পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অবৈধ দখলের কারণে রাজধানী থেকে ছোট-বড় অনেক পার্ক হারিয়ে গেছে। নগরবাসী যে একটু হাঁটাহাঁটি করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে সে সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিটি মানুষের জন্য অন্তত ৯ বর্গমিটার সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রয়োজন। এ চিন্তা থেকেই একসময় নগর পরিকল্পায় পার্কের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালী ও অবৈধ দখলদারদের কারণে নগরীর জানালা বলে পরিচিত পার্কগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রায় দেড়কোটি মানুষের এই নগরীতে কাগজ-কলমে পার্ক আছে মাত্র ৪৯টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৩টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২৬টি। বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার পার্কগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এখন দখলদারদের কবলে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন অনেক পার্কের অস্তিত্ব বলতে কিছু নেই। দখল হয়ে যাওয়া এসব পার্কে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, বিভিন্ন দোকান, ক্লিনিক, আড়ত, রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড, গাড়ির গ্যারেজ, মালপত্র রাখার গুদাম, পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি। গতকালও একটি দৈনিকের খবরে ঐতিহ্যবাহী গুলিস্থানের পার্কটি হারিয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত কদিনে পার্কগুলোর অস্তিত্বের আশঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দুই সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত ৪৯টি পার্ক ছাড়াও রাজউকের অধীন রমনা, সোহরাওয়ার্দী ও চন্দ্রিমা উদ্যানও এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
নগরীতে পার্কের অপরিহার্যতা লিখে বা বলে বুঝাবার প্রয়োজন নেই। নগরীর নির্মল পরিবেশ ও মানুষের সুস্থতার প্রয়োজনেই পার্কগুলো টিকিয়ে রাখা জরুরি। এসব পার্ক যথাযথভাবে সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। বাস্তবে যাদের দেখার কথা তাদের উদাসীনতা অথবা প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে পার্কগুলোর করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাগজপত্রে থাকলেও বাস্তবে নেই রায়েরবাজার শিশু পার্কটি। পশু হাসপাতালের সামনের পার্কটির হদিস জানা নেই এলাকাবাসীর। লালবাগের রসুলবাগের পার্কটি পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। নয়াবাজারে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্কের চারপাশ বেদখল হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুরের শহীদ শাকিল পার্ক, শিয়া মসজিদ পার্ক, ইকবাল রোড পার্ক, ফার্মগেইট ত্রিকোণ পার্ক, শেরশাহ সুরি লেনপার্ক, তাজমহল রোড পার্ক, লালমাটিয়া ডি-ব্লক পার্ক, হুমায়ূন রোড পার্ক, দখলদারদের কবলে চলে গেছে। আজিমপুর শিশুপার্কে বসেছে কাঁচামালের দোকান। কাগজে-কলমে মুক্তাঙ্গন পার্ক থাকলেও সেখানে চলছে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা। মতিঝিলে পার্কের এখন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। মূল পার্ক তো নেইই যেটুকু ছিল তার একটিতে পুলিশ ক্যাম্প ও চারিদিকে গ্রীল দেয়া এবং এর মধ্যেই চলছে রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবসা। অন্যটি দখল করে আছে ছিন্নমূল মানুষ। বাবুবাজার সংলগ্ন বংশাল থানার সামনে ইংলিশ রোডের মালিটোলা পার্কটি ঢাকা জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা শ্রমিক লীগ নামের দুটি সংগঠন দখল করে অবৈধ ট্রাকস্টান্ড বানিয়েছে। পার্কের যতটুকু জায়গা রয়েছে তার অবস্থাও খুব ভাল নয়। আলোচিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু পার্কটিও বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, হাঁটার জন্য পার্কের কোন বিকল্প না থাকলেও রাজধানীর পার্কগুলো দিন দিন উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলছে।
প্রতিটি সভ্যদেশেই নগর পরিকল্পনায় পার্কের স্থান রাখা হয়। ঢাকায় কেবল এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। নগর কর্তারা খোঁজ নেন না পার্কগুলো কোথায় এবং কি অবস্থায় রয়েছে। অথচ তারা একটি আধুনিক নগরী নগরবাসীদের উপহার দেবেন বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। পার্কগুলো যে সংরক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করা জরুরি এদিকে তেমন দৃষ্টি দিচ্ছেন বলে মনে হয় না। পার্কগুলোর বাইরেও নগরীর বিভিন্ন জায়গায় যেসব গাছপালা রয়েছে দেখা যাচ্ছে, রাতের আঁধারে সেগুলো কেটে ভবনাদি নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজধানীকে ক্রমান্বয়ে সবুজ শূন্য করে ফেলা হচ্ছে। বাসের অযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসেবে খ্যাত। এ পরিস্থিতি উত্তরণে পার্ক এবং পার্কের সবুজ পরিশেষ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। দখল হয়ে যাওয়া পার্কগুলো উদ্ধার করে সেগুলো সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক। পার্ক দখল হয়ে যাবে, তা উদ্ধার করা যাবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযাগ্য হতে পারে না। অবিলম্বে হারিয়ে যাওয়া পার্ক এবং যেগুলো রয়েছে সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবে, এটাই নগরবাসী প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।