পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিজ্ঞানের বদৌলতে সারাবিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন শক্তিশালী গণমাধ্যমে রূপলাভ করেছে। এমন কোনো বিষয় নেই যা ফেসবুক, বøগ, টুইটারে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় তুলছে না। জনমত গঠনে ফেসবুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলছে। ক্রিকেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় বইছে। সেই ঝড়কে ছাপিয়ে গেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের অপকর্ম বিতর্ক। ইসলাম ধর্মের একমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইফায় অচলাবস্থা, ডিজির ক্ষমতা, দুদকের নিষ্ক্রিয়তা, এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অসহায়ত্ব সবকিছু নিয়েই মিডিয়া ও ফেসবুকে চলছে সমালোচনা-বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে যুগ্ম-সচিব পদ মর্যাদার একজন সরকারি চাকরির ডিজির কাছে সরকার কি অসহায়? ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি না ইফার ডিজির?
‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’ প্রবাদটি যুতসই উদাহরণ হতে পারে ইফার ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের ক্ষেত্রে। ডিকশনারিতে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’ প্রবাদটির ভাবার্থে বলা হয়েছে ‘আসল লোকের চেয়ে তার অনুচরের.... প্রভাব....হাকডাক’ ইত্যাদি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব। নেতৃত্বের গুণাবলী কাজে লাগিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গেই মন্ত্রণালয়কে করেছেন গতিশীল। তিনি নিজেই ইফার ডিজির বিরুদ্ধে গোপনে ৫০টি ফাইল (নথিপত্র) সরানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলে বলেছেন ‘শুভ বুদ্ধির উদয় হলে ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল নিজেই পদত্যাগ করবেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক সময় ছিল দেশের আলেম সমাজের জন্য উন্মুক্ত জায়গা। সব মত ও পথের আলেম, ইসলামী স্বলার ইফায় নির্বিঘেœ যাতায়াত করতেন; বই লেখালেখি, অনুবাদ ইত্যাদি করে ইফাকে সমৃদ্ধ করতেন। কিন্তু সামীম আফজাল যোগদানের পর থেকে বরেণ্য আলেমদের ইফামুখী হতে দেখা যায় না। হাতে গোনা কিছু আলেম সেখানে যাতায়াত করেন। ইসলাম ধর্মের গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বর্তমানের বিতর্কিত ডিজি দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মীয়-স্বজন পুনর্বাসন এবং স্বেচ্ছাচারিতায় তীর্থকেন্দ্রে পরিণত করেছেন। মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ডিজির পদত্যাগে’র দাবিতে আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছুই থোরাই কেয়ার করছেন ডিজি। বাঁশের চেয়ে সত্যিই তো কঞ্চি বড়!!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ইসলাম ও ইসলামী জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার- যার ভিত্তি হবে পবিত্র কুরআন ও হাদিস। এ ছাড়াও ইসলামের সমুন্নত আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসার কার্যক্রম বেগবান করা; সারাদেশের মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র, একাডেমী ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ, ইসলামী সাংস্কৃতি, চিন্তা, বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদানের উপর গবেষণা পরিচালনা; ইসলামের মৌলিক আদর্শ বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ববোধ, পরমতসহিষ্ণতা, ন্যায়বিচার প্রভৃতি প্রচার ও প্রচার কাজে সহায়তা করা; সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ইসলামী মূলোবোধ ও নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের সুপারিশ; ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিমালা জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষে ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, আইন ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কিত গবেষণার আয়োজন, প্রসার ঘটানো, জনপ্রিয় ইসলামী সাহিত্য সুলভে প্রকাশ করে সেগুলোর বিলি-বণ্টনকে উৎসাহিত; ইসলাম ও ইসলামের বিষয় সম্পর্কিত বই-পুস্তক, সাময়িকী ও প্রচার পুস্তিকা অনুবাদ করা, সংকলন করা ও প্রকাশ করা; ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, আইন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়াদির উপর সম্মেলন, বক্তৃতামালা, বির্তক ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন এবং ইসলাম বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার ও পদক প্রবর্তনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু গত ১০ বছরে ইফার ডিজি এগুলোর কয়টি করেছেন?
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতার হাতে গড়া সেই প্রতিষ্ঠান ইফাকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে ২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হয়ে আসেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। তখন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ইচ্ছেমতো পরিচালনা-ব্যবহার করছেন। দেশের প্রথিতযথা আলেমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে অনুগত নিয়ে ‘ব্যক্তির ইচ্ছায় কর্ম’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। যে হেফাজতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী মাতা’ খেতাব দিয়েছেন, সেই হেফাজতের বিরুদ্ধে বিয়োদ্গারে ইফা প্রচুর টাকা ব্যয় করেছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছেন। ইফায় দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট।
ইফাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার কৌশল হিসেবে হঠাৎ সামীম মোহাম্মদ আফজাল আওয়ামী লীগরা হয়ে গেছেন। তার কর্মকান্ডে অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগারও লজ্জা পান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় ‘হাইব্রীজ’, ‘কাউয়া’ ‘বসন্তের কোকিল’ আরকি। তিনি স্বার্থান্ধ কিছু লোককে নিয়ে ‘কোটারী’ করে দেশের প্রকৃত ইসলামী স্বলার, আলেম-ওলামাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিমুখ করেছেন। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাই শুধু নয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নিজের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। নিয়ম ভঙ্গ করে চাকরি দিয়েছেন শ্যালিকা, ভাতিজা, ভাতিজা বৌ, ভাগিনা ও ভাগ্নিসহ অনেক আত্মীয়-স্বজনকে। ২১ জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দিয়ে ইফাকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। নানা দুর্নীতি অনিয়মের সুনির্দিষ্ট চিত্র তুলে ধরে ২০১৬ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। দুদক দুর্নীতি তদন্তও শুরু করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে তদন্ত এগোয়নি।
ইফা মহাপরিচালকের (ডিজি) পদত্যাগের দাবিতে কয়েকদিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে। সামীম আফজালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি চাকরি হয়েও তিনি মন্ত্রণালয়কে তোয়াক্কা করছেন না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডিজি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত অফিস করছেন না। তাকে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পর গুজব উঠে সামীম আফজাল স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। কিন্তু ১৫ জুন শনিবার বন্ধের দিন তিনি আগারগাঁওস্থ কার্যালয় থেকে কিছু নথিপত্র নিয়ে চুপিসারে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাধার মুখে পড়েন। পরের দিন অফিসে গেলে তাকে ঘেড়াও করেন সংস্থাটির বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের এক দফা দাবি সামীম আফজালকে পদত্যাগ করতে হবে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হন। ১৭ জুন সংস্থাটির পরিচালক-প্রকল্প পরিচালক এমন ২০ জন বৈঠক করেন। সেখানে ইফা’র ২০ জন পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় তারা অনুরোধ করবেন, সামীম আফজাল যেন মান সম্মান নিয়ে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন।
গত ১০ জুন ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ইফা ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। নোটিশে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন অবহিত করা হবে না তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়। কিন্তু সামীর আফজাল ‘লা’ জবাব। উল্টো নানা ভাবে নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব দেখিয়ে নিজের পদ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। যার কারণে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায় ‘শুভ বুদ্ধির উদয় হলে সামীম আফজাল নিজেই পদত্যাগ করবেন।’ যুগ্ম-সচিব পদ-মর্যাদার একজন সরকারি কর্মকর্তার ক্ষমতা কী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে বেশি? সত্যিই কি সরকার ইফার ডিজির দাপটের কাছে অসহায়? এই প্রশ্ন এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে পোস্ট, লাইক, শেয়ার হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।