পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বায়ু দূষণের মতো শব্দ দূষণও এখন রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিনই বাড়ছে শব্দ দূষণের মাত্রা। যানবাহনের হর্ন, দ্রুতগতির শব্দ, এরসঙ্গে আছে আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনার কাজে ব্যবহৃত মেশিনের শব্দ, যা ক্রমাগত অসুস্থ করে তুলছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। একইসঙ্গে অসুস্থ মানুষরা ক্রমে ধাবিত হচ্ছে মৃত্যুর দিকে।
উন্নত বিশ্বে শব্দ দূষণ নিয়ে কড়াকড়ি আইন থাকলেও ঢাকায় এর কোনো প্রয়োগ নেই। রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে হরদম গাড়ি চালিয়ে গেলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। বিকট শব্দ রোধে ঢাকায় ২০১৯ সালের শেষ দিকে সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণার পরও শব্দদূষণ তো কমেইনি বরং আগের চেয়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে।
হাসপাতাল, স্কুল এবং আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র ও শিল্প এলাকা-চিহ্নিত করে যে শব্দসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার, তা মানছেনা কেউ। গাড়ির হর্ণ, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানায় অতিমাত্রায় শব্দদূষণের কারণে বধিরতার পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা। পরিবেশ অধিদফতরের জরিপ বলছে, দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি এরইমধ্যে কমেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণশক্তি কমা ছাড়াও মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে আইন ও বিধি রয়েছে, তাতে নিয়ম ভাঙলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা জরিমানা হবে। কিন্তু এর প্রয়োগ হয় না বললেই চলে। নাগরিক হিসেবে এসব অসুবিধা থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকারও যেন হারিয়ে ফেলেছে রাজধানীর বাসিন্দারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। অনিয়ন্ত্রিত শব্দ দূষণে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ভবিষ্যতে অসুস্থ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। সচেতনতাকেও দায়ী করেন তারা। তারা বলছেন, শব্দ দূষণ সম্পর্কে ধারণা নেই অধিকাংশ জনগণের। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর কোনো প্রয়োগ না থাকায় দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে জনগণের অচেতনতা ও অবহেলাকেও দায়ী করেন তারা। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং জনসচেতনতার অভাবই শব্দদূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান।
প্রাইভেটকার চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে ২২ বছর ড্রাইভারি করি, আইনকানুন সব জানি কিন্তু এই দেশে এসব নিয়ম চলবে না। হর্ন না দিলে অন্য ড্রাইভাররা শুনতে পাবে না। রাস্তায় অনেক বেশি শব্দের কারণে আমাদেরও জোরে হর্ন বাজাতে হয়। রাস্তায় শব্দ কম থাকলে আস্তে হর্ন বাজালেও পাবলিক শুনতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিরো পয়েন্ট এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ বলেন, বাসায় কথা বললে আমার স্ত্রী সন্তানরা বলে, আমি নাকি বেশি জোরে কথা বলি, এদিকে লো সাউন্ডে কথা বললে আমার কানে পৌঁছায় না।
নাক ও কান রোগ বিশেষজ্ঞ ড. কলিমুল্লা বলেন, শব্দদূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সঙ্কোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে আসে, বধির হওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়, মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকায় অকারণে হর্ন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতির কারণ শীর্ষক সুশীলসমাজ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে আলোচকরা বলেন, ঢাকার বাসিন্দাদের শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার বড় কারণ হর্নের আওয়াজ। যানবাহন চালকদের অযথা হর্ন বাজানোর কারণে ঢাকার শব্দদূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। হর্ন বাজানো বন্ধে আইন ও বিধিমালা থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগ সীমিত। হর্নের অযথা ব্যবহার বন্ধে আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।
সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেয়ারিক পলুশন স্টাডিজের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলছেন, ঢাকায় এলাকাভেদে আগের বছরের চেয়ে প্রতি বছর ৭ থেকে ১০ শতাংশ করে শব্দদূষণ বাড়ছে। কিছু এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু এই এলাকার আশপাশে শব্দদূষণ বেশি হচ্ছে। কোনো এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করার ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম দরকার সেগুলো না করে হঠাৎ নীরব এলাকা ঘোষণা দেওয়া হলেও কোন রেজান্ট আসবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলছেন, শব্দ দূষণের কারণে একদিকে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে উৎপাদনক্ষমতা কমেও ক্ষতি হচ্ছে। হর্নের ব্যবহারের সঙ্গে সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনার মতো বিষয় সংশ্লিষ্ট। সামগ্রিকভাবে হর্ন বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে, এটি সম্ভব হবে না। নীরব এলাকা ঘোষণার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার, সেগুলোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ ঢাকার বাসিন্দাদের মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানান মনোবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল ইউ এ চৌধুরী। তিনি বলেন, যানবাহনের অতিরিক্ত হর্ন শিশুদের শেখার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
শব্দ দূষণ বন্ধে তেমন অগ্রগতি নেই বলে স্বীকার করেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, শব্দ দূষণ বিধিমালার প্রয়োগে ব্যর্থতা রয়েছে। নীরব এলাকা ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে, যা হর্নের বড় উৎস। হর্নের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে বলেন জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে হর্ন বাজানো বন্ধে সাফল্য আসবে না। অযথা হর্ন বাজানো বন্ধে সঠিক পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নে নামতে হবে। নাগরিকদের মানসিকতাতেও বদল আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।