পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়ার পরেও প্রকল্প পাশের জটিলতার দরুণ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে সারা দেশে দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো নতুন বছরের বই পৌঁছেনি। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিন থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ দান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নিজেদের চেষ্টায় কিছু কিছু মাদরাসায় নতুন বই দিতে পারলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অফিসিয়াল নির্দেশনা না দেয়ায় অনেক মাদরাসা শিক্ষকরা শত চেষ্টা করেও ২০২২ শিক্ষাবর্ষের নতুন বই সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের জন্য এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে দীর্ঘ দুই বছর বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ২০২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এরই মধ্যে মারা গিয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। তাদের এতিম শিশুরাও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ন্যূনতম মানবিক আচরণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দারুল আরকাম মাদরাসার ভুক্তভোগী একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের গত ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মুজিব শতবর্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পটিকে সরকারের অবদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ১৭ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও ওয়াকফ বিষয়ক কমিটির সভাপতি আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের করোনাকালীন বিগত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৫ হাজার টাকা হারে অনুদান প্রদান ও দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদানের জন্য জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু উল্লেখিত প্রকল্পটি অদ্যাবধি আলোর মুখ দেখেনি। বিগত দু’বছরে বেতন ভাতা না পাওয়ায় ৫ জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবার-পরিজনও প্রকল্প পাস না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। এদিকে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন হওয়ার অজুহাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মজীবীদের এমন দুরবস্থা দেখে খোদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনেই ইসলামিক আদর্শের অভাব অনুভব করছেন সচেতন মহল।
উল্লেখ্য, ইতিহাসে বিরল নজির স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর অধীনে ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুইটি করে একযোগে ১০১০টি দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এতে জেনারেল ও আরবি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার যুগোপযোগী সমন্বয়ে পাঠদানের মাধ্যমে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে দেশব্যাপী যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে প্রকল্পটি। ইসলামের সর্বপ্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামানুসারে এটির নাম দেয়া হয় ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা।’ প্রতিটি মাদরাসার সাইনবোর্ডে ‘প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ লেখা রয়েছে। দারুল আরকার মাদরাসাগুলো মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হলেও পরবর্তীতে ২০২০ সালে আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলে গণশিক্ষা প্রকল্প থেকে এটিকে আলাদা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চন্দ্রাখালি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার ভূমিদাতা ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ আব্দুল ওহাব গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এলাকায় উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের আশা নিয়ে নিজে ১০ কাঠা ভূমি দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করে অবকাঠামোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মাত্র দুই বছর শেষে প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পটি পাস না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ঋণগ্রস্ত হয়ে আর্থিক অনটনে রয়েছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তিনি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা শীর্ষক প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বকেয়া বেতনভাতা প্রদান ও অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের নতুন বই প্রদানসহ শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চট্টগ্রাম লোহাগাড়া পূর্ব কলাউজান মাসুদা খাতুন দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার ভূমিদাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ আইনবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন বিধায় আমরা ৫ শতাংশ ভূমি দিয়ে ও নিজস্ব অর্থায়নে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অবকাঠামো নির্মাণ করে মাদরাসায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে দারুল আরকাম মাদরাসাকে মূল প্রকল্প থেকে আলাদা করে ভূমিদাতা, এলাকাবাসী, লক্ষাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হয়রানির শিকারে পরিণত করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে প্রকল্পটি অদ্যাবধি পাস না হওয়ায় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, স্থায়ী অবকাঠামোসহ ১০১০টি প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ একটি শিক্ষা প্রকল্প শুধু দুই বছরের জন্য প্রতিষ্ঠার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি ইসলামি শিক্ষা খাতে সরকারের এই অবদানকে স্থায়িত্ব দিতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।