পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারের গৃহীত বেশ কিছু মেগাপ্রজেক্ট বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত, গতিশীল ও বেগবান করবে বলে আশা করা যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পদ্মাসেতু, ঢাকায় মেট্রো রেল, মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে উন্নতিকরণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে মেট্রোরেল এবং টানেলের নির্মাণ ২০২২ সালে মধ্যেই সম্পন্ন হবে এবং পদ্মাসেতুর উদ্বোধন ২০২২ সালের জুলাই মাসে হবে বলে জানা যায়।
আমরা ২০১৫ সালেই নিম্ন আয়ের দেশ হতে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। কোনো দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ১০৪৫ ডলার বা তার নিচে হলে তাদের নিম্ন আয়ের দেশ বলা হয়। ২০২১ সালের শেষে আমাদের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে ২০২২ সালকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেই কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত বছরের ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৯৯১ সালে আমাদের দেশে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৯ এ সেই হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে (ঢাকা ট্রিবিউন)। ২০১৮’র তথ্য অনুযায়ী, জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৪তম অর্থনীতির দেশ আর ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২তম।
স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা’। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শিক্ষাখাতে বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে।
কৃষিখাতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠির বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। কৃষিকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়া, ভর্তুকি দেওয়া, সার, তেল, ডিজেলসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে কৃষি খাতকে একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন বর্তমান সরকার। ফলে আমরা খাদ্য উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধান ও মাছ উৎপাদনেও বিশ্বে অনন্য রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎখাতে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন করা হয়েছে, ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মোবাইল ব্যাংকিং, উপজেলা শহরে বসেছে ব্যাংকের এটিএম বুথ, সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপই বাংলাদেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন মাইলফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে ভারী শিল্পের উন্নয়ন এবং পদ্মাসেতু, মেট্রারেলসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর নেওয়া সাহসী পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসের চলমান মহামারী থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে যেসব উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন সেগুলোও অত্যন্ত ফলপ্রদ ভূমিকা রেখেছে। চলমান মহামারীতেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার অনেক কম। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় যেখানে মৃত্যুহার ১৫-২০ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ছিল ২২৭.৭৫ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১৯,৩১৪ টাকা। শিক্ষিতের হার ছিল মাত্র ২৯.২৩%। ২০১১ সালে, ৩০ বছরের ব্যবধানে এই বাৎসরিক আয় ছিল ৮৬১.৭৬ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৭৩,০৭৮ টাকা। শিক্ষিতের হার ছিল ৫৮.৭৭% এবং দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫%। ২০১৮ সালে মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৯৮.২৬ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১,৪৪,০১৩ টাকা। শিক্ষিতের হার এবং দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৭৩.৯১% ও ২১.৮%। ১৯৮১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৩০ বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫৪ হাজার টাকা এবং শিক্ষিতের হার বেড়েছে প্রায় ২৯%। ২০১১ থেকে ২০১৮ সালে, মাত্র ৭ বছরে এই মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৭১ হাজার টাকা, শিক্ষিতের হার বেড়েছে ১৬% এবং দারিদ্র্যের হার কমেছে প্রায় ১০%। দেশ এ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।