পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০১৬ সালের ১লা জুন পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি কতখানি ব্যবসাবান্ধব সে বিষয়ে বিশ্বব্যাংক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। গত বুধবার সারাবিশ্বে একযোগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। ব্যবসা করা কতটা কঠিন অথবা সহজ সে বিষয়টিই মূলত এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের ১০টি মূল সূচক হলো, ব্যবসা শুরু, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণের প্রাপ্যতা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও অসচ্ছলতা দূরীকরণ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১০টি সূচকের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রাপ্যতায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ প্রাপ্যতা সূচকে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭। গত বছরও বাংলাদেশের অবস্থান এ সূচকে একই ছিল। বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে গড়ে সময় লাগে ৪২৮ দিন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসা করার পরিবেশের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এ তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে ভুটানও এগিয়ে, তার অবস্থান ১০৩। অন্যান্য দেশের মধ্যে নেপাল ১০৭, শ্রীলঙ্কা ১১০, ভারত ১৩০, মালদ্বীপ ১৩৫, পাকিস্তান ১৪৪তম স্থানে রয়েছে। ব্যবসা করা সহজ করতে চলতি বছর এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ তিনটি সংস্কার কার্যক্রম শেষ করেছে পাকিস্তান। ভারত এ বছর দুটি সংস্কার কাজ শেষ করলেও বাংলাদেশ নতুন করে কোনো সংস্কার কাজ করতে পারেনি। যে ১০টি সূচকের ভিত্তিতে দেশগুলোর র্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়েছে তার অন্যতম হলো কর পরিশোধ। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থা সবগুলো দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এই রিপোর্টটি পড়ার পর অনেক প্রশ্নের উদয় হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রধান শর্ত। এই শর্তটি বাংলাদেশে বিগত প্রায় ২ বছর হলো পূর্ণ মাত্রায় পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশে বিগত ২ বছর হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পূর্ণ মাত্রায় বিরাজ করছে। যে দেশে কোনো মিটিং নাই, মিছিল নাই, সভা-সমিতি নাই, এমন কি সরকার বিরোধী কোনো রকম তৎপরতা নাই, সে দেশের চেয়ে ভালো ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আর কোথায় হতে পারে? আলোচ্য রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ১০টি সূচকের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। অথচ বিগত কয়েক বছর হলো সরকার অব্যাহতভাবে দাবি করে আসছে যে, দেশে আর কোনো বিদ্যুৎ সংকট নাই। সরকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করেছে। অসংখ্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল করে, বিদ্যুতের দাম ৫ গুণ বাড়িয়ে, সরকারের দাবী অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হয়েছে। তাই যদি হবে তাহলে শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যে বিদ্যুৎপ্রাপ্তি সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন?
দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে। বাংলাদেশের নীচে রয়েছে একমাত্র আফগানিস্তান। আফগানিস্তান একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। ২০০১ সালে এই দেশটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমেরিকা দখল করে নেয়। আজও মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যায়নি। ফলে যখন তখন যেখানে সেখানে মার্কিন দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ চলছে। প্রতি সপ্তাহে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, অসংখ্য স্থাপনা উড়ে যাচ্ছে। বিগত ১৫ বছর ধরে দেশটিতে এই অবস্থা চলছে। এমন একটি গৃহযুদ্ধবিক্ষত দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রশ্নই ওঠে না। তাই এই দেশের অবস্থান যে বাংলাদেশের নীচে হবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান করে কি করে?। তার চেয়েও যেটি মিলিয়ান ডলার প্রশ্ন সেটি হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানের মতো একটি দেশ যেখানে ভয়াবহ সন্ত্রাস সেই দেশটির কণ্ঠলগ্ন সহচর, সেই দেশটিও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান করে কিভাবে? অথচ বিগত ১ দশক ধরে এই দেশটিতে কোনো মামুলি সন্ত্রাস নয়, রীতিমত ভয়াবহ সন্ত্রাস নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তো গেল মঙ্গলবার সে দেশের বেলুচিস্তানে পুলিশ ক্যাডেট কলেজে সন্ত্রাসী হামলায় ৬১ জন ক্যাডেট পুলিশ মারা গেছেন। এই সেই দেশ যেখানে বেনজির ভুট্টোর মতো সবচেয়ে বড় নেত্রীকে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন এবং ঐ হামলায় আরো ১৩০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এটি সেই দেশ যেখানে সন্ত্রাসী হামলায় মিলিটারি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। এই হামলায় একটি শক্ত ব্রিজ উড়ে যায়। ৩টি গাড়ি উড়ে যায়। যেদেশে আমেরিকানরা নিয়মিত ড্রোন হামলা করে। সে দেশটিও বাংলাদেশের ওপরের অবস্থান করে।
এর বিপরীতে যদি আমরা বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে যে, এখানে সন্ত্রাসবাদ নাই বললেই চলে। হলি আর্টিজানে যে সন্ত্রাসী হামলা হয় সেখানে ২০ জন মানুষ মারা যায়। এর ফলে অর্থনীতির বড় একটা ক্ষতি হয় নাই। এই হামলা ছাড়া বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয় নাই। বিক্ষিপ্তভাবে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আর ঢাকায় হয়েছিলো হোসেনী দালানে। আইন শৃংখলা বাহিনীর দাবী মোতাবেক, সেই সন্ত্রাসবাদও সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এমন একটি শান্ত এবং সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রাজনৈতিক পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের শর্তগুলো অর্থাৎ ঐ ১০টি সূচক পূরণ হওয়া উচিত ছিলো এবং ব্যবসা বাণিজ্যও অনেক বেশী সম্প্রসারিত হওয়ার কথা ছিলো। একদিকে দাবী করা হচ্ছে যে, প্রবৃদ্ধির হার নাকি লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৭.১ শতাংশ হয়েছে। দাবী করা হচ্ছে যে, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্ট্যাটাসকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে, সেখানে বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ থাকবে না কেন? ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে কেন? অথচ ব্যাংকগুলোতে লক্ষ কোটি টাকারও বেশী নগদ অর্থ অলস পড়ে আছে। পুঁজি পাচারের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, সেগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যে না খাটিয়ে অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে তলানি থেকে আমাদের ওপরে উঠে আসতে হবে। সেটা করতে গেলে এখানে যেসব পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো, সেগুলো যদি সরকার বিবেচনায় নেয় তাহলে সরকার লিংকটি পেয়ে যাবে বলে মানুষের বিশ্বাস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।