Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফল ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যে জুটবে কবে ?

জাতীয় মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রিতা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:০২ এএম

পাঁচ মাসের মাথায়ই দেশের উন্নয়নের মাইল ফলক ইতিহাসের সর্বাধিক ব্যয় সম্বলিত পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও এর সুবিধা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পরিবহন সেক্টরে কবে পৌছবে তা এখনো অজ্ঞাত। প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুকে সংযুক্ত করে ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ ২০২০-এ ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হয়েছে। পদ্মা সেতুর ওপর রেল লাইনও বসছে। এ রেললাইন প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে ভাংগা হয়ে ফরিদপুরÑরাজবাড়ী সহ পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে। পাশাপাশি ভাংগা থেকে যশোর হয়ে খুলনা এবং বেনাপোল হয়ে কোলকাতাকেও সংযুক্ত করার লক্ষে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
কিন্তু প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু ও ঢাকাÑমাওয়াÑভাংগা এক্সপ্রেস ওয়ের সুফল পেতে দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়ন জরুরী হলেও তা এখনো ‘কাগুজে প্রকল্প’এ সীমাবদ্ধ আছে। ফলে আগামী জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ যথেষ্ট বেড়ে যাবে। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধির আশংকা করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। এমনকি বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার সাথে ঝুকি বাড়বে বলেও শংকিত মহলটি।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌছলেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর এবং ১৩৩ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থল বন্দর ছাড়াও ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ২০০৫ সালে নির্মিত ঢাকাÑখুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে গোপালগঞ্জ, ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিনÑপশ্চিমে খুলনা মহাসড়কটিও ৩০ফুট প্রস্থ। এমনকি ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটিও মাত্র ২৪ ফুট প্রস্থ। ঢাকার সাথে যশোর ও বেনাপোলকে সংযূক্তকারী গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশালের লেবুখালী থেকে পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
ফরিদপুরÑবরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক নির্মানে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যায় সম্বলিত ভুমি অধিগ্রহনে একটি প্রকল্প একনেক-এ অনুমোদন লাভ করে। ২০২০-এর জুনে ভ’মি অধিগ্রহন শেষ করার কথা থাকলেও তা আগামী জুনেও সম্ভব হবার খুব একটা লক্ষন নেই। এমনকি এ প্রকল্পটির জন্য ইতোপূর্বে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সম্পন্ন করলেও বরিশাল মহানগরীকে এড়িয়ে বাইপাস নির্মানের বিষয়টি অন্তভর্’ক্ত ছিলনা। নগরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত হলেও তার এলাইনমেন্ট করতে প্রস্তাবিত রেল পথের সাথে কিছুস্থানে সাংঘর্ষিক হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পথ নকশা নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়কটি বাদ দিয়ে নতুন ৬ লেন মহাসড়ক নির্মানেরও চিন্তা করেছিল সড়ক অধিদপ্তর। কিন্তু মন্ত্রনালয় বিষয়টিতে সায় না দেয়ায় বিদ্যমান মহাসড়কটিই ৬ লেনে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হলেও কবে এ মহাসড়কের বাস্তব কাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক অবসরে যাওয়ায় নতুন কাউকে সেখানে নিয়োগও দেয়া হয়নি। তবে সম্ভাব্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অর্থায়নের কথা রয়েছে।
অপরদিকে ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোরÑবেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটির এলাইনমেন্ট সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হয়েছে। ভ’মি অধিগ্রহনের একটি প্রস্তাব মন্ত্রনালয়ে পাঠান হয়েছে বলে সড়ক অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু মূল প্রকল্প প্রস্তাব-ডিপিপি প্রনয়ন সহ তা সরকারের চুড়ান্ত অনুমোদন কবে নাগাদ সম্ভব হবে তা বলতে পারেন নি কেউ। তবে ঐ মহাসড়কেরই গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তি মধুমতি নদীর ওপর কালনা’য় জাপানী অর্থায়নে প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি ৬ লেন সেতুর নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর পরে আগামী জুনে শেষ হচ্ছে ।
অপরদিকে ঢাকাÑখুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা অংশের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের সরকারী সিদ্ধান্ত হলেও তেমন কোন অগ্রগিত নেই। অথচ এ মহাসড়কটির ওপরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্বম মোংলা সমুদ্র বন্দর খুলনা বিভাগীয় সদর ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সাথে রাজধানী সহ দেশের বেশীরভাগ এলাকার সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল।
খোদ প্রধানমন্ত্রী সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রীও বারবারই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। এসব মহাসড়কগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় আরো ৫ বছর আগে থেকেই উন্নয়ন প্রকল্প সমুহ বাস্তবায়নে সবুজ সংকেত দেয় সরকার। এমনকি তহবিলের সংস্থানে সরকার অনেক এগুলোও ডিপিপি প্রনয়ন সহ ভুমি অধিগ্রহনের অগ্রগিত খুব সন্তোষজনক নয়। বাস্তাব অবকাঠামো নির্মান শুরু আরো অনেক দুরে।
এসব বিষয়ে বরিশাল ও গোপলগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হলে সকলেই বিভিন্ন জটিলতার কথা বললেও ‘বিধি মোতাবেক সব কিছু এগুচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তব অবকাঠামো নির্মান কবে নাগাদ শুরু হবে তা বলতে পারেন নি কেউ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়ম

২৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ