Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মঞ্জুকে অব্যাহতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিএনপিতে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। গত শনিবার তাকে অব্যাহতি দিয়ে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। দক্ষিণের প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কারণে যারা খুলনার রাজনীতিতে কোনঠাসা ছিলেন তারা অনেকটাই এখন উজ্জীবিত। তারা বলছেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু অনেক বছর ধরেই খুলনা মহানগরের দায়িত্বে আছেন। এই সময়ে কোথাও কোন সম্মেলন হয়নি, নতুন নেতা তৈরি হয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন সংগঠন শক্তিশালী করতে নতুন কমিটি গঠন করেছেন এবং নতুন নেতৃত্ব বিকশিত করতে চান তখন প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কোনভাবেই উচিত হয়নি।
অন্যদিকে মঞ্জুপন্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। তাকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে ১৬ জন নেতা দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তারা বলছেন, খুলনার পোড়খাওয়া এই নেতাকে সতর্ক করা যেতো। কিন্তু তা না করে যেভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলো তাতে তৃণমূলে ভিন্ন বার্তা পৌঁছাবে। তবে নীতিনির্ধারকরা জানান, ২০১৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় থেকেই মঞ্জুর ওপর দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। আর সম্প্রতি খুলনা মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার পর প্রকাশ্যে দল ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা এবং দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনা ভালো চোখে নেয়নি বিএনপি। এই ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বরং দলের মধ্যেই নেতাবাচক প্রভাব পড়তো। এমনকি মঞ্জু ভুল স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেনর কাছে ক্ষমা চাইলে অব্যাহতি প্রত্যাহার হতেও পারে বলে মনে করেন তারা।
জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর কমিটিতে সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন আহ্বায়ক করা হয় শফিকুল আলম মনাকে, ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এবং সদস্য সচিব করা হয় শফিকুল আলম তুহিনকে। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই মঞ্জুর অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সদর থানা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বলেন, আমরা অবাক, বিস্মিত ও হতভম্ব। খুলনায় বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম, সফলতা-ব্যর্থতা যা হয়েছে, নজরুল ইসলামের হাত ধরেই হয়েছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুও সামাজিক যোগাযোগ মধ্যেমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এবং কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে তিনি একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর তাকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাবে তিনি অযোগ্যদের দিয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করে যোগ্য ও ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। তার ওই জবাবে হাইকমান্ড সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমি দল পুনর্গঠনে অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বলেছি, হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। তারপরও পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দল আমার প্রতি অবিচার করেছে। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বিএনপি করি। জিয়াউর রহমানের আদর্শে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজনীতি করি। দলের এই দুঃসময়ে দল যেন সঠিক পথে থাকে, সঠিক ধারায় থাকে সেটাই চাই। কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিনি। দলের সব কর্মসূচি সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। খুলনায় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাহসী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছি।
এদিকে মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় গত শনিবার খুলনায় বিএনপির ১৬ জন নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। খালিশপুর থানা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ও নগর শাখার কোষাধ্যক্ষ এসএম আরিফুর রহমান মিঠু পদত্যাগ করে দলের মহাসচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, দলের মূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি মহানগরের কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক দুটি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।
এদিকে খুলনা মহানগরীর ২২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। এরা হলেন- ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমকেএ তরিকুল্লাহ্, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ কামাল টিটো, সদস্য মো. সামছুল আলম খান, মো. তারিকুল আলম, সাহেব আলী, মো. নজরুল ইসলাম নান্না, মো. রফিক, মো. ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর মল্লিক, মো. বেলাল তালুকদার, এসএম শাহাব উদ্দিন, মো. আবুল বাশার ও কবির আহমেদ। নগরীর ২২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমকেএ তারিকুল্লাহ বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানার পর তাৎক্ষণিক আমি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে অসম্মান ও অমর্যাদাকর পদক্ষেপ এবং সারাদেশে বিএনপির কমিটি গঠনের হাল-হকিকত দেখে আমরা বর্তমান দলের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখতে পারছি না বিধায় পদত্যাগ করেছি। অপরদিকে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের ১ম যুগ্ম-আহ্বায়ক সারুজ্জামান মুকুল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
নবগঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, জিয়াউর রহমানের একটি কথা আছে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমাদের আগে অনেকেই দলে ছিলেন এখন নেই কিন্তু বিএনপি আছে। সময়ের সাথে সাথে শক্তিশালী হয়েছে। এই দলে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়া পরিবার ছাড়া আর কেউ অপরিহার্য নয়।
তিনি বলেন, মহানগরের ইউনিটগুলোতে ১২-১৪ বছর ধরে কোন সম্মেলন-কমিটি হয় না। নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এই অবস্থায় সামনে স্বৈরাচারবিরোধী, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলন কোনভাবেই সম্ভব হতো না। তাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংগঠন শক্তিশালী করতে যে কমিটি দিয়েছে সেটির সাথে মহানগরীর সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ আছে। তিনি জানান, কমিটি ঘোষণার পর নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিরুজ্জামান মনির বাসায় তারা গিয়েছিলেন, মনি দেখা করে অভিনন্দন জানালেও মঞ্জু বাসায় থেকেও দেখা করেননি। শফিকুল আলম বলেন, তারেক রহমান এক নেতার এক পদ দেখতে চান, এটার জন্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু অনেক সুযোগ পেয়েছেন, এতোদিনে তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে পারতেন।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতা বলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যৌক্তিক কারণ এবং সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর কারণে যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে বা করতে চায় সেটি সমীচিন হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ