পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী জুড়ে চলছে যানজটের তান্ডব। এ তান্ডবে ১০ মিনিটের পথ ৩ ঘণ্টায় অতিক্রম করাও কঠিন হয়ে ওঠে। রাজধানীর যানজট ঢাকার দেড় কোটি মানুষের জন্য শুধু নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্যই অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রাজধানীতে যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা, বছরে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তাই নিরাপত্তার কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত নয়। ম্যারাথনের মতো ক্রীড়ার আয়োজন রাজধানীর বাইরে করার বিষয়েই আগামীতে ভাবতে হবে। কারণ একেকটা অগ্রাধিকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘ সময় অচল করে দেয়। যানজট যে রাজধানীবাসী বা মোটাদাগে দেশবাসীর জন্য কতটা অভিশাপ হয়ে উঠেছে প্রতিদিন অন্তত ৫০ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার বিষয়টিতে তা স্পষ্ট হয়। যানজট নিরসনে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণের চেয়েও ট্রাফিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে রাজধানীজুড়ে ফ্লাইওভারের জাল বুনলেও কোনো কাজ হবে না। যানবাহন চালকদের যাচ্ছেতাই আচরণ রাজধানীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। ফুটপাথ দখল করে দোকানপাট বসানো, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং যানজটে মদদ জোগাচ্ছে। রাজনৈতিক টাউটরাও যানজটের জন্য অনেকাংশে দায়ী। ফুটপাথ দখল করে যেসব দোকানপাট বসে তার প্রতিটি থেকে রাজনৈতিক টাউটরা ভাড়া আদায় করে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোও কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। যানজট নিরসনে প্রাইভেট গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও জরুরি। কোচিং সেন্টারের অপচর্চা যানজটের অন্যতম কারণ। তবে সবকিছুর আগে চাই সদিচ্ছা। বাস-ট্রাক মালিকদের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের গোপন সমঝোতা বন্ধও যানজট নিরসনের জন্য জরুরি। দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট জাতির অগ্রগতির জন্য বিরাট বাধা।
দিন যতই যাচ্ছে জটিলতাও প্রকট হচ্ছে। এই যানজটে একদিকে যেমন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল অর্থনেতিক ক্ষতিও হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে স্বাস্থ্য এবং মানসিক অবস্থারও। দেখা যায়, ছোট ছোট সড়কে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চালকদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে ছোটখাটো যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। সঙ্গে প্রধান প্রধান সড়কে অতিমাত্রায় স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানোয় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এর প্রভাব ছোট ছোট সড়কে পড়ায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সকল নগরবাসীকে। কিছু মহল মনে করে, ঢাকার যানজট শুধু সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অব্যবস্থাপনার ফল নয়। যানজটের আরও কয়েকটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই মহানগরে সড়কের তুলনায় যানবাহনের যে প্রাচুর্য সৃষ্টি হয়েছে, তা একেবারেই অস্বাভাবিক। বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ কতসংখ্যক যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারে, তা বিবেচনায় না নিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন নিবন্ধন করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। তারপর বিভিন্ন সড়কে রোড ডিভাইডেশনের কাজগুলো এক সঙ্গে সচল রাখায় অস্বস্তি সৃষ্টি হয়ে গেছে। প্রতিদিন অফিসের বেঁধে দেওয়া সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এভাবে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘ যানজটে বসে থাকায় মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।
পৃথিবীর অনেক ধনী ও উন্নত দেশের বড় বড় শহরে যানজটের সমস্যা আছে, কিন্তু ঢাকা মহানগরের যানজট সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি স্বল্প সময়ে সৃষ্টি হয়নি। আমাদের চোখের সামনে এই সমস্যা পুঞ্জীভূত হতে হতে আজ এই পরিণতি। কিন্তু এটাও শেষ পরিণতি নয়। কারণ, যানজট ক্রমেই আরও বেড়ে চলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে স্পষ্টতই আরও বাড়বে। কবে, কোন দূর ভবিষ্যতে গিয়ে যানজট বৃদ্ধি থেমে যাবে, তা এ মুহূর্তে বলা প্রায় অসম্ভব।
যানজট কিছুমাত্র কমাতে চাইলে এই গোড়ার সমস্যাটিই সবকিছুর আগে সমাধান করতে হবে। প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে ঢাকা মহানগরে মোট কতসংখ্যক যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে, পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনে নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা নির্ধারিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে বড় আকারের বাসের সংখ্যা বাড়ানোর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত এটা বলে আসছেন। ঢাকা মহানগরের মোট সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশজুড়েই চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অথচ এগুলো বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু ৫০ শতাংশ বড় বাসে প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। তাহলে আমাদের করণীয় কী, তা খুবই স্পষ্ট। উন্নত মানের ফ্র্যাঞ্চাইজভিত্তিক বাসসেবা চালু করাই আমাদের সর্বোত্তম বিকল্প। এ ছাড়া যা করা দরকার, তা হলো ফুটপাতগুলোকে হাঁটাচলার উপযোগী করা এবং সড়কের দুপাশে যানবাহন পার্কিং পুরোপুরি বন্ধ করা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।