গ্যাসকে। আর ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে ইউক্রেন হচ্ছে রাশিয়ার প্রবেশ দ্বার। রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রধান গ্যাস পাইপ লাইনগুলো গেছে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে। রাশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ যায় এই পাইপলাইন দিয়ে। তাই ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ বলেছেন, আমরা ইউরোপের জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় কাতার থেকে এলপিজি আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সফলতা আসবে কি-না তা নিশ্চিত নয়। উপরন্তু ইউরোপীয় ক্রেতারা তাদের কয়লা আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে। ফলে কয়লার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র যত রাশিয়া বিরোধী ভূমিকা পালন করতে পারবে, ততটা পারবে না ইউরোপের দেশগুলো।

অপরদিকে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র মুখামুখি হয়ে রয়েছে অনেক দিন থেকেই। তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চীন দাবি করে আসছে, তাওয়ান তার দেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ মনে করে। উপরন্তু দেশটির সামরিক ও আর্থিক উন্নতির জন্য সার্বিক সহায়তা দেয়। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালীতে প্রায়ই ব্যাপক নৌ ও বিমান মহড়া চালায়, কয়েকটি বিমান ইতোমধ্যেই ধ্বংস হয়ে সাগরে পতিত হয়েছে, যার অন্যতম এফ৩৫-সি বিমান। এটি মার্কিন রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন থেকে উড্ডয়নের সময় ভূপাতিত হয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে পড়ে নিমজ্জিত হয়েছে। এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সব থেকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত। বিমানটি বিশেষায়িত ও গোপন প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতিতে ঠাঁসা। এই বিমানের ব্লাক বক্স উদ্ধার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, চীন ঐ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে পারলে প্রযুক্তি হস্তগত করবে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠন করেছে। অস্ট্রেলিয়াকে সাবমেরিন নির্মাণে প্রযুক্তি দিচ্ছে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড গঠন করেছে।চীন এসব জোটের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অন্যদিকে, চীন-ভারত মুখামুখি হয়ে রয়েছে অনেকদিন থেকে। লাদাখ নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে। এই অবস্থায় লাদাখ-তিব্বত সীমান্তে প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ জুড়ে একটি সেতু নির্মাণ করছে চীন, যা ৪০০ মিটার দীর্ঘ ও আট মিটার চওড়া। এটা নির্মিত হলে লাদাখে পৌঁছতে চীনের ১৫০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। লাদাখে প্রায় ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটারের লেক প্যাংগং, যার এক তৃতীয়াংশ ভারতে ও দুই তৃতীয়াংশ চীনে। এই লেকেরই ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে আট পর্যন্ত অঞ্চল বিতর্কিত এলাকা। দেড় বছর ধরে ওই এলাকাতেই ভারত এবং চীনের স্ট্যান্ড অফ হয়েছে। পরে দুই দেশ আলোচনার ভিত্তিতে সেনা খানিকটা প্রত্যাহার করেছে। এই সেতু নির্মাণের কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারত। এছাড়া, অরুনাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে চীন সেনাঘাঁটি বানিয়েছে। লাদাখ নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ বাঁধে। পাকিস্তানের সাথেও ভারতের যুদ্ধাভাব চলছে স্বাধীনতার পর থেকেই। কয়েকবার ভয়াবহ যুদ্ধও হয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে কাশ্মীর। ভারত রাশিয়ার অনেকগুলো এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করে চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করছে। চীন সাগরকে কেন্দ্র করে সাগর সংলগ্ন দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্ক খুব খারাপ চলছে। উত্তর কোরিয়া গত মাসে মোট সাত বার পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশও অনবরত আধুনিক সমরাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। অপরদিকে, ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন আক্রমণে দেশটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে সিরিয়ায়ও। সেখানে কয়েকটি দেশের সেনা গৃহযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হয়েছে।

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২২’ মতে, সামরিক শক্তিতে শীর্ষ দশটি দেশ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে: যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান ও ব্রাজিল। করোনা সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার সময়ও বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। অথচ এ বিপুল অর্থ মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে ব্যয় করা হলে মানুষের অশেষ কল্যাণ হতো। বিশ্ব ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হতো। এমনকি করোনা মহামারি মোকাবেলায় ব্যয় করা হলে মহামারি দীর্ঘ হতো না। মানুষের এত প্রাণহানিও হতো না।

বাইডেন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সন্ত্রাস নির্মূল যুদ্ধ পরিহার করে বৈশ্বিক গণতন্ত্র উদ্ধার তৎপরতা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেছে। এটা আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছিল তালেবানের কাছে যুদ্ধে পরাজয়ের পর আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার এবং ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করার প্রেক্ষিতে। কিন্তু না, যুদ্ধ যার পেশা, নেশা ও উপার্জন, তার যুদ্ধ ছাড়া তার থাকা মুশকিল। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বাঁধানোর পাঁয়তারা করছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। উপরন্তু একের পর এক দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। ফলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞাযুদ্ধ চলছে মার্কিন বনাম বিভিন্ন দেশের মধ্যে। ফলে বৈশ্বিক মহামন্দা আর তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় বর্ণিত যুদ্ধাভাবের দেশগুলোর যে কোনো একটিতে প্রাতিষ্ঠানিক যুদ্ধ বেঁধে গেলে তা শুধুমাত্র ঐ দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেটি ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র অঞ্চলে, এমনকি বিশ্বব্যাপী। শুরুতে বলেছি, সেটা হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা আসলে হবে সাইবার যুদ্ধ ও পরমাণু যুদ্ধ। সেটা হলে কী ভয়াবহ পরিণতি হবে সে ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মন্তব্য স্মরণীয়। পুতিন বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কে জয়ী হবে তা বলা কঠিন। তবে, এটা ঠিক যে, সে যুদ্ধের পরিণতি দেখার জন্য হয়তো কেউ বেঁচে থাকবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুদ্ধের হুঙ্কার ধ্বনিত হচ্ছে

আরও পড়ুন