Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাণিজ্যমেলা : যাতায়াত ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এই প্রথম এখানে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৫ সাল থেকে শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। সেটা স্থায়ী জায়গা ছিল না। অস্থায়ীভাবেই সেখানে বাণিজ্য মেলা হতো। পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরে যেখানে বাণিজ্যমেলা হতে যাচ্ছে, সেটা বাণিজ্যমেলার জন্য স্থায়ী জায়গা। বাণিজ্যমেলার স্থায়ী জায়গার তাকিদ শুরু থেকেই অনুভূত হয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত তার পূর্বাচলেই স্থায়ী জায়গা হলো। এটা বড় ধরনের একটা অর্জন ও অগ্রগতি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পূর্বাচল এলাকায় জনবসতি তুলনামূলকভাবে কম। তার আশপাশে গ্রাম। ওই এলাকায় যাতায়াতের পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট নেই। নতুন শহর হিসেবে পূর্বাচলকে গড়ে তোলার সরকারি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ অবশ্য চলছে। কুড়িল ফ্লাইওভার মোড় থেকে মেলাঙ্গণ প্রায় ১৬ কিলোমিটার। এই রাস্তায় যানবাহন বলতে বিআরটিসি বাস ও রিকশা। যানবাহন পেতেও দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। কুড়িল ফ্লাই ওভার মোড় থেকে পূর্বাচল অভিমুখী ৩০০ ফিট রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় যানজট ছাড়াও যাত্রীদের নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বাণিজ্যমেলা শুরু হলে এ রাস্তায় যান চলাচল আরো বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে মেলায় যাতায়াতকারীদের আরো ভুগতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মেলার প্রবেশমুখের দুই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ জন্য বিশেষভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। এদিকে ১০০ ফিট খাল খননের একটি প্রকল্প চলমান আছে। পূর্বাচলের মাঝখান দিয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে বা ঢাকা বাইপাস রাস্তা দুই লেন থেকে ৪ লেনে উন্নীত করার কাজে অগ্রগতি নেই। বর্তমানে দুই লেনের রাস্তাটিতে বিপুল সংখ্যক মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।

পূর্বাচলমুখী ও পূর্বাচলস্পর্শকারী কোনো রাস্তাই মসৃণ যাতায়াতের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চালু থাকায় রাস্তার পাশে মাটি, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদির স্তূপ জমে থাকায় যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো কোনো রাস্তার অংশবিশেষে পানি-কাদাও জমে আছে। ধুলাবালির উপদ্রবের তো সীমাপরিসীমাই নেই। রাস্তাঘাটের অভাব, যানবাহনের সঙ্কট, অবনত পরিবেশ মেলায় যাওয়ার ব্যাপারে অনেককে নিরুৎসাহিত করতে পারে। অথচ, মেলায় যাতায়াত ও বেচাকেনা বৃদ্ধি পাক- এটাই সকলের প্রত্যাশা। যেহেতু বাণিজ্যমেলার কারণে যান ও জনচলাচল বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, সুতরাং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ট্রাফিক ব্যবস্থা সুচারু না হলে যানজট ও জনভোগান্তি দুর্বিষহ আকার ধারণ করতে পারে। মেলা উপলক্ষে নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। রাজধানীপ্রান্তে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস। তাদের যাতায়াতে ব্যাঘাত ও স্থানিক পরিবেশ দূষিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এই দিকটিও উপেক্ষাযোগ্য নয়। বাণিজ্যমেলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বটে এবং এই গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। তাই বলে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতের কাজ ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ যাতায়াত-উপযোগী পর্যায়ে পৌঁছাবে। মেলা শুরুর আর মাত্র ক’দিন বাকী। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এ বিষয়ক এক রিপোর্টে যে চিত্র উঠে এসেছে, সেটা আশাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কুড়িল ফ্লাইওভার মোড় থেকে মেলাঙ্গণ পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০টি বিআরটিসি বাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা পর্যাপ্ত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অসম্ভব নয়। পরিবেশ রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।

বাণিজ্যমেলার আয়োজন করলেই হবে না, তাকে সফল করে তুলতে হবে। ইতোপূর্বে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলাগুলো সফল হয়েছে। দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে। প্রতি বছরই মেলার পরিসর বিস্তৃত হয়েছে। দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণও বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় স্থায়ী মেলাঙ্গণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলাকে যে কোনো মূল্যে সফল করতে হবে। জানা গেছে, মেলার স্থায়ী, অস্থায়ী স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ জোর গতিতে চলছে। অন্যান্য নির্মাণের কাজও চলছে। মেলার আগে সব কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছে। তবে রাস্তা ও যাতায়াত নিয়ে যে আশঙ্কা, সেটা দূর হবে কিনা সন্দেহ। অনেকেই বলছেন, এবারের মেলা আগের মতো হয়তো জমবে না। যাতায়াতের সমস্যা ও যানজট এর প্রাধান কারণ হতে পারে। তাই বাণিজ্যমেলা সফল করতে রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন, সংস্কার দ্রুত শেষ করতে হবে। যাত্রীবাহী যানের সংখ্যা বাড়াতে হবে, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে প্রয়োজনানুগ করতে হবে। দরকার হলে এসব কাজ শেষ করার জন্য মেলা এক-আধ সপ্তাহ পিছিয়েও দেয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে যথোপুযক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাণিজ্যমেলা


আরও
আরও পড়ুন