Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাসেম সুলাইমানি হত্যার ২ বছর : মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের নৈতিক-সামরিক পরাজয়

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

গণমানুষের অধিকার এবং আদর্শিক লড়াই-সংগ্রাম আপাত পরাক্রমশালী শক্তির দ্বারা নানাভাবে ব্যহত, পর্যুদস্ত হলেও সংগ্রামের মহত্তম লক্ষ্য কখনোই ব্যর্থ হয়ে যায়না। এটি কোনো সুনির্দ্দিষ্ট দেশ-কালের গন্ডির ভেতরেও সীমাবদ্ধ থাকেনা। আজকের বিশ্বে তথাকথিত অর্থনৈতিক ও তথ্যপ্রযুক্তির গেøাবালাইজেশনের ক্ষেত্রেও এ সত্য সমভাবে প্রযুক্ত হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর মানবমন্ডলি ও প্রাণ-প্রকৃতি একই সূর্য, চাঁদ ও গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তন এবং সমুদ্র ও আকাশের সমান অংশীদারিত্ব ধারণ করে চলেছে। সেখানে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাজন-রেখার কোনো প্রভাব নেই, ছিলনা কখনো। মহত্ত¡ম আদর্শের প্রতিভু হওয়া সত্বেও মানুষ যখন ক্ষমতার দর্পে দর্পিত হয়ে, হীন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে মনগড়া রাজনৈতিক চেতনা সবার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, তখন থেকেই দেশে দেশে ও বিশ্বের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও সংঘাতের জন্ম হয়েছে। অবশ্য সত্য-মিথ্যা, শুভ-অশুভ শক্তির দ্বন্দের ইতিহাস চিরন্তন। সত্যের মুখোশ পরে মিথ্যার প্রচারনার আড়ালে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কারসাজির মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক-সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি গত এক শতাব্দীতে ব্যাপক ভিত্তি লাভ করেছে। আমাদের আজকের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট, মানবাধিকারের দুর্দশার পেছনে সেই পুঁজিবাদি সা¤্রাজ্যবাদের চক্রান্ত মূখ্য ভ’মিকা রাখছে। হীন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও খন্ডিত চিন্তা-চেতনা দিয়ে এই চক্রান্ত মোকাবেলা করা যাবেনা। এর জন্য বঞ্চনার শিকার হওয়া বিশ্বের শত শত কোটি নিপীড়িত মানুষকে মানবতার প্রকৃত শত্রæ ও পথ প্রদর্শক সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা থাকতে হবে।

গত ২রা জানুয়ারী ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার, বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ আল-কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সুলাইমানির দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী। ২০২০ সালের ২রা জানুয়ারী ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে সিআইএ ও মোসাদের পরিচালিত এক ড্রোন হামলায় কাসেম সুলাইমানি শহীদ হন। বহু বছর ধরেই সুলাইমানি ইঙ্গ-মার্কিন-জায়নবাদি শক্তির অন্যতম টার্গেট ছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার সুলাইমানিকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামিনি আরো অনেক আগেই লে: জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে ‘জীবন্ত শহীদ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁকে ইরানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব জুলফিকার পদকে ভ’ষিত করা হয়েছিল। বাস্তবে কাসেম সুলাইমানির অবস্থান ও পদমর্যাদা যেখানেই থাক না কেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পর তিনি ছিলেন সে দেশের সামরিক-বেসামরিক ডি-ফ্যাক্টো নেতা। গত দেড় দশকে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক, সামরিক-অর্থনৈতিক ভ’গোলকে আমূল পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয় পুরো বিশ্বব্যবস্থায় ইরান একটি অনিবার্য আলোচিত ও দুর্লঙ্ঘনীয় বাস্তবতায় পরিনত হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা অবরোধ, অব্যাহত হুমকি ও ট্রিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট, পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্রের হুমকি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রনকে ব্যর্থ করে দিয়ে অনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াইয়ে জিততে হয় তার রূপরেখা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন কাসেম সুলাইমানি। সা¤্রাজ্যবাদের যুদ্ধবাদি অহমিকা নিপীড়িত মানুষের প্রতিরোধে ভেঙে দিয়ে নতুন বিশ্বব্যবস্থার আসু সম্ভাবনাকে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হওয়ার মূল কারিগর তিনি। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির অব্যাহত মদতে গত সাত দশকে অজেয় শক্তি হয়ে ওঠা ইসরাইলের আইডিএফ হেজবুল্লাহ ও হামাসের হাতে বার বার পরাস্ত ও নাস্তানাবুঁদ হওয়ার মূল কারিগর ছিলেন কাসেম সুলাইমানি। তবে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদি-জায়নবাদি শক্তি কাসেম সুলাইমানিকে হত্যা করে ইরানি সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার যে ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা করেছিল, তাদের জন্য তা কার্যত বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। ইরানে সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ কাসেম সুলাইমানির জানাযা এবং প্রতিবাদ সমাবেশে একত্রিত হয়ে ইরানি জনগণ আবারো একটি অজেয় শক্তির সম্ভাবনার জানান দিয়েছিল। জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন ঘাটি ও সামরিক স্থাপনায় একের পর এক আঘাত হানতে থাকে ইরানি সামরিক বাহিনী। এর কোনো আঘাতই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়নি তারা। কাসেম সুলাইমানি হত্যাকান্ড মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির শিখন্ডিদের সন্ত্রস্ত করে তোলে। এর মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এবং ইরাকে মার্কিনীদের সামরিক উপস্থিতি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

ব্যক্তিকে হত্যা করে ব্যক্তির মহত্তম আদর্শকে হত্যা করা অনেক দূরের কথা, দুর্বল করতে পারেনা কোনো প্রতিপক্ষ। জীবৎকালেই ‘জীবন্ত শহীদ’ আখ্যার মধ্যেই নিহিত আছে, কাসেম সুলাইমানি বহু বছর ধরে বার বার জায়নবাদি শক্তির টার্গেট হয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার পর সুলাইমানি বিশ্বের সামনে কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে সুলাইমানির রাজনৈতিক-সামরিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রকে প্রতিপক্ষ নিজেরাই যেন আরো সম্প্রসারিত করে দিল। এরপর সিরিয়া, লেবানন, কাবুল, ইয়েমেন, ফিলিস্তিনসহ কোথাও সা¤্রাজ্যবাদী সামরিক বাহিনী ও তাদের এজেন্টরা দাঁড়াতে পারেনি। সর্বত্র পরাজয় ও পালিয়ে বাঁচার অভিসন্ধি নিয়ে দৌড়াচ্ছে তারা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর নির্দেশে সংঘটিত হত্যাকান্ডের দায়ভার এখন জো বাইডেন বা নাফতালি বেনেত যেন বহন করতে রাজি নয়। একটি কাপুরোষিচিত অনৈতিক কাজের সমর্থনের ধারাক্রম দীর্ঘদিন বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন, কাসেম সুলাইমানি হত্যা মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধের বারুদে বিষ্ফোরণের আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ কাসেম সুলাইমানিকে হত্যা করে ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধকে দুর্বল করতে পারেনি। বুমেরাং হয়ে তা আধিপত্যবাদী শক্তির উপর পাল্টা আঘাতের হুমকি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কাসেম সুলাইমানি হত্যার দিনই এই হত্যাকান্ডের কঠিন প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছিল ইরানি নেতারা। মাত্র ৫দিনের মাথায় ইরাকে মার্কিন ঘাটিতে ইরানি হামলায় শত শত মার্কিন সেনা হতাহতের খবর পাওয়া যায়। প্রথমে মার্কিনীদের তরফে ক্ষয়ক্ষতির কথা অস্বীকার করা হলেও পরবর্তিতে নানা মাধ্যমের খবরে তা চেপে রাখা যায়নি। অন্যদিকে সুলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে ইরানিরা। এটি ইরানের একক রাষ্ট্রীয় লড়াই নয়, এটি মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামি দুনিয়ার সম্মিলিত লড়াইয়ের অংশ। ওরা সবেচেয়ে পটেনশিয়াল শক্তি ইরানকে দুর্বল ও পদানত করার মধ্য দিয়ে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। সা¤্রাজ্যবাদি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর জায়নবাদী ‘ডিল অব দি সেঞ্চুরি’ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র ইতিমধ্যেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

ইরানের ইসলামিক বিপ্লবকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বশংবদ রাজা-বাদশা ও ডিকটেটররা। ইঙ্গ-মার্কিন সমর্থনপুষ্ট রেজাশাহ পাহলবির তখতে-তাউস উল্টে দিয়ে ১৯৭৯ সালে প্যারিসে নির্বাসিত নেতা ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে ইরানের জনগণ সে দেশে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত করেছিল। এর আগে ১৯৫২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোসাদ্দেগ সরকারকে উৎখাত করে রেজাশাহ পাহলভির ক্ষমতা পুনরায় নিরঙ্কুশ করা হয়। ঠিক একইভাবে গত দশকের শুরুতে মিশরে ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত মুরসি সরকারকে উৎখাত করে সেখানে সামরিক স্বৈরাচারকে বসিয়ে দেয় পশ্চিমারা। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার ও নতুন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক রোডম্যাপ অনুসারে পশ্চিমাদের বশংবদ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ছাড়া সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার থাকতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের উপর নির্ভরশীল শিল্পোন্নত পশ্চিমা বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যকে তাদের জনগণের স্বার্থ ও ক্ষমতা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়। ইরানে মোহাম্মদ মোসাদ্দে জনগণের বিপুল সমর্থন ও ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রথমেই ইঙ্গ-ইরানিয়ান তেলকোম্পানীকে জাতীয়করণ করেছিলেন,তাদের কাছে এটাই ছিল তার স্পর্ধিত অপরাধ। নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র যেখানে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদি ও প্রতিবেশী রাজা ও ডিকটেটরদের দ্বারা অবরুদ্ধ সেখানে গণবিপ্লবই হচ্ছে একমাত্র বিকল্প। ইরানের সেই বিপ্লবী সরকারকে উৎখাত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং আরব রাজারা একাট্টা হয়ে যে রোডম্যাপ তৈরী করেছিল তার প্রথম দাবার গুটি ছিলেন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন। বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ইরানের বিপ্লবী সরকারের উপর একটি বড় ধরণের যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে ১৯৮০ সালে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন শাতিল আরব নদীর মোহনা এবং ইরানের খোজেস্তান প্রদেশকে নিজেদের বলে দাবি করে ইরানে সামরিক হামলা শুরু করে। পশ্চিমা সমরাস্ত্র ও পেট্টোডলারে সুসজ্জিত ইরাকি বাহিনীর বিপরীতে সমরাস্ত্রের দিক থেকে ইরানের সামরিক বাহিনী ছিল দুর্বল। তবে জানবাজ দেশপ্রেমিক ইরানিরা পশ্চিমা ও প্রতিবেশি শত্রæদের সম্মিলিত আক্রমন প্রতিহত করে নিজ দেশের নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিল বলেই ইরান আজ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আঞ্চলিক সামরিক-রাজনৈতিক শক্তিকে পরিনত হতে পেরেছে। সাদ্দাম হোসেন ইরান আক্রমন করে যে ৫টি লক্ষ্যকে তুলে ধরেছিলেন, স্পষ্টতই প্রমানিত হয় তাতে মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা বশংবদ রাজাদের প্রত্যক্ষ মদত ছিল। ইরানের অন্তর্গত তিনটি দ্বীপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দখলে নেয়া সেই ৫ লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ৪র্থ ও পঞ্চম দফায় ছিল- ইসলামি বিপ্লবী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়া। যাতে এ অঞ্চলে আর কোনো দেশে এরূপ সরকার গঠিত হওয়ার সুযোগ না পায়।

মধ্যপ্রাচ্যে বা বিশ্বের আর কোথাও তেমন কোনো বিপ্লবের পটভ’মি না ঘটলেও ইরানের বিপ্লবী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়া সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার প্রতি সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা এবং কাসেম সুলাইমানির মত প্রজ্ঞাবান, দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সামরিক নেতৃত্বের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা বশংবদ শাসকরা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী এবং তাদের বশংবদ সরকারগুলোর স্ট্রাটেজি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সমর্থন জোরদার করলেও আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন অনেকটা শর্তহীনভাবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের গাঁটছড়া বাঁধতে শুরু করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী প্রতিদিনই ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে নতুন বসতি বানাচ্ছে, সাঁজোয়া গাড়ীতে পাথর ছোঁড়ার অপরাধে ফিলিস্তিনী শিশু-কিশোরদের বুকে গুলি চালাচ্ছে। বিমান হামলা চালিয়ে বাড়িঘর গুড়িয়ে দিচ্ছে। সন্তানদের কাছে থেকে মায়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আল কুদস বিগ্রেডের কমান্ডার কাসেম সুলাইমানি এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শক্তি ও মনোবল শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র ও হাজার হাজার কোটি ডলারের বিগ বাজেট ওয়ার ফ্রন্টে প্রবল প্রতাপশালী আগ্রাসি শক্তিকে কিভাবে ধসিয়ে দিতে হয় তিনি তা বার বার দেখিয়ে দিয়েছেন। তার সুনিপুণ কৌশলগত সামরিক দক্ষতায় গাজা, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন সর্বত্রই পরাজয়ের গøানি নিয়ে মাথা নিচু করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের সামরিক-অর্থনৈতিক ছত্রছায়ায় জায়নবাদের নীল নকশা ব্যর্থ হতে চলেছে। বাগদাদ বিমানবন্দরের অদূরে মার্কিন সামরিক ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সুলাইমানি ও ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফ্রন্টের দ্বিতীয় কমান্ডার আবু মুসা আল মাহাদি মুহাদ্দিসের মৃত্যুর পর পুরো অঞ্চলে মার্কিন ও ন্যটো বাহিনী আরো অনিরাপদ ও ক্ষণভঙ্গুর বাহিনীতে পরিনত হয়েছে। যে ইরাক ও আফগানিস্তানকে দখল করতে মার্কিনীরা কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল, সেখানে এখন ইরানের রাজনৈতিক-সামরিক কৌশলগত অবস্থান কেউ অগ্রাহ্য করতে পারছে না। সমগ্র পশ্চিমাবিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের এই অবস্থানের কৃতিত্ব সেখানকার বিপ্লবী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ জনগণ এবং কাসেম সুলাইমানির মত আধ্যাত্মিক চেতনাসম্পন্ন বিচক্ষণ সামরিক নেতৃত্বের। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাসেম সুলাইমানি সব সময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। মৃত্যুর পর কাসেম সুলাইমানির জানাজায় কয়েক মিলিয়ন মানুষের সমাগম হয়েছিল। গত রবিবার ইরাকের বিভিন্ন শহরে কাসেম সুলাইমানি ও আবু মাহাদি মুহাদ্দিসের স্মরণে হাজার হাজার মানুষের র‌্যালি বের হয়েছে। শহীদ কাসেম সুলাইমানি জীবিত কাসেম সুলাইমানি থেকেও অনেক বেশি উজ্জ্বল ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন