Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে জটিলতা দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

ডিজিটালাইজেশন এখন একটি আন্তর্জাতিক বাস্তবতা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা দেশকে বৈশ্বিক বাস্তবতার সাথে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক। ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে বদলে ফেলা। এখন ডিজিটালাইজেশনেও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার আচড় পড়েছে। সরকারের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র(এনআইডি) ইস্যুকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের করোনার টিকা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জমি রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংকে হিসাব খোলা, টিআইএন সার্টিফিকেট, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিয়ে, র্শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ ১৭টি পরিষেবা পেতে জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন অ্যাপের দ্বারস্থ হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিষেবার জন্য জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্রের হাতে চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্কুল-কলেজে ভর্তিসহ করোনা টিকা প্রাপ্তির জন্য সন্তানের জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করতে গিয়ে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন সনদ নম্বর বাধ্যতামূলক হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে সাধারণ মানুষের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করাসহ নানাবিধ হয়রানির সম্মুখীন করছেন।

ডিজিটালাইজেশন সাধারণ মানুষকে গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসুত্রিতা তথা লালফিতার দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তির গ্যারান্টি হয়ে দেখা দিয়েছিল। এখন সেই সেবা পেতে শুরুতেই মানুষকে ডিজিটাল বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে সার্ভার ত্রুটির নামে যা কিছু হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে দুর্নীতিবাজদের কারসাজি। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ডিজিটাল নিবন্ধনে সাধারণ মানুষের হয়রানির জন্য নানাবিধ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট, দক্ষ জনবলের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তি ও অ্যাপের ব্যবহার, দালালচক্রের সিন্ডিকেটেড কারসাজি, ইন্টারনেটের অস্বাভাবিক ধীরগতি এবং সার্ভারের ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়গুলোর কথা বলা হয়েছে। অত্যন্ত জরুরি নাগরিক পরিষেবার জন্য বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমে অহেতুক জটিলতা এবং দিনের পর দিন সার্ভার বন্ধ থাকার কারণে নাগরিকদের অশেষ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। যেখানে ডিজিটালাইজেশন মানুষকে যথাযথ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সেবা প্রাপ্তির গ্যারান্টি দেয়, সেখানে জন্মনিবন্ধনের মত ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা ভোগের প্রাথমিক শর্ত পুরণের ক্ষেত্রেই পদে পদে ভোগান্তি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দুর্নীতিমুলক তৎপরতার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা, সীমাবদ্ধতা দূর করে দুর্নীতিমুক্ত পরিষেবা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর বছরের শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন ভর্তির কার্যক্রম চালু হওয়ায় এ সময়ে শিশুদের জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম জোরদার হওয়া স্বাভাবিক। এ সময়ে একই সঙ্গে লাখ লাখ জন্মনিবন্ধনের চাপ থাকা অস্বাভাবিক নয়। জনবহুল শহরের সংকীর্ণ সড়কে যানজটের মত ডিজিটাল নিবন্ধন পদ্ধতিও সার্ভার জটিলতায় ভোগান্তির কারণ হবে, তা কারো প্রত্যাশিত নয়। শুরুতে কিছু সমস্যা দেখার দিলেও এসব সমস্যা দূর করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ,সচিব ও মেম্বার-কাউন্সিলরদের অনৈতিক অর্থ-আদায় ও দুর্নীতিমূলক কর্মপন্থা অনুসরণের বাস্তবতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের নামে এনালগ ভোগান্তি দূর করতে ত্বরিৎ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকার একযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এতদিনেও এসব সমস্যা নিরসন না হওয়া দু:খজনক। শিশু ও বয়ষ্কদের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পেতে অহেতুক জটিলতার সুযোগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় বন্ধ করতে হবে। বিশেষত ইন্টারনেটের ধীরগতি এবং সার্ভার জটিলতার নামে মানুষের হয়রানি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের সুফল সব মানুষের কাছে পৌছে দিতে হলে জন্মনিবন্ধনসহ আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি অবশ্যই সহজতর ও সহজলভ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ত্রুটিমুক্ত বিশ্বমানের অ্যাপ এবং ডেটা সিস্টেম ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • AMM Zowadul Karim Khan ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৯ পিএম says : 0
    একটা বাস্তব সমস্যা তুলে ধরেছেন। আমিও একজন ভুক্তভোগী। তাছাড়া কোনও কারণ ছাড়া পূর্বের ম্যানুয়ালী করা জন্মনিবন্ধনগুলো বাতিল করা হয়েছে। এগুলোকে ডাটাবেসের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন
আরও পড়ুন