Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

এইচ এম আব্দুর রহিম | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৭ এএম

বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। গত বছরে অবস্থান ছিল ১৬তম। ‘র্দুনীতি’ শব্দটি নেতিবাচক শব্দ। এটি ইতিবাচক শব্দ ‘নীতি’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আভিধানিক অর্থে ‘দুর্নীতি’ হলো নীতিবিরুদ্ধ, কূনীতি ও অসদাচরণ। দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বা ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অফিস-আদালতকে ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভের জন্য অপব্যবহার করাকে বুঝায়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এ উপরোক্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা দুর্নীতিরোধ করতে পারিনি। দুর্নীতির পরিসর বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি (অর্থাৎ, দুর্নীতিকারী যে-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে, তার কোনো ছাড় নেই) এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তারপর ও দুর্নীতি কমছে না, বরং ক্রমান্বয়ে আরো বাড়ছে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ ও জাতির উন্নতি অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। এমন কোনো সেক্টর নেই, যা দুর্নীতির হিংস্র থাবায় আক্রান্ত হয়নি। এক কথায় বলতে গেলে দুর্নীতি দেশ ও সমাজকে অক্টোপাসের ন্যায় আঁকড়ে ধরে আছে। টিআইবির মতে, দুর্নীতি বিরোধী অঙ্গীকারে পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রত্যাশিত সক্রিয়তা কার্যকারিতা এবং দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার ঘাটতি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা প্রসার, ভূমি, নদী জলাশয় দখল, জাতীয় সংসদসহ জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, কালো টাকা সাদা করা ও বিদেশে অর্থ পাচারের সুযোগের কারণে দুর্নীতির ধারণার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে। আগামীতে সমাজকে দুর্নীতি মুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তা নাহলে এক সময় সমাজ থেকে সততা হয়তবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সমাজ ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিবাজদের খেলার মাঠে পরিণত হবে। এমনকি সমাজের সৎ সদস্যরাও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের, যারা সমাজের হর্তাকর্তা হয়ে দাঁড়ায়, তাদের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায়। এই অবস্থা বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিরাজমান। নিঃসন্দেহে দুর্নীতি মানবজাতির সবচেয়ে বড় ট্রাজেডিগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা খুব ক্ষমতাশালী। দুর্নীতি শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই করেন না, সমাজের অন্যান্য সদস্যরা, যেমন রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সময় ও সুযোগমতো দুর্নীতি করে থাকেন। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী হয় দেশ ও সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি শুধু একজন ব্যক্তির নৈতিকতাকেই ধ্বংস করে না, এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রীতিনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি একটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো, সরকারের কর্মক্ষমতা এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দুর্বল করে। দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দেশ সহজে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে না, এমনকি দুর্নীতির বেড়াজালে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সত্যি বলতে, দুর্নীতি সমাজ থেকে শান্তি ও সুখকে নির্বাসিত করে। দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত দমন ও নিপীড়ন ভয়ংকর এবং বহুরূপী। দুর্নীতির কারণে সমাজে অসাম্য ও অবিচার বৃদ্ধি পায়। যাহোক, দুর্নীতি আমাদের সমাজের এতটাই গভীরে প্রথিত যে, এটিকে উপড়ে ফেলা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সংগত কারণেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। গত ২ বছর থেকে গোটা বিশ্ব কভিড-১৯ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে যে, লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এই মহামারির মধ্যেও আমাদের দুর্নীতির খবর শুনতে হয়। এই মহামারির মধ্যেও আমাদের দুর্নীতি দমন দিবসে বিদ্যমান ভয়াবহ দুর্নীতি মোকাবেলা করার, সরকারি কর্মচারী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গণমাধ্যম, বেসারকারি খাত, নাগরিক সমাজ, জনগণ- প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে তুলে ধরা হয়। দুর্নীতি একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। সমাজের প্রতিটি মানুষকে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে সব বাধাবিঘœ অতিক্রম করে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমরা জানি যে, আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের জন্যই বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের র্শীষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামও অন্তর্ভুক্ত থাকছে। এটি ক্যান্সারের মতো শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে। উৎকোচ বা ঘুষ গ্রহণের বর্তমানে রকমারী উপনাম রয়েছে। যেমন- বখশিশ, হাদিয়া, হাত খরচ, অফিস খরচ, মিষ্টি খাওয়ার টাকা, বসকে খুশি ইত্যাদি। এগুলো না দিলে ফাইল চলে না, ফাইল বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। এছাড়াও রয়েছে সরকারি অর্থ অপচয় ও আত্মসাৎ। স্বজনপ্রীতি, আপনজনকে পদোন্নতি বা বদলি, বিদেশে ট্রেনিংয়ের সুযোগ প্রদান ইত্যাদি। নিয়োগ বাণিজ্য, মিথ্যা ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত, ব্যক্তি স্বার্থে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন-পরিবর্ধন, অন্যায় সেবাদান, দালাল চক্রের মাধ্যমে সেবাদান, অধীনস্তদের নিকট থেকে মাসোয়ারা গ্রহণ ইত্যাদি। আইনশৃংখলার ক্ষেত্রে নিরাপরাধ মানুষকে গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়। বিভিন্ন সেক্টর থেকে চাঁদা আদায়, অর্থের বিনিময় বা সরকারি লোক হওয়ায় অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া বা গ্রেফতার না করা, অপরাধীকে অপরাধ করার সুযোগ দেওয়া। আদালতে অসত্য বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো। নিরপরাধ জানা সত্তে¡ও রিমান্ডের নামে অমানবিক নির্যাতন, নিরাপরাধ মানুষের পকেট, গাড়ি, বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে মাদক বা অস্ত্র রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা ইত্যাদি। ২০১৭ সালের টিআইবির জরিপে দেশের সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাকে। শিক্ষাখাতে দুর্নীতি চলছে। বলা হয়, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন দাঁড়াতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা হতে হবে নৈতিক শিক্ষা। শিক্ষার সঙ্গে নৈতিক শিক্ষা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। বলা হয়ে থাকে, নৈতিকতাহীন শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের শিক্ষাখাত ঘুষ-দুর্নীতি তথা অনৈতিকতায় জর্জরিত। এটা গোটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। শিক্ষাখাতে দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে মহাৎসব হয়েছে তা সত্যিই লজ্জাকর। জাতিকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ এটি। মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ প্রায় প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষা ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বিগত দিনে। এমনকি প্রাইমারি সমাপনী পরীক্ষার সময়ও দেখা গেছে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিল ছেড়ে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানে পরের দিনের প্রশ্ন নেওয়ার জন্য ভিড় করছে। এছাড়া নকল করা, ক্লাসে ভালোভাবে না পড়িয়ে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং করতে বাধ্য করা, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, স্বজন প্রীতি, ঘুষের বিনিময় অযোগ্য লোককে নিয়োগ দেয়া, প্রতিষ্ঠানের অর্থ তছরুফ করা, জাল পরীক্ষার সনদ বা জাল নিবন্ধন সনদ তৈরি করে চাকরি করা। শিক্ষক নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, একাডেমিক অনুমতিও স্বীকৃতি, শাখা খোলার অনুমোদন, এমপিওভুক্তি, মিনিস্ট্রি অর্ডার, জাতীয়করণ, সার্টিফিকেট সত্যায়ন, সাময়িক অথবা সনদও নন্বর পত্র প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, আঞ্চলিক, জেলাও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলো যেন ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টিআইবির রিপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষাখাতে দুর্নীতির হার ৪২.৯%।বলা বাহুল্য, সর্বক্ষেত্রেই ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানিং সবচেয়ে বেশি হরিলুট চলছে কেনাকাটা, নিয়োগ ও টেন্ডারে। হাসপাতালের সরঞ্জামসহ নানা কিছু কেনাকাটার ক্ষেত্রে রীতিমত পুকুর চুরি চলছে। এছাড়া অ্যাডহক চিকিৎসক ও তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৬৫ লাখ টাকা, বদলির ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা, পদায়ন পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়ে থাকে। ঘুষের বিনিময়ে হয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি। ঘুষের বিনিময়ে নিম্মমানের ঔষধ লেখেন অনেক ডাক্তার। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়া, সরকারি হাসপতালে চিকিৎসা না দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো। ক্লিনিকগুলোতে দালাল নিয়োগ দেয়া আছে।

ব্যবসা ক্ষেত্রে মজুদদারী, কালাবাজারী, চোরাচালানী, ফটকাবাজী, মুনাফাখোরী, ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন, প্রতারণা, দালালী, ওজনে কমবেশি করা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজী, খাদ্যে ফরমালিন ও কেমিকেল মেশানো, ভালো খাদ্যদ্রব্য বা পণ্যের সাথে নিম্নমানের পণ্যের মিশ্রণ, পণ্যের দোষ গোপন করা, আমদানি-রফতানিতে কাস্টমস ও বন্দরগুলোতে ঘুষ বাণিজ্য ও মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রিতা ইত্যাদি

ব্যাংকিং খাতে ঘুষ, জালিয়াতি, দুর্নীতি ইত্যাদিতে ব্যাংকি খাতও পিছিয়ে নেই। বরং সাম্প্রতিকালে ব্যাংকিং খাতে ঘটে যাওয়া কেলেংকারীগুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে হয়তো প্রমাণিত হবে, দুর্নীতিতে ব্যাংকিংখাত শীর্ষে রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঘুষের বিনিময় ঋণ দান, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, অর্থ পাচার, অন্য ব্যাংকের খেলাপি ক্রয়, টিআইবি রির্পোট ও গ্রাহকের আবেদনের আগেই ঋণ অনুমোদন, একই পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণদান, শাখার বিরূপ মন্তব্য সত্তে¡ও ঋণ অনুমোদন, ঋণ খেলাপির নামে পুনরায় ঋণ অনুমোদন, খেলাপি ঋণের সুদ মওকুফ ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে মামলা না করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে মামলাকে র্দীঘায়িত করা ইত্যাদি। এছাড়াও আছে অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাতকরণ, মৃত্যুকালে আত্মসাতকরণ, অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ, অসাধুভাবে প্রবৃত্ত করা। নথি জালকরণ, খাঁটি দলিলকে জাল হিসেবে ব্যবহারকরণ, হিসাব বিকৃতকরণ কর্মকান্ড, দুর্নীতিতে সহায়তা করা, ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টা ইত্যাদি। রাজনৈতিক দুর্নীতির মধ্যে আছে ঘুষ, চাঁদাবাজি, চাটুকারিতা, স্বজন প্রীতি, সংকীর্ণতা, পৃষ্ঠপোষকতা, প্রভাব বিস্তার, রাজনৈতিক যোগাযোগ ভিত্তি। রাজনৈতিক যোগাযোগ ভিত্তিক সুবিধা লাভ এবং অর্থ আত্মসাৎ। দুর্নীতির কারণে মাদক পাচার, হুন্ডি মানব পাচার সহজ হয়। রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন যেমন পুলিশি নিপীড়নকেও রাজনৈতিক দুর্নীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। রাজনৈতিক দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে অযোগ্য লোককে নিয়োগ দান, হাট বাজার নদীনালা, টোল আদায় ইত্যাদি। নিজেদের লোককে ইজারা দান, সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজী, চোরাচালানি, কালোবাজারি, অস্ত্র ও মাদক ববসা, হল দখল, সরকারি ভূমিদখল প্রভৃতি। দুর্নীতি এখন ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে পরিবার সমাজ জীবনকেও গ্রাস করেছে। এখন শুধু প্রশাসনের লোকেরা দুর্নীতি করছে না। দুর্নীতি করছে পাড়া মহল্লা ও গ্রামের উঠতি মাস্তান, মাতব্বর থেকে জনপ্রতিনিধি সকলেই। এ ছাড়া আরো দুর্নীতি হচ্ছে তথ্য সন্ত্রাস, হলুদ সাংবাদিততার অন্তরালে দেশ ও জাতিবিরোধী কর্মকান্ড তথা ব্ল্যা কমেইল করে উৎকাচ আদায়, ঘুষের বিনিময়ে বা রাজনৈতিক কারণে সত্য সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকা, সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল, সরকারি অর্থ আত্মসাত, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি চুরি ও অপচয়, আয়কর, বিক্রয় কর ও শুল্ক ফাঁকি, ত্রাণের অর্থ ও সামগ্রী আত্মসাত, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ সরকারি স্থাপনা নির্মাণে পুকুর চুরি, নদী দখল করে উভয় পারে স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় ও গাছপালা কেটে বন উজাড়, পাহাড়ি প্রাণী বিক্রি ও পাচার, মানব পাচার, অর্থ পাচার, দেশীয় প্রযুক্তি পাচার, অন্যের ভূমি ও সম্পদ দখল, মিথ্যা সাক্ষী দেয়া ইত্যাদি

চাঁদাবাজি টেন্ডার বাজি, মামলাবাজী ও টোলবাজী ইত্যাদির মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়েছে সন্ত্রাসীরূপ, যাকে বলা চলে সন্ত্রাসী দুর্নীতি। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃটান্তমূলক শাস্তি প্রদান করাসহ সামাজিকভাবে বর্জন করার ব্যবস্থা করা দরকার।
লেখক: সাংবাদিক



 

Show all comments
  • jack ali ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ পিএম says : 0
    Yes, we can stop all corruptions in our beloved country if our country rule by Qur'an. Our sacred country is ruled by enemy of Allah as they have destroyed our country in every sphere.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি নির্মূল
আরও পড়ুন