মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্ব›দ্ব বিশ্বকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছিল। এখন, মার্কিন-চীন দ্ব›দ্ব আবারো বিশ্বের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্য তার নিজস্ব উদ্দেশ্য এবং স্বার্থ অনুসারে বিশ্বের দেশগুলোর ওপর ক্রমাগতভাবে চাপ দিয়ে চলেছে। একটি সাক্ষাৎকারে বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক এই দ্ব›দ্ব সম্পর্কে তার নিজস্ব মতামত এবং মূল্যায়ন ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি ট্রুথ আউটকে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:
সঠিক চিন্তাধারার লোকেরা বুঝতে পারেন যে, সেকেলে জাতিসংঘ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নীতিমালা নতুন শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। পশ্চিমারা এই নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে একটি চীনকে সুশৃঙ্খলভাবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিশেষভাবে উৎসাহী ছিল। তবে, তাদের পরিকল্পনাটি ফলপ্রসূ হয়নি। চীন যখন যা করতে চায় না, তখন তারা তা করতে অস্বীকার করে। এবং তাদের ভয় দেখানো যায় না। যখন ওয়াশিংটন অনুধাবন করেছে যে, চীন সফলভাবে তাদের নিয়মগুলোকে অমান্য করছে, তারা চীনের অবাধ্যতাকে বিশে^ মার্কিন আধিপত্যের প্রতি হুমকি হিসেবে নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজের ক্ষতি করে চীনের প্রযুক্তিগত বিকাশকে বাধা দেয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছে। দেশটির কাছে ‘চীন হুমকি’ কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। চীনা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচারণার একটি দিক হলো অন্যদের চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা। কিন্তু চীনারা বিশ্বব্যাপী ভোকেশনাল কলেজগুলোর একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করে কয়েক ডজন দেশের শিক্ষার্থীর চীনা প্রযুক্তির উপর পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশকে অমান্য করছে এবং চীনা প্রযুক্তির বিশ্বায়ন ঘটাচ্ছে। এটি চীন এবং গেøাবাল সাউথের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্ত করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার একটি অংশ, যেটিকে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতার চাবিকাঠি হিসাবে দেখে। পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ নিভা ইয়াউ এবং ডার্ক ভ্যান ডার ক্লির মতে, ‘আরো খারাপ হ’ল, তারা মনে করে, চীন সরকার আয়োজক দেশগুলোর কথা শুনতে ইচ্ছুক এবং স্থানীয় প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যারা স্থানীয় প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষতা উন্নত করবে এবং চীনা কক্ষপথের মধ্যে এবং চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব একটি সমাজ বিকাশ করতে সক্ষম হবে।
এসব প্রকল্প বৃহত্তর ‘চীনা বৈশ্বিক নীতি কাঠামো’র মধ্যে পড়ে, যা এখন ইউরেশিয়া জুড়ে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং শিগগিরই তুরস্ক, পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে পৌঁছে যাবে। আফগানিস্তান যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে বাঁচতে পারে, তবে এটিও সম্ভবত চীন-ভিত্তিক সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কক্ষপথের মধ্যে চলে আসবে, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগদান করার জন্য। চীন আফগানিস্তানের তার উল্লেখযোগ্য খনিজ সম্পদকে চীনের সুবিধার জন্য কাজে লাগানোর জন্য দেশটির অর্থনীতি থেকে মার্কিন আমলের আফিম রপ্তানি থেকে সরিয়ে নিতে পারে। চীনের অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য (ইসরায়েলসহ) এবং এমনকি ওয়াশিংটনের বাড়ির উঠোন ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে, এ ধরনের অনুপ্রবেশকে আটকানোর জন্য কঠোর মার্কিন প্রচেষ্টা সত্তে¡ও।
সমুদ্র আইনের চীনা অপব্যবহারের বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র বাদে সমস্ত সামুদ্রিক শক্তি দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে: যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর নেতৃত্বে ক‚টনীতির মাধ্যমে এগুলোকে মোকাবেলা করা উচিত, অত্যন্ত উস্কানিম‚লক কাজের দ্বারা নয়, যা পূর্ণ মাত্রায় নতুন করে আরো একটি স্নায়ূ যুদ্ধের হুমকি বৃদ্ধি করে। এদিকে, তাইওয়ান মার্কিন-চীনা সম্পর্কের মধ্যে একটি কণ্টকাকীর্ণ সমস্যা হিসাবে অবস্থান করছে। চীনা সামরিক বাহিনী তাইওয়ান প্রণালীতে তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে এবং কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞের মতে, এমনকি আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও মজুদ করছে। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অক্টোবরের শেষের দিকে সিএনএন এর ‘টাউন হল’ সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।
আসন্ন যেকোনো পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিহত করতে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি এ বছর কার্যকর হয়েছে। যদিও মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে, বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীন এখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে পিছিয়ে আছে। এই নীতি অব্যাহত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যুক্তরাষ্ট্র তার অত্যন্ত উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের অবসান ঘটিয়ে এবং চীনের সাথে একটি অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পারস্পারিক দ্ব›দ্বকে সহজতর করতে পারে। অত্যাবশ্যক উপসংহারটি সহজ: হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন আমরা সকলে যে জটিল সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি সেগুলো নিয়ে একসাথে কাজ করবে, অথবা তারা বাকি বিশ্বকে তাদের সংঘাতের মধ্যে টেনে নিয়ে তারা এবং বিশ্ব একসাথে ধ্বংস হয়ে যাবে। সূত্র: ট্রুথ আউট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।