চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
॥ তিন ॥
মাদউর অধিকার : মাদউর অধিকার হল দায়ী তার নিকট এসে তাকে দীনের পথে ডাকবে। এমন হতে পারবে না যে, দায়ী ঘরে বসে বসে মাদউর অপেক্ষায় থাকবে। ইসলামের প্রথম দায়ী রাসূলে কারীম (সা.) কুরাইশদের মজলিসে যেতেন এবং তাদেরকে ডাকতেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিকট যেতেন যখন তারা হজ্জের মৌসুমে মক্কা আসতেন এবং তাদেরকে ডাকতেন আর তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন যখন তারা মক্কা আসত।
দায়ী মাদউর নিকট কেন যাবে :
(১) রাসূল (সা.) এজন্য যেতেন যে, তার দায়িত্ব ছিল দীনের দাওয়াত পৌঁছানো। আল্লাহ বলেন “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা প্রচার কর” (সূরা মায়িদা-৬৭)।
(২)আত্মমানবতার প্রতি রাসূলের সদয় মনোভাব এবং তাদের হিদায়াতের প্রতি লোভ।
(৩) ইসলাম থেকে দূরে থাকাটা তাদের আত্মার ব্যাধি। আত্মার ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি তাদের রোগ নির্ণয়ে অক্ষম, এমনকি তাদের রোগের অনুভূতিও ছিল না। তাই রাসূলের পক্ষ থেকে তাদের রোগ সম্পর্কে জানিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়েছিলো।
(৪) মুসলিম দায়ীও রাসূলের অনুসরণ করবে এবং দাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূলের নীতি গ্রহণ করবে। দায়ী কোন মানুষকে অপমান করতে পারবে না
মাদউর দায়িত্ব : আল্লাহর দিকে যখন ডাক আসবে তখন সে ডাকে সাড়া দেয়া এবং দীন কবুল করা। দায়ীর হিদায়াত মত চলা।
মাদউ চার প্রকার
প্রথম প্রকার : ক্ষমতাশীন ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এদেরকে কোরআনের ভাষায় মালাউন বলা হয়েছে। ক্ষমতাশীল রাজা-বাদশারা দাওয়াত খুবই কম কবুল করে। কারণ তাদের মধ্যে অহংকার এবং দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ক্ষমতার লোভ কাজ করে।
দ্বিতীয় প্রকার : জন সাধারণ ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ। এরা হল প্রথম প্রকারের বিপরিত যারা রাজা -বাদশাদের অনুগত। এবং এরা সংখ্যাগরিষ্ট সাধারণ জনমানুষই দীন কবুল করে। ‘হারকাল’ আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য কারা করছে সাধারণ মানুষ না নেতৃস্থানীয়রা? আবু সুফিয়ান জবাব দিল, সাধারণ মানুষ। হারকাল বলল, সাধারণ মানুষরাই রাসূলের আনুগত্য করে।
হযরত সালেহ (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন “তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতৃবর্গ, যে সকল দুর্বল লোক ঈমান এনেছিল, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, তোমরা কি এটা বিশ্বাস কর যে, সালেহ নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল? তারা বলল, নিশ্চয় আমরা তো তার মাধ্যমে প্রেরিত বাণীর উপর ঈমান রাখি”। সে দাম্ভিক লোকেরা বলল, তোমরা যে বাণীতে ঈমান এনেছ আমরা তো তা প্রত্যাখ্যান করি” (সূরা আ’রাফ-৭৫,৭৬)।
তৃতীয় প্রকার : মুনাফিক। মুনাফিক হল তারা, যারা প্রকাশ করে এমন বিষয় যা অন্তরে বিদ্যমান নেই। এমন করার কারণ হল দু’টি-
১। কুফুরী ২। কাপুরুষতা। মুনাফিক কাফিরের থেকে মারাত্মক।
মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হল :
১। মুনাফিকের আত্মা ব্যাধিগ্রস্ত। ২। ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। ৩। ঈমানদারকে অজ্ঞ ও মুর্খ মনে করে। ৪। মুনাফিকরা বিবাদকারী ও ঝগড়াটে। ৫। কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, আর ঈমানদারদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে। ৬। আল্লাহ এবং আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। ৭। মুনাফিকরা তাদের মুকাদ্দমা তাগুতের কাছে নিয়ে যায়। ৮। মুমিনদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করে। ৯। মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা শপথ করে। হাদিসে এসেছে, মুনাফিকের আলামত তিনটি-
(ক) মিথ্যা বলা (খ) আমানতের খেয়ানত (গ) অঙ্গিকার ভঙ করা।
৯। অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে। ১০। আহলে হককে তিরস্কার করে। আহলে হকের আমল ও ইনসাফকে তাচ্ছিল্য দৃষ্টিতে দেখে।
১১। মন্দ কাজের নির্দেশ করে এবং সৎকাজে বাধা দেয়। ১২। প্রতারণা করে, অঙ্গিকার পুরো করে না।
১৩। মুমিনদেরকে দোষারোপ করে এবং তাদের হেয় করে, তাদেরকে নিয়ে বিদ্রুপ ও তামাশা করে। ১৪। জিহাদ বর্জন করে।
১৫। মুমিনদের ক্ষতি সাধন করে।
চতুর্থ প্রকার : আল্লাহর নাফরমান ও অবাধ্য। অবাধ্য দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছে কিন্তু আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানে না। এদের কেও তো বেশি নাফরমানি করে আবার কেউ কম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।