Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে লোপ পেতে পারে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি

২০২২ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের অস্ত্র খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের নির্বাচনকে উল্টে দেওয়ার এবং একজন অনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বসানোর প্রচেষ্টায় সে বছরের ৬ জানুয়ারির সহিংস দাঙ্গার পুরোটা জুড়ে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের ছাপ ছিল লক্ষ্যনীয়। কিন্তু অসফল আন্দোলনটির মূল শেকড়টি সেই দিনের ঘটরার চেয়েও অনেক গভীরে নিহিত, যা বদলে দিতে পারে এবছরের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল এবং ধর্ম ও বর্ণ নিরপেক্ষ মার্কিন সংবিধান।

গৃহযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে উৎখাত করার সবচেয়ে গুরুতর এই প্রচেষ্টাটি যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাব ছাড়া সম্ভব হত না। এক বছর পর, বর্তমান সময়ে দাঙ্গাকারীরা একটি বিষয় শিখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদি তারা পরের বার কঠোরভাবে মাঠে নামে, তবে মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতিশ্রæতিটিকে অতীতে পরিণত করার প্রচেষ্টাটি সফল হতে পারে। এটা অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক যে, ৬ জানুয়ারির সহিংসতার অনুঘটকরা সাংবিধানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর হামলা চালিয়ে নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এতে বোঝা যে, তাদের আনুগত্য ‘জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’ প্রতি নয়, বরং সহিংতাপন্থী খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের প্রতি।

সর্বসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ভোটার সংখ্যা গড়ে তোলা, যারা তার নির্বাচনে কারচুপির প্রতারণামূলক দাবিতে বিশ্বাস করেছিল। তারা বিশ্বাস করে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈধতা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধ, গণতন্ত্রের প্রতি নয়। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় ২০২১ সালের জুনে অনুষ্ঠিত রোড টু মেজরিটি সম্মেলনে রাজনৈতিক ভাষ্যকার দিনেশ ডি’সুজা, ধর্মীয় কট্টর কৌশলবিদ রাল্ফ রিডের সাথে কথোপকথনে বলেছিলেন, ‘যারা এখন সত্যিকার অর্থে ভুক্তভোগী, তারা ৬ জানুয়ারির আন্দোলনকারীরা। রিড প্রতিক্রিয়ায় মাথা নেড়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি মনে করি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের আন্দোলনকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন।’

আন্দোলনের নেতারা এখন পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টার ভিত্তি তৈরি করতে কাজ করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন রক্ষণশীল গির্জায় যাজকদের দলে দলে ‘ফেইথ উইন্স’ বা ‘বিশ^াস জয়ী হয়’ নামে একটি উদ্যোগের মাধ্যমে সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ফেইথ উইন্স নির্বাচনের সংশয় প্রকাশ করে যাজকদের বাইবেলের মূল্যবোধকে ভোট দেওয়ার জন্য একজোট হওয়া আহŸান করে। এমনকি, এই সহিংস আন্দোলনের নেতারা ট্রাম্পবাদী শাসনের সময়কালকে স্বর্ণযুগ হিসাবে বিবেচনা করে তা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মার্কিন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ চাড কনেলি, সেপ্টেম্বরে শ্যান্টিলিতে একটি ফেইথ উইন্স ইভেন্টে সমবেত যাজকদের বলেন, ‘আপনার পরিচিত প্রতিটি যাজককে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের গির্জায় আসা ১ শ’ শতাংশ মানুষ ভোট দিচ্ছেন, এবং বাইবেলের মূল্যবোধকে ভোট দিচ্ছেন।’

খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী সম্মেলনে ৬ জানুয়ারীর আন্দোলনকারীদের পক্ষ নেয়া এবং এমনকি তাদের বীরত্ব প্রচার করা হয়। তারা খ্রিস্টান ধর্ম ভিত্তিক স্কুলগুলির জন্য নিশ্চিতভাবে অনুদানের অধিকার পাওয়ার জন্য রাজ্যগুলির আইনসভা বা সুপ্রিম কোর্টের সাহায্যে রায় নেয়া চেষ্টা করছেন, যাতে তাদের পাঠ্যক্রম যতোই নীতি বিরুদ্ধ বা বৈষম্যম‚লক বা ধর্মান্ধ হোক না কেন, তার যেনো করদাতাদের সাম্প্রদায়িক স্কুলে অর্থায়ন করতে বাধ্য করতে পারেন।
ফেইথ অ্যান্ড ফ্রিডম কোয়ালিশন এবং জিক্লাগ গ্রæপের মতো জাতীয় সংগঠন, যারা দাতা এবং ধর্মীয় অধিকার কর্মীদের সাথে বিশিষ্ট রিপাবলিকান নেতাদের একত্রিত করে সমাবেশ করেন এবং তারা ‘সেভেন মাউন্টেন্স’ এন মতো কৌশলগত ধর্মীয় কর্মশালা পরিচালনা করেন। খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী নেতারা এবং রিপাবলিকান পার্টিতে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকরা এখন খোলাখুলিভাবে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের কথা বলছেন, যা তারা আগে তাদের প্রার্থনা বা প্রাত:রাশের সময় একে অপরের কানে ফিসফিস করে বলতেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয়তাবাদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ