২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মিসেস আলেয়া সবেমাত্র বিবাহ করে মধুচন্দ্রিমা শেষ করেছে। হঠাৎ একদিন সকালে লক্ষ্য করল তার প্রস্রাবে ভীষণ জ্বালা এবং বারেবারে প্রস্রাব করতে হচ্ছে। কিন্তু দু-এক ফোঁটার বেশি প্রস্রাব হয় না। অসহ্য জ্বালায় টিকতে না পেরে হাজির হয় নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে। ২-৩ দিন নিয়মিত ওষুধ সেবনেই ওনার জ্বালাপোড়ার উপশম হয়। মিসেস আলেয়ার মতো শতকরা ৩০ ভাগ মহিলারা জীবনের কোন না কোন সময়ে অন্তত: একবার হলেও এ ধরনের প্রস্রাবের ‘প্রদাহ’ জনিত রোগে ভুগে থাকেন। অবশ্য এদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যকেরই প্রস্রাবের প্রদাহজনিত কারণে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে।
প্রস্রাবই অনেক সময় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কিডনির অংশবিশেষকে আক্রমণ করে থাকে, যাকে প্রদাহ বলা হয়। যখন থলিতে জমে থাকা প্রস্রাবে প্রদাহ হয় এটাকে বলে থলিতে প্রদাহ বা নিচু অংশের প্রদাহ, আর যখন প্রদাহ কিডনির উপরের অংশের ছড়িয়ে পড়ে তখন বলে কিডনিতে প্রদাহ বা উপরের অংশের প্রদাহ। প্রস্রাবের প্রদাহকে তাই চিকিৎসকরা দু’ভাগে ভাগ করে নেয়। কিডনির নিচু অংশে বা থালিতে প্রদাহ হলে এক ধরনের উপসর্গ হয়, আর উপরের অংশে হলে আরেক ধরনের কষ্ট হয়। এই প্রদাহ যখন সরাসরি কিডনির উপরের অংশে আঘাত করে, তখন শরীরের দুপাশে, নাভির ঠিক দু’দিকে পিছনে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হয়। জীবাণু এমনভাবে কিডনিকে আক্রমণ করে, যার জন্য শরীরে জ্বর দেখা দেয়। জ্বর কেঁপে আসে, আর সেই সঙ্গে ব্যথা ও রক্তবর্ণ প্রস্রাব হতে পারে। প্রস্রাবে জ্বালা নাও থাকতে পারে। অবশ্য কখনও কখনও কিডনির উপর ও নিচু দুই অংশই আক্রান্ত হতে পারে এবং শরীরকে নাস্তানাবুদ করে থাকে।
জীবাণু যখন কিডনিকে দংশন করে, তখন রক্তের কিছু কিছু লোহিতকণিকা ও শ্বেতকণিকা প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হয়। বেশি পরিমাণ লোহিত কণিকা যাবার দরুন প্রস্রাব রক্তবর্ণ ধারণ করে। এই সময় প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রস্রাবে লোহিত কণিকা ও শ্বেতকণিকা ধরা যায় এবং অণুবীক্ষণ যন্ত্রে জীবাণু দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় কি ধরনের জীবাণু দ্বারা প্রস্রাব আক্রান্ত হয়েছে তা জানার জন্য চিকিৎসকগণ প্রস্রাবের ‘কালচার’ করিয়ে নিতে বলেন, অর্থাৎ কি ধরনের জীবাণু দ্বারা প্রস্রাব আক্রান্ত হয়েছে এবং কি ধরনের ওষুধ দিয়ে সেই জীবাণু ধ্বংস করা সম্ভব তা জানা যায়।
আমরা জানি, প্রস্রাবের প্রদাহ সাধারণত মেয়েদেরই বেশি হয়ে থাকে। বিবাহিত মেয়েরাই সচরাচর এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। তবে অল্প বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং বয়স্করাও এ রোগে ভোগেন না যে তা নয়। মেয়েদের মলত্যাগের রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তার দূরত্ব খুবই কম। যার ফলে মলত্যাগের রাস্তায় যে সমস্ত ‘ইকোলাই’ জীবাণু বাসা বেঁধে থাকে, তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে কিভাবে প্রস্রাবের রাস্তায় ঢুকে যাওয়া যায়। এবং সুযোগ মতো কিডনির শরীরের অংশ বিশেষ, বিশেষ করে প্রস্রাবের থলিতে আক্রমণ করে বসে। ০. ৫ থেকে ২ ভাগ শিশু কোন কারণ ছাড়াই প্রদাহজনিত কারণে ভুগে থাকে অথবা তারা সময়ে অসময়ে প্রস্রাব দিয়ে জীবাণু নির্গত করে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের শিশুদের থলিতে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কম। মধ্যবয়সে ১৫ থেকে ৪০ বছরের মেয়েরাই সচরাচর প্রস্রাবের প্রদাহজনিত রোগে ভুগে থাকেন। এদের অনেকে আবার পাথর জনিতরোগে ভুগে থাকেন এবং তখন পুরুষ হোক বা মহিলাই হোক প্রস্রাবের প্রদাহে যন্ত্রণা অনুভব করেন। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে প্রষ্টেট গ্রান্ডের কারণে প্রদাহ হয়ে থাকে এবং এটা নিরাময় করা দুরূহ।
চিকিৎসা ঃ
জাবীণু ধ্বংসকারী ওষুধ (এন্টিবায়োটিক) খেলে ২-৩ দিনের মধ্যে উপকার হয় বা সেরে যায়। সুতরাংকাল বিলম্ব না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য কাছে ডাক্তার না থাকলে অনেক সময় খাবার সোডার শরবত বানিয়ে খেলেও জ্বালা- পোড়ার উপশম হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি খেলেও অনেক স্বস্তি আসে। এমন অনেক মহিলা রয়েছেন যারা স্বামীর সঙ্গে সহবাসের পর পরই প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ায় ভুগে থাকেন। সহবাসের পরপরই মাত্র ১টা জীবাণু ধ্বংকারী ওষুধ খেয়ে নিতে হবে, এবং প্রস্রাবের জায়গাটা সহবাসের পরপরই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। (সাধারণ পানি ঢেলে) এবং এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে হবে। এতেই সহবাসজনিত প্রস্রাবের প্রদাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এছাড়া যে ৩০ ভাগ মহিলা জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে প্রদাহজনিত রোগে ভুগছে, তাদের বেলায় জীবাণু ধ্বংসকারী ওষুধ ৭-১৪ দিন পর্যন্ত ক্ষেতে হয়। এমন অনেক মহিলা রয়েছেন, যারা ঘন ঘন প্রদাহের রোগে ভুগে থাকেন। এদের রক্ত, প্রস্রাব এবং রঞ্জনরশ্মির সাহায্যে কিডনির গঠন পরীক্ষা করতে বলা হয়। তারপর এদেরকে ২-৩ বছর ধরে ওষুধ খেয়ে যেতে হতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রদাহে যারা ভুগে, তাদের অনেকের হয়ত : পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ অথবা পাথরজনিত রোগও ধরা পড়ে। তবে সচরাচর খুব কম সংখ্যক রোগীই এ ধরনের জটিল রোগে ভুগে থাকে।
অনেক সময় মেয়েরা যখন গর্ভবর্তী হয়, তখনও প্রদাহজনিত রোগে ভুগে থাকে। এ সময়ে কিডনীর প্রদাহ, রোগীর গর্ভের বাচ্চাদের যেমন ক্ষতি করতে পারে, ঠিক তেমনি ভুল চিকিৎসার জন্য মায়েরও ক্ষতি হতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে প্রদাহকে সহজভাবে গ্রহণ করা মোটেই ঠিক নয়। এ সময়ে যে কোন ওষুধ সাবধানে দিতে হয়, সব ধরনের জীবাণুধ্বংসকারী ওষুধ দেয়া যায় না। গর্ভকালীন অবস্থায় জীবাণুধ্বংসকারী সালফার জাতীয় ওষুধ, নেলিডিক্সিক এসিড ট্যাবলেট, জেন্টামাইসিন কেনামাইসিন জাতীয় ইনজেকশন একেবারেই নিষিদ্ধ। পেনিসিলিন বা এমপিসিলিন জাতীয় জীবাণুধ্বংসকারী ওষুধ নিয়মিত ও পরিমাণ মাফিক খাওয়া যায়।
অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা প্রদাহের রোগের শিকার হয়। এদের মধ্যে বয়স্ক পুরুষরা যারা মূত্রাশয় গ্রন্থির প্রদাহে ভুগে থাকে তাদেরই বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদেরকে প্রস্রাবের প্রদাহ থেকে পৃথক করতেও অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। মূত্রাশয় গ্রন্থির প্রদাহে এক নাগাড়ে তিন মাস জীবাণুধ্বংসকারী ওষুধ খেতে হয়। সব ধরনের জীবাণু ধ্বংসকারী ওষুধই মূত্রাশয়-গ্রন্থি পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই না জেনে জীবাণুধ্বংসকারী ওষুধ খাওয়াও ঠিক নয়।
কিডনিরসমূহ ক্ষতি সাধন হয় যদি জন্মের পর ৩-৫ বয়স পর্যন্ত শিশুরা প্রস্রাবের প্রদাহে ভোগে। তাই বিশেষজ্ঞ জিকিৎসক দ্বারা অতি সত্বর সাবধানে এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কোন কারণে সন্দেহ হওয়া মাত্রই এ বয়সে প্রস্রাবে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত এবং জীবাণু ধরা পরলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা দরকার। মনে রাখা উচিত, শিশুদের প্রস্রাব ঠিকমত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো পর্যন্ত অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রস্রাব কলুষিত হয়ে সঠিক ফল নাও দিতে পারে। তাই প্রস্রাব ধরার পূর্বে প্রস্রাবের জায়গা ভালোমতো পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। প্রথম দিকের প্রস্রাব ফেলে দিতে হবে। মাঝখানের প্রস্রাব জীবাণুমুক্ত পাত্রে নিয়ে ঠিকমত পাত্রের মুখ বন্ধ করে অর্ধঘণ্টার ভেতর পরীক্ষাগারে নিয়ে যেতে হবে। সকালের প্রস্রাব সংগ্রহ করে বিকেলে নিয়ে গেলে কোন লাভ নেই। ‘কাল্্চার’ পরীক্ষার জন্য যে কোন সময়ের প্রস্রাব সংগ্রহই যথেষ্ট। শিশুদের প্রস্রাবে প্রদাহ ধরা পড়লে শিশুকে আরও নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করতে হয়। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে কিডনির শারীরিক গঠন ও কিডনির বিবিধ পরীক্ষা করা হয়। এমনকি পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা কমেছে কিনা দেখা হয়। থলির উপরে দরজার বা ভালব এর কারণে প্রস্রাবের অসুবিধা হলে তারও চিকিৎসার দরকার পড়ে। মনে রাখা দরকার যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার অভাবেই কিডনির কার্যকারিতার ব্যাঘাত ঘটে এবং তা পরিলক্ষিত হয় আরও বড় হয়ে, যখন সেই শিশুটি দেশের সুনাগরিক হয়ে বড় হতে চলেছে।
‘যারা ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রদাহজনিত রোগে ভুগে থাকেন তাদের বেশি পরিমাণ পানি পান করা উচিত।’
‘শিশুদের প্রস্রাবের প্রদাহ অবহেলা করা ঠিক নয়, কেননা তা কিডনিকে ক্ষতি করতে পারে।
অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।