পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের নদনদী ও জলাভূমিগুলো দেশের প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে। নদনদীর পরিবর্তনশীল প্রকৃতি আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজচিত্রে যেমন বড় ধরনের প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে, একইভাবে এর প্রভাব ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের নাগরিক জীবনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ও তলিয়ে যাওয়ার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার একর ফসলের ক্ষতি হয়। নদীভাঙ্গনে হাজার হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে শহরের বস্তিগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। নদীভাঙ্গন রোধ এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর যথাযথ ও স্থায়ী সংস্কারের উপর দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামোর বিন্যাস অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। নদনদীর ভাঙ্গনরোধ এবং বন্যানিয়ন্ত্রণে জাতীয় উন্নয়ন বাজেটে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও এ খাতের সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা এসব প্রকল্পের সুফল থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছে। এসব খাতে দুর্নীতির এ চিত্র দশকের পর দশক ধরে আলোচিত হলেও এসব দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ কখনোই দৃশ্যমান হয়নি।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নদীখনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বাঁধ সংস্কারে গৃহিত প্রকল্পগুলোর নানা রকম দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার চিত্র উঠে এসেছে। উজান থেকে পাহাড়ি নদীর বয়ে আনা পলিমাটি আমাদের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ। সঠিক ব্যবস্থাপনায় এর যথাযথ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের কৃষিব্যবস্থাকে আরো সমৃদ্ধ ও পরিবেশবান্ধব করে তোলা সম্ভব। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে একদিকে এর সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি অন্যদিকে জনগণের রাজস্ব থেকে বরাদ্দ প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়নবোর্ডের প্রকল্পের টাকা পানিতে যাওয়া মানে এর সাথে জড়িত ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে দুর্নীতি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্নীতির এই দুষ্টচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে না পারলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অসম্ভব। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও ঠিকাদারি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অহেতুক সময় ক্ষেপণ করে বর্ষার সময় বাঁধগুলো ভেঙ্গে বা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সামনে রেখে তড়িঘড়ি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বড় ধরনের ফাঁকিবাজি করা হয়। নদীভাঙ্গন রোধ ও বাঁধ সংস্কারে প্রতি বছর এমন এড-হক ভিত্তিক প্রকল্পের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদীর উপর একতরফা বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদনদীগুলোকে অস্তিত্বের সংকটে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় কার্যকর নদী ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। শুষ্ক মওসুমে নদীর ড্রেজিং, ভাঙ্গনকবলিত এলাকাগুলো সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, বেড়িবাঁধ সংস্কার ও হাওরের ফসল রক্ষায় গৃহিত প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কুফল ভোগ করছে দেশের সব মানুষ। পানি উন্নয়নবোর্ড গত ৫ বছরে গৃহিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার দ্বিগুণ সময়েও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। আড়াই বছরে সমাপ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান একটি প্রকল্প ২ বছরে শতকরা ৪০ ভাগই শেষ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রকল্পের পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও অন্যান্য প্রকল্পের অবস্থাও তথৈবচ। অর্থাৎ শুধুমাত্র কারণ দর্শানো নোটিশে কোনো কাজ হচ্ছে না। জনগণের রাজস্ব থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং কোটি কোটি মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে তবেই এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে। নির্ধারিত সময়ে প্রাক্কলিত বরাদ্দে যথাযথ মান ও নকশা বজায় রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোরদার উদ্যোগ নিতে হবে। নদনদীর ড্রেজিং ও পলিমাটি সংরক্ষণ, ভাঙ্গনরোধ, শুষ্ক মওসুমে সেচ প্রকল্পগুলোতে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার টেকসই ও স্থায়ী ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার সময়মত প্রকল্প শেষ করতে পারছে না তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে পরীক্ষিত ও সক্ষম ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিতে হবে। নদী, পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।