যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
ভেষজ শাস্ত্রে ঔষধি গাছ হিসেবে অর্জুনের ব্যবহার অগণিত। বলা হয়ে থাকে বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর একজন চিকিৎসক থাকা একই কথা। এর ঔষধি গুণ মানব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই। শারীরিক বল ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবত করার ভেষজ রস হিসেবে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ও বেদ-সংহিতায়। তারপর যতদিন যাচ্ছে অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাসিত হচ্ছে। নিম্নে অর্জুনের কিছু উপকারী দিক বর্ণনা করা হলো-
হৃদরোগ : অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগ। অর্জুন ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এই কো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্টএ্যাটাক প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়। অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে। বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। বাকলে রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুঁড়া ১-২ গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
অ্যাজমা : অর্জুন ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বা পায়েসের সাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যাজমা রোগের স্থায়ী সমাধান হবে।
ক্ষয় কাশে : অর্জুন ছালের গুঁড়া, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাশির উপকার হতো।
হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে : অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে মচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়। তবে সেই সাথে অর্জুন ছালের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো হয়।
ত্বকের পরিচর্যা : ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেচতার দাগ দূর হয়।
বুক ধড়ফড় : যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম, একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকাল বেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো-ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে।
রক্তপিত্তে : মাঝে মাঝে কারণে বা অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে। সেক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম ছাল রাত্রিতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ফোঁড়া : ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
ক্ষত বা ঘা : শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যায়।
কানের ব্যথায় : কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার করা হয়। কচি পাতার রস কানের ভিতরে দুই ফোঁটা করে দিলে কানের ব্যথা ভালো হয়।
যৌন রোগ : যাদের মধ্যে যৌন অনিহা দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল চূর্ণ উপকারী। এই ছাল চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এই রোগ দূর হয়। এছাড়া যাদের শুক্রমেহ আছে তারা অর্জুন ছালের গুঁড়া ৪-৫ গ্রাম ৪-৫ ঘণ্টা আধা পোয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে, তারপর ছেঁকে ওই পানির সাথে ১ চামচ শ্বেতচন্দন মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
রক্ত আমাশয়ে : ৪-৫ গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
হজম ক্ষমতা বাড়ায় : ডায়রিয়া বা পেটের অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে অর্জুনের ছাল ৪৫-৩০ গ্রাম করে খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও অসুবিধা দূর হয়।
মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহে : অর্জুনের ছাল এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির রক্তপাতও বন্ধ করে। এছাড়াও অর্জুন ছাল সংকোচক ও জ্বর নিবারক হিসেবেও কাজ করে।
এছাড়াও এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। ইদানিং অর্জুন গাছের ছাল থেকে ‘অর্জুন চা’ তৈরি হচ্ছে যা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
আলমগীর মতি
হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক
চেয়ারম্যান মডার্ন হারবাল গ্রুপ
মোবাইল: ০১৯১১৩৮৬৬১৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।