পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের নগরী। এ ছাড়া তীব্র যানজট, পানিদূষণ, নদী দূষণ সব মিলিয়ে এ শহরের পরিবেশ এখন ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর। ওয়াসার দূষিত পানি পানে সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা যেভাবে রাজধানীর নদী, পানি, বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে, তাতে একসময় এই এলাকার বাসিন্দারাও ঢাকা ছেড়ে চলে যাবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সিন্ধু নদী উপত্যকায় আবিষ্কৃত প্রাচীন বসতি হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো জনবসতিহীন বা মৃতনগরী হিসেবে পরিণত হয়েছিল। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো এ দুই নগরীর নদীসহ সামগ্রিক পরিবেশ জনগণের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠীকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়। রাজধানী চারপাশের নদীর যে ভয়াবহ দূষণ এবং ঢাকার সার্বিক পরিবেশের যে বিপর্যয় তাতে এ নগরী ছেড়েও জনগণকে হয়তো একদিন অন্যত্র চলে যাবে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে রাজধানী তার বাস যোগ্যতা হারাতে বসেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বে বাসের অযোগ্য ১০ শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। কয়েক বছর আগেই একটি আর্ন্তজাতিক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যে সব কারণে একটি শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার সবই ঢাকায় বিদ্যমান রয়েছে। গবেষণায় ঢাকার পানি-বাতাসসহ এর সার্বিক পরিবেশ কতটা অনিরাপদ তা উঠে এসেছে।
অতিসম্প্রতি দূষণ বিষয়ে বিশ্বের দুটি সংস্থা দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর একটি প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শহর বলা হয়েছে। আরেকটি প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের শহর হিসেবেও বিশ্বের সব নগরকে পেছনে ফেলে ঢাকা শীর্ষে রয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‹আইকিউএয়ার›-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের পর প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বায়ুদূষণে শীর্ষ স্থান দখলের পর ঢাকা শব্দ দূষণেও বিশ্বের শীর্ষ শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, শব্দ দূষণের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান প্রথম। দ্বিতীয় স্থানে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ। তালিকার শীর্ষ ৫ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজশাহী চতুর্থ এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি পঞ্চম। ঢাকা নগরী সহনীয় মাত্রার চেয়ে তিনগুণ তীব্রতার শব্দদূষণে আক্রান্ত। এর ফলে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে- ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ (১২-৩৫ বছর বয়সী) অত্যধিক শব্দযুক্ত বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ঢাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো এর আশপাশের নদী ও জলাশয়ের মারাত্মক দূষণ। ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদীগুলোর পানি বিষে ভরা। নানান ধরনের রাসায়নিকের পাশাপাশি গৃহস্থালী ও পয়:বর্জ্যে সয়লাবের কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু এসব নদীর পানি মানুষ তো দূরে থাক পশুপাখিও ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি এসব নদীতে জলজ প্রাণীও টিকে থাকতে পারছে না। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ আর বালু- রাজধানীকে ঘিরে রাখা এই চার নদীতে তরল বর্জ্য পরীক্ষ করে মিলেছে ভয়াবহ তথ্য। দ্রবীভূত অক্সিজেন পাওয়া যায়, প্রতি লিটারে মাত্র ০.৪ মি.গ্রা (আদর্শ মাত্রা ৪.৫-৮ মি.গ্রা)। রাজধানীর ৭০ ভাগ এলাকার পয়:বর্জ্য বুড়িগঙ্গাসহ চারটি নদীতেই সরাসরি যাচ্ছে। আর এই নগরে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পয়:বর্জ্য। এর মাত্র ত্রিশ ভাগ শোধনের ক্ষমতা ওয়াসার। ওয়াসার দূষিত পানি সেবনে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি বাদ দিয়ে ঢাকার নগরায়ন অব্যাহত থাকলে এক সময় ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার প্রাণ হচ্ছে বুড়িগঙ্গা। সেই সাথে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা এসব নদীকে কেন্দ্র করেও ঢাকা বিকশিত হয়েছে। অথচ দূষণে দখলে এসব নদীর আজ মরণ দশা। নদী যদি না বাঁচে তাহলে ঢাকাকেও বাঁচানো যাবে না। আর নদী বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। তা না হলে এ নগরীর বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব নয়। বর্তমানে যে সব মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে তা শেষ হলে ঢাকার বায়ুদূষণ কমে আসবে। শব্দদূষণও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু নদী দূষণ বন্ধ করতে অবশ্যই সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। আর নদীকে রক্ষা করতে না পারলে, নদীর মৃত্যু হলে নগরীর মৃত্যুও অনিবার্য।
এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার তীব্র যানজটে নগরবাসীর নভিশ্বাস অবস্থা। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে অতিষ্ট মানুষ। যান জটের ফলে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহর অকার্যকর শহরে পরিণত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বিকভাবে ভয়াবহ এসব দূষণের কবল থেকে ঢাকাকে রক্ষা না করা গেলে ঢাকা এক সময়ে স্থবির হয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, একটি নগর যেভাবে গড়ে ওঠার কথা, ঢাকাকে সেভাবে গড়া হয়নি। ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়তে সময় অপচয় না করে দ্রুত কাজ করতে হবে। এ ছাড়া সার্বিক পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে এর চারপাশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে। অন্যথায় ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।