পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতে বিগত কয়েক দশকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার ভারতীয় নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্রমবর্ধমান হারে সক্রিয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী উগ্রতাকে উৎসাহিত করছে। যেমন হিন্দু-জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থীরা খ্রিস্টান ধর্মবিশ^াসীদের কৌশলী দরিদ্রদের ধর্মান্তরিত করছে এবং মুসলিম পুরুষদের ‘লাভ জিহাদ’ এর মাধ্যমে অসচেতন হিন্দু মহিলাদেরকে বিবাহে প্রলুব্ধ করে ধর্মান্তরিত করছে, এই অজুহাতে তাদের ওপর সহিংস হামলা চালাচ্ছে।
২০১৪ সালে জাতীয় ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে এবং ২০১৯-এ আরো বড় নির্বাচনী জয়লাভ করার পর মোদি এখন তার শেষ মুখোশটিও খুলে ফেলেছেন। দ্রুত ধীরগতির অর্থনীতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, তার সরকার হিন্দুত্ববাদী সামাজিক এজেন্ডা অনুসরণ করতে তার বিপুল সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করছে। তার হিন্দুত্ববাদের অনুসারীরা বিশেষভাবে কার্যকর কৌশল হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করছে, যা হাজার হাজার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ট্রল দ্বারা চালিত এবং বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী ও হিন্দুত্ববাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহী’ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরামের (ইউসিএফ) মতে, গত বছর ভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি নথিবদ্ধ ৪শ ৮৬টি ঘটনা ২০২১ সালকে নব থেকে সহিংস বছর হিসেবে তুলে ধরেছে, যেখানে ২০১৪ সালে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ১শ’ ২৭টি। গেল বছর শুধুমাত্র বড়দিনেই ভারতীয় মিডিয়া সারা দেশে সাতটি খ্রিস্টান-বিরোধী ঘটনার খবর দিয়েছে। ভারতের মোটামুটি ২০ কোটি মুসলমানও মোদির হিন্দুত্ববাদীদের অনেক বড় লক্ষ্য এবং ভারতীয় মুসলিমরা আরো সমন্বিত এবং বিস্তৃত আক্রমণের শিকার।
গত আগস্টে মোদি ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের শ^ায়ত্ব শাসিত রাজ্য মর্যাদা বাতিল করেন। পুলিশ কাশ্মীরের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে শত শত সম্ভাব্য প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করে এবং মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্থানীয় হিন্দু চরমপন্থীরা মুসলিমদের বর্জন ও হয়রানির জন্য রাস্তার ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে বড় কর্পোরেশন পর্যন্ত মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসাগুলোকে একঘরে করে দেয়। ইন্টারনেট ট্রলগুলো নিয়মিতভাবে বিশিষ্ট মুসলিমদের, বিশেষ করে মহিলা এবং সাংবাদিকদের, ন্যাক্কাজনকভাবে অপদস্থ করতে শুরু করে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের জনসমাবেশগুলোতে অহরহ মুসলিম নিধনের ডাক এবং মুসলিম নির্যাতন খুব সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ভারতের সিএএ বিল নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের দ্রুত নাগরিকত্বের পথ মঞ্জুর করলেও স্পষ্টভাবে তালিকা থেকে মুসলিমদের বাদ দিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের ঘৃণামূলক বক্তব্যের ৩শ’ ৪৮টি ঘটনার মধ্যে ২শ’ ৯৭টির জন্য বিজেপি দায়ী।
গত চার মাসে এ ধরনের দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার হার ১শ’ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এসবের জবাবে নীরবতা পালন করে চলেছে মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সন্দেহ নেই যে, ২০২৪ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে সামনের মাসে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে হিন্দু ভোট সুরক্ষিত করার জন্য দলটি এভাবে উত্তেজনা উস্কে দিচ্ছে।
তবে, ঐতিহাসিক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি, লক্ষ্নৌ, কানপুর এবং মিরাটের মতো মুসলিম শহরগুলোতে ধীরে ধীরে মোদিবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের নেতৃত্বে এবং কিছু ক্ষেত্রে ‘সংশ্লিষ্ট নাগরিক’দের দ্রুত এবং নৃশংস হস্তক্ষেপে প্রায় ২৭ জন মারা গেছে, যাদের প্রায় সবাই যুবক, পুরুষ ও মুসলিম। শিশুসহ অনেকেই আটক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দাবি করেন যে, তাদের মারধর করা হয়েছে এবং অভুক্ত রাখা হয়েছে।
বিজেপির উস্কানিতে এই অতি বাড়াবাড়ি বিক্ষোভকারীদের পক্ষে নিরপেক্ষ জনগণের সহানুভূতি সৃষ্টি করেছে। এটি আরো বেড়ে যায়, যখন ৫ জানুয়ারি হিন্দুত্ববাদী যুব গোষ্ঠীগুলোর সাথে যুক্ত কয়েক ডজন সন্ত্রাসী দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের বেলা অভিযান চালায়। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটিকে বিজেপি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে ‘দেশবিরোধীদের’ কথিত ঘাঁটি হিসাবে অভিযুক্ত করে আসছে। এবার বিজেপির শিকার ভুক্তভোগী মুসলিমারা নয়, বরং বিক্ষুব্ধ হিন্দু মধ্যবিত্তরাও।
ভারতের হায়দারাবাদ এবং ম্যাঙ্গালোরে বিজেপিবিরোধী বিক্ষোভে ১ লাখ বা তার বেশি লোকের সমাগম হয়েছে। দেশটির দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় জেলেরা ভাসমান বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভগুলো মোদির হিন্দুত্ববাদ প্রকল্পের অন্যান্য বিরোধীদেরও উৎসাহিত করেছে। অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলো কেবল প্রতিবাদের পক্ষে সমর্থন জানাতেই নয়, পাশাপাশি, আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য উৎসাহ বোধ করেছে।
ভারতের ২৮ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এগারো জন মোদিকে বলেছেন যে, তারা তাদের রাজ্যে বিতর্কিত নাগরিকত্বের আইন প্রয়োগ করবেন না। পাঞ্জাব এবং কেরালা সংশোধিত সিএএ’র বিরুদ্ধে ৬০টিরও বেশি সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাদের নিজস্ব পিটিশন যুক্ত করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়েছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২০টি বিরোধী দল আইনটি স্থগিত করার জন্য যৌথ দাবি জানিয়েছে।
মোদি ও তার দলকে নাগরিকত্বের আইনে হস্তক্ষেপ করার জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিগত বছরে ভারতের অর্থনীতি চার দশকের মধ্যে প্রবৃদ্ধির স্তরে সর্বনিম্নে চলে না গেলেও ব্যয়গুলো চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া, একটি বড় কূটনৈতিক ক্ষতিও রয়েছে। আসামের অস্থিরতার কারণে ডিসেম্বরে মোদির জাপানি প্রতিপক্ষ আবে শিনজো তার সাথে একটি শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করে দেন।
একইভাবে, ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম বাংলাদেশের সরকার, অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত দিতে তিনটি মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বাতিল করেছে, যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নরেন্দ্র মোদির ডান হাত অমিত শাহ বারবার উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে লাখ লাখ উইপোকার মতো ‘অনুপ্রবেশকারী’দের বাংলাদেশের সীমান্তে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হতে পারে।
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মাটিতে ধর্মান্ধতা কখনোই চূড়ান্ত সাফল্যের মুখ দেখেনি। ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৫৬ শতাংশ আসন এবং উচ্চতর কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত মিত্র নিয়ে মোদি তার দ্বিতীয় মেয়াদ ব্যবহার করে সহিংস হিন্দুত্ববাদের আবাদ না করে বরং ভারতের আপামর জনগণের জন্য বাসস্থানের সংস্থান, কর্মসংস্থান, রাস্তা ও অবকাঠামো তৈরি করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক বিলগুলো পাস করতে পারতেন। কিন্তু ছয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর তিনি এখন তার বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত জোট তৈরি করেছেন, যা আগামী নির্বাচনে তার রাজত্বের সমাপ্তি ডেকে আনতে পারে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।