Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাকে হত্যা করে আত্মহত্যার প্রচার করেছিলেন দুই ছেলে

শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৭ পিএম

ফুলজান ভানুর (৭০) স্বামী মারা গেছেন ২৮ বছর আগে। ছেলেদের সংসারে থাকতেন তিনি। দুই মাস আগে বাড়ির পাশে একটি গাছে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। তখন দুই ছেলে প্রচার করেন, তাঁদের মা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আশপাশের লোকজন ও পুলিশ ও তাঁদের কথা বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু এখন জানা গেল, ঘটনা ভিন্ন রকম।

জমি দলিল করে না দেওয়ায় দুই ছেলে ফুলজান বিবিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় এক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই ছেলে।

ফুলজান ভানু শরীয়তপুরের জাজিরার উপজেলার পাচু মাতবরকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল গফুর সিকদারের স্ত্রী। এ দম্পতির ১০ ছেলে মেয়ে। মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে হাবিবুর রহমান সিকদারকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত আরেক ছেলে সেলিম সিকদার পলাতক।

জাজিরা থানা সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর জাজিরার পাচু মাতবরকান্দি গ্রামে স্ত্রী ফুলজান ভানুর মরদেহ বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ফুলজান আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্ত করে। আর ভিসেরার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তখন পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করছিলেন জাজিরা থানার পরিদর্শক শামছুল হক। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফলে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন হাতে পান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

পুলিশ গতকাল সকালে স্থানীয় কাজিরহাট বাজার থেকে ওই নারীর ছেলে হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, আরেক ভাই সেলিম সিকদারের সহায়তায় তাঁরা মাকে হত্যা করেন। ওই দিন শরীয়তপুর আদালতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হাবিবুর রহমান সিকদার। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দির তথ্যের বরাত দিয়ে জাজিরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকরাম হোসেন বলেন, ফুলজান ভানুকে তার ছেলে হাবিবুর রহমান ও সেলিম সিকদার শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। হাবিবুর জানিয়েছেন, জমিজমার বণ্টন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ২৫ নভেম্বর রাতে সেলিম সিকদার ও হাবিবুর রহমান সিকদার তাঁদের নামে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেন তাঁর মাকে। ফুলজান জমি লিখে দিতে অস্বীকৃতি জানান। ক্ষোভে দুই ভাই মায়ের গলা টিপে ধরেন। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে মা ফুলজান ভানু মারা যান। পরে বাড়ির পাশে একটি আমগাছে মরদেহ রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দেন। পরের দিন তাঁদের মা আত্মহত্যা করেছেন, এমন প্রচারণা চালান তাঁরা।

ফুলজান ভানুর মেয়ে রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা ১০ ভাইবোন। বসতভিটা ছাড়াও চাষের ৮ বিঘা জমি রয়েছে। হাবিব ও সেলিম সব জমি চাষাবাদ ও ভোগদখল করত। ওই জমি বণ্টনের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু দুই দিন আগে মায়ের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। বিশ্বাসই করতে পারিনি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত করে পুলিশ বলছে, আমার দুই ভাই মাকে হত্যা করেছে। হাবিব ভাই আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যারা আমার মায়ের হত্যায় জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, মাকে হত্যা করার কথা এক ছেলে আদালতে স্বীকার করেছেন। তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত আরেকজনের নাম বলেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তার বক্তব্য পেলে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শরীয়তপুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ