পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরেণ্য সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আর নেই। সাংবাদিক সমাজে ‘রিয়াজ ভাই’ হিসেবে পরিচিত রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজার পর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জাতীয় প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সমবেদনা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের লাশ জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। সাংবাদিক, সহকর্মী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাকে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানেই বাদ যোহর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিকতায় বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জাতীয় প্রেসক্লাবের চার বারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। রিয়াজ উদ্দিনের ভাই কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন জানান, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ’তে নেয়া হয়।
১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর নরসিংদীর মনোহরদীতে জন্মগ্রহণ করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। খ্যাতিমান এই সাংবাদিকের সাংবাদিকতা জীবন শুরু ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়। তিনি দৈনিক ইনকিলাবের সহযোগী ইংরেজি পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও দ্য নিউজ টুডে পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি একুশে পদক, মওলানা আকরম খাঁ পদক, অতীশ দীপঙ্কর পদক লাভ করেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন’, ‘আরব্য রজনী’ ও ‘পারস্য রজনী’।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। তিনি সত্তর ও আশির দশকে অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ ও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোট চার মেয়াদে ৮ বছর জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (সাফমা) সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন।
বরেণ্য সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এক শোকবার্তায় বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন; রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ তাদের অন্যতম। তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষ নেতৃত্বগুণ সম্পাদক পরিষদকে বিকশিত হতে সহায়তা করেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন মুক্ত চিন্তার মানুষ। তিনি সাংবাদিকতার মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান শোকবার্তায় বলেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা পেশার অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক। তার মৃত্যুতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক ডা. নূরুল ইসলাম হাসিব। ডিআরইউ নেতারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম এক শোকবার্তায় বলেন, রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা রক্ষা ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে সাহসী ভ‚মিকা রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন দেশের সাংবাদিক জগতের আলোকবর্তিকা। সাংবাদিকদের অপর অংশ তথা বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোকবার্তায় বলেন, রিয়াজ উদ্দিন স্পষ্টভাষী ও মুক্তচিন্তার মানুষ; তিনি চিন্তা ও লেখনীর স্বাধীনতায় গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। কলম সৈনিক হিসেবে তিনি দেশ ও সমাজের নানা অসংগতি নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টাস ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল গভীর শোক প্রকাশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।