চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
॥ শেষ কিস্তি ॥
মানবাত্মার মূল রোগ ও তার চিকিৎসা
‘কোরআন ও সুন্নাহ’ মানবাত্মার মূল ব্যাধি হিসাবে যা চিহ্নিত করেছে তা হল, আপন প্রতিপালককে না চেনা ও তার থেকে বিমুখ থাকা বা রবের কুফুরী করা এবং তার পরিপূর্ণ গোলামীতে অস্বীকৃতি প্রদান করা। রাসূল (সা.) স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন তা প্রত্যাখ্যান করা। দুনিয়ার প্রতি আসক্তি ও তার দিকে ধাবিত হওয়া এবং পরকাল থেকে গাফেল, অস্বীকার ও বিমুক থাকা। এটাই ব্যাধির উপাদান। যার মধ্যে কুফুরী থাকবে তার মধ্যে এসব ব্যাধি থাকবে। যার মধ্যে ঈমান আসবে তার থেকে এসব রোগ দূরে সরে যাবে। যার মধ্যে ব্যাধির সব উপাদান থাকবে, তার মধ্যে সব ধরনের ভ্রান্ততা ও বিশৃংখলা থাকবে। যার মাঝে ব্যাধির উপাদান যতটুকু বিদ্যমান থাকবে ভ্রান্ততা ও ফাসাদ তার মাঝে ততটুকু থাকবে।
ব্যাধির মূল চিকিৎসা : আল্লাহর প্রতি রব এবং ইলাহ হিসাবে ঈমান রাখা এবং তাগুতকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা। আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া আর দুনিয়া থেকে বিমুখ হওয়া। সীরাতে ইবনে হিসামের বর্ণনা মতে আমাদের নবী (সা.) যখন মক্কার নেতা আবু তালিবের নিকট আসলেন তখন আবু তালিব বলল, তুমি কী চাচ্ছ! রাসূল (সা.)উত্তর করলেন, তোমরা বল! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ছেড়ে দাও যাদের তোমরা উপসনা করছ। আল্লাহ তাআ’লা সব নবীকেই এই একই মিশন নিয়ে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেন “নিশ্চই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোন না কোন রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশন দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর”(সূরা নাহল-৩৬)।
মাদউর সংশয় ও সন্দেহ নিরসন করা : দাওয়াতে দীনের ক্ষেত্রে মাদউর অন্তরে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় সেগুলো দূর করে দিতে হবে। সন্দেহ তিন ধরনের হতে পারে। ১। দায়ীর প্রতি সন্দেহ ২। আলোচ্য বিষয় নিয়ে সন্দেহ ৩। মাদউ সম্পর্কীয় সংশয়।
উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন : দাওয়াতে দীনের তৃতীয় নাম্বার পদ্ধতি হল, মাদউকে দীন ও সত্য গ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা এবং হক থেকে বিমুক ও দীন গ্রহণ না করলে আল্লাহর যে আজাব ও শাস্তির ঘোষণা এসেছে সেগুলো শুনিয়ে ভয় প্রদর্শন করা।
তা’লীম ও তারবিয়াত : যারা দাওয়াত কবুল করবে তাদেরকে দীনি শিক্ষা দিবে এবং আত্মশুদ্ধির দীক্ষা দিবে। তাদের চরিত্র সংশোধন করবে, যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলবে। দৃঢ় ঈমান ও উন্নত আমল যাতে তাদের মাঝে এসে যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। উন্নত মনোবল সম্পন্ন ও রুহানী কাফেলা হিসেবে তৈরি করবে। ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য যে কোন ত্যাগ দেয়ার মানসিকতা যাতে তাদের মনে সৃষ্টি হয় সেভাবে তাদেরকে গড়বে।
দাওয়াতে দীনের মাধ্যমসমূহ : দাওয়াতের মাধ্যম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যে সব ব্যবস্থাপনার দ্বারা দায়ী দাওয়াতের কাজে সাহায্য নিতে পারে। এমন বিষয়াদি দু’প্রকার (১) সফল প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যে কোন আসবাব গ্রহণ করা। (২) এমন কিছু ব্যবস্থাপনা যা সরাসরি দাওয়াতের উসিলা বা মাধ্যম।
সফল প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যেসব আসবাব গ্রহণ করতে হবে:
(১) সচেতনতা, সতর্কতা ও আত্মরক্ষার আসবাব গ্রহণ করা। সূরা নিসার ৭১নং আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা বলেন “হে মুমিনগণ! তোমরা শত্রুর সাথে লড়াইকালে নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ সঙ্গে রাখ”। এবং সূরা নিসার ১০২নং আয়াতে ভিতির নামাজের বর্ণনা দ্বারাও এর দলীল পাওয়া যায়। সজাগ-সতর্কতার সাথে সাথে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
সতর্কতার বিষয় : (ক) দায়ী পাপাচার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। (খ) পরিবার ও সন্তানাদির ফিৎতা থেকে সতর্ক থাকতে হবে
(গ) আত্মপুজা থেকে সতর্ক থাকতে হবে (ঘ) মুনাফিক এবং কাফিরদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
(২) অন্যের সাহায্য গ্রহণ করা। (ক) আপন জনের সাহায্য নেয়া। (খ) অমুসলিম থেকে শর্ত সাপেক্ষে সাহায্য নেয়া।
(৩) দাওয়াতের জন্য নীতিমালা তৈরি করা। (ক) ব্যক্তিগত দাওয়াতের জন্য নীতিমালা। (খ) সমষ্টিগত দাওয়াতের জন্য নীতিমালা।
(গ) সংগঠনের নীতিমালা ইসলামী শরীয়তের ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে। (ঘ) আমীর নিযুক্ত করতে হবে। (ঙ) আনুগত্য থাকতে হবে। (চ) পরামর্শের বিধান থাকতে হবে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক বিকিরণ; শিক্ষা পরিচালক, দারুল উলুম মহিউস্সুন্নাহ নূরপুর মাদরাসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।