Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারে পর্যটক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা পর্যটন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক খবর

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক ঠেকাতে কোন মহলের কারসাজি কিনা খতিয়ে দেখার দাবি, চিহ্নিত বখাটে আশিক সরকারী দলের সাথে সম্পৃক্ত

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৪ পিএম

কক্সবাজারে পর্যটকদের কাছ থেকে গলাকাটা বাণিজ্যের খবর চাউর হওয়ার রেষ কাটতে না কাটতেই পর্যটক গৃহবধূ ধর্ষণের খবরে কক্সবাজারের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের ব্যাপক পর্যটক ঠেকাতে এটি কোন মহলের পরিকল্পিত কারসাজি কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে।

গতকাল সৈকত এলাকায় এক পর্যটক গৃহবধূ সংঘবদ্ধ বখাটেদের হাতে ধর্ষণের ঘটনায় এখন তোলপাড় চলছে।‘ধর্ষণের শিকার’ ওই নারীর অভিযোগ, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেও তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেনি পুলিশ। পরে তিনি অভিযোগটি র‍্যাবকে জানালে র‍্যাব তৎপর হয়ে তাকে উদ্ধার করে।

ওই পর্যটক গৃহবধূর ভাষ্যমতে ৩ বখাটে যুবক মিলে কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে তুলে নিয়ে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ও হত্যার ভয় দেখিয়ে দুবার সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে ওই গৃহবধূ। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করে র‍্যাব-১৫।

ঘটনাস্থল হোটেল জিয়া গেস্টইনের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় নাকি ওই আশিক ছেলেটার সাথে একটি মহিলার স্বামী পরিচয় দিয়ে ওই হোটেলে উঠেছিল। আর রাতে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ঘটনা প্রচার করায় বিষয়টি পুলিশের কাছেও সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে।

এবিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল জিয়া গেষ্টইন এর ম্যানেজার ছোটনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে ব্যস্ততম বিনোদন কেন্দ্র লাবণী পয়েন্টে টুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক তদারকি রয়েছে। সেখানে এরকম একটি ঘটনা ঘটার বিষয়টি যেমন টুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক ঠেকাতে কোন মহল থেকে এটি পরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র কিনা তাও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দাবী উঠেছে সচেতন মহল থেকে।

ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করে জানান, ‘বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে এসে শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে উঠেন তারা। সেখান থেকে বিকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ঘুরতে বের হলে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে।
পরে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় গৃহবধূকে তুলে নেয় ৩ যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে ওই ৩ জন। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানেও আরেক দফা তাকে গণধর্ষণ করে যুবকগুলো। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।

গৃহবধূ আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তা কক্ষের দরজা খুলে ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে না এসে পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়।

তারপর পাশের একজনের সহযোগিতায় কল দেন র‌্যাব-১৫ কে। তারা এসে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। পর্যটন গলফ মাঠের এলাকা থেকে তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, সামান্য ধাক্কা লাগার কারণে তারা আমাকে এভাবে ক্ষতি করবে তা কল্পনাও করিনি। শহর অপরিচিত তাই জায়গা ও তাদের চিনতে পারিনি। তাদেরকে বার বার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’

বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, ‘বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওই নারীর ফোন পাওয়ার পর র‍্যাব ওই নারীর স্বামী-সন্তানকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে হোটেলের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় র‍্যাব।

র‍্যাবের ভাষ্য, শনাক্ত হওয়া ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। র‍্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এই মামলায় সে জেলে ছিল। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন।সে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বেড়ায় এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তার ছবি দেখা গেছে। আর জয়া তার অন্যতম সহযোগী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বখাটে আশিকের ছবি প্রকাশের পরে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্ট সহ ওই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন সে একজন বখাটে এবং মাস্তান। সে সব সময় সেখানে মাস্তানি করে বেড়ায়। কিন্তু পুলিশের হাতে সে ধরা পড়ে না।

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

কয়দিন আগে পর্যটকদের কাছ থেকে আলু ভর্তা ডাল ভাতে ৩০০ টাকা আদায়, অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া ও যানবাহন ভাড়ায় গলাকাটা বাণিজ্যের পর এবার সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে এক গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার

হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে কক্সবাজার এর সচেতন মহলকে।সচেতন মহলের মতে কক্সবাজারে পর্যটক থাকাতে কোন মহল থেকে এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ