পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিশ্রম করে উপার্জনের চেয়ে উত্তম ও পবিত্র উপার্জন আর কিছুই হতে পারে না। যদিও সেটা অল্প হয়। তাই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুদ-ঘুষসহ সকল প্রকার হারাম উপার্জন পরিহার করা অতীব জরুরি। কারণ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদের জন্য হাশরের ময়দানে একমাত্র উপার্জনকারীকেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যদিও হারাম সম্পদ অনেকে ভোগ করে থাকে। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকেই বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
ঢাকা উত্তরা-৩ নম্বর সেক্টর মসজিদ আল-মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম গতকাল জুমার খুৎবার পূর্বে বলেন, ঈমানের পর একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল ও ফরজ হলো হালাল উপার্জন করা। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো এবং সৎকর্ম করো, তোমরা যা করো সে বিষয়ে আমি অবহিত।’ (সূরা মুমিনুন আয়াত ৫১)। নবী কারিম (সা.) বলেন বৈধ উপার্জনের সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ ইবাদত। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ) নবী কারিম (সা.) বলেন, সর্বোত্তম উপার্জন হলো পুণ্যময় শততাময় বাণিজ্য এবং মানুষের নিজ হাতের কর্ম। (মুসনাদে আহমদ) আল্লাহতায়ালা বলেন, যখন নামাজ সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, আর আল্লাহতায়ালাকে অধিক স্মরণ করবে, যেন তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা আয়াত ১০)।
নবী কারিম (সা.) এরশাদ করেছেন, সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবীগণ সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সাথী। (তিরমিজি শরিফ) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) এর সাহাবীগণ শ্রমিক ছিলেন। (বোখারি শরিফ)। পরিশ্রম করে উপার্জনের চেয়ে উত্তম ও পবিত্র উপার্জন আর কিছুই হতে পারে না, যদিও সেটা অল্প হয়। তাই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুদ-ঘুষসহ সকল প্রকার হারাম উপার্জন পরিহার করা অতিব জরুরি। কারণ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদের জন্য হাশরের ময়দানে একমাত্র উপার্জনকারীকেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যদিও হারাম সম্পদ অনেকে ভোগ করে থাকে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে নবীগণ ও সাহাবীগণের মতো হালাল কামাই করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব শায়খুল হাদিস মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী বয়ানে বলেন, যুগে যুগে যেসব মহামারির আবির্ভাব হয়েছিল, বা বর্তমানে হচ্ছে সবগুলোর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী হলো পরিবেশ দূষণ। আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সবকিছু বিনা উৎস ও বিনা কারণে করতে পারেন। আল্লাহতায়ালা কিন্তু তা করেন না। আল্লাহতায়ালা কিছু করার জন্য বা ঘটানোর জন্য কিছু নিয়ম ও উৎস নির্ধারণ করেছেন, সেই নিয়ম ও উৎসের মাধ্যমে সবকিছু করেন এবং ঘটান। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নিয়মের মধ্যে কোন পরিবর্তন পাবে না।’ হ্যাঁ উৎস ও নিয়মবহির্ভূত ভাবেও কিছু কিছু ঘটনা ঘটিয়ে দেখান তাঁর কুদরাত প্রকাশের জন্য যা আমাদের জন্য ব্যতিক্রমী, আল্লাহতায়ালার জন্য তাঁর কুদরাতের বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতিতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটেনা।
প্রতিটি ঘটনা বা উপাদান অন্য ঘটনা বা উপাদান দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। কাজেই প্রকৃতির সাথে মানুষ যে ঘটনা ঘটাচ্ছে বা প্রকৃতির উপর মানুষ যে হস্তক্ষেপ করছে তার কারণেই পরিবেশ নষ্ট ও অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে। পরিবেশ নষ্ট ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে একেকটি দুর্যোগ পৃথিবীতে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে যে করোনা বা তার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন, ডেল্টার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে তা ও মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের ফল। সেইজন্য রাসূলে পাক (সা.) যেই রকম অন্তরের পবিত্রতা ও শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। সেই রকম পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা নিজে পরিচ্ছন্ন ও পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন।’ উল্লেখ্য যে, পরিছন্নতা ও পবিত্রতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পবিত্রতা হলো অন্তরকে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখা, শরীরকে নাপাক থেকে মুক্ত রাখা। পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আরও ব্যাপক, যার কারণে একজন ব্যক্তি তার শরীরকে নাপাক থেকে মুক্ত রাখলেও ঘরের আঙিনায় আবর্জনা থাকলে, বা তার বাথরুম অপরিচ্ছন্ন হলে লোকটিকে পবিত্র বলা হলে ও সবাই লোকটিকে অপরিচ্ছন্ন বলবে। সেজন্য রাসূলে পাক (সা.) পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশের সাথে সাথে পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আল্লাহতায়ালা পবিত্র, পবিত্রতাকে ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা পরিচ্ছন্ন, পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন। আল্লাহতায়ালা শালীন, শালীনতাকে ভালোবাসেন।
আল্লাহতায়ালা দানশীল, দানশীলতাকে পছন্দ করেন। তোমরা তোমাদের আঙিনা ও মাঠকে পরিচ্ছন্ন রাখ। ইয়াহুদীদের মতো ভিটার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখ না।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম নিজেকে এবং চতুর্দিকের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা অপরিচ্ছন্নতা পরিবেশকে দূষিত করে। আর দূষিত পরিবেশ সুস্থতার জন্য হুমকি। অন্যদিকে বর্তমানে বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে, যা গোনাহ বা অন্য কোনো রকমের অপরাধ বলে মনে করা হচ্ছে না। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, পলিথিনের অপব্যবহার গাছপালা কাটা, খাল, নদী ভরাট, অবৈজ্ঞানিকভাব পানির সাথে জৈব, অজৈব, রাসায়নিক, তেজষ্ক্রিয় পদার্থ মিশানো পরিবেশকে অপরিচ্ছন্ন করে ও দূষিত করে। দূষিত পরিবেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ জীবাণুর বিস্তারের জন্য দায়ী। ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত পরিছন্নতা অর্জনের মধ্যেমেই দূষিত পরিবেশ দ্বারা সৃষ্ট রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্ষা পাওয়া যাবে। নিজেকে এবং পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে তৌফিক দান করেন। আমিন।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ঈমানদার কিন্তু গোনাহগার দুনিয়া বা কিয়ামতের ময়দানে ক্ষমা প্রাপ্ত হয় নাই এধরনের লোকরা কিছুদিনের জন্য হলেও জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঈমানের বরকতে এ লোকগুলো একটি পর্যায়ে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন জান্নাতিরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘তোমাদেরকে কোন অপরাধে জাহান্নামে নিয়েছিল। তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না, অভাবগ্রস্থকে আহার্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিদান দিবস (কিয়ামত দিবস)-কে অস্বীকার করতাম।’ (সূরা আল-মুদ্দাসসির, ৪২-৪৬)। খতিব বলেন, আমরা সকলেই সরাসরি জান্নাত লাভ করতে চাই, তাই আয়াতসমূহে উল্লেখিত অপরাধগুলো আন্তরিকভাবে ছেড়ে দিয়ে চারটি মৌলিক ইবাদাত মৃত্যু পর্যন্ত করে যাবো। আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়ব, অভাবগ্রস্থকে যথাসাধ্য সাহায্য করব, ইসলাম এবং আলেম ওলামাদের সমালোচনা করব না, কিয়ামত দিবসকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করব। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।