Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমনা কালীমন্দির উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট

ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের স্থান : রামনাথ কোবিন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সফররত ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরের সংস্কারকৃত অংশের উদ্বোধন করেছেন। ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে তিনি সংস্কারকৃত ভবনের উদ্বোধন করেন। মন্দিরে পূজাও দেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। কোবিন্দ আমন্ত্রিত অতিথি, মন্দির কমিটির সদস্যবৃন্দ, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং পূজারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের স্থান।
গতকাল সকাল সাড়ে দশটায় ভারতের প্রেসিডেন্ট তার স্ত্রী ফার্স্টলেডি সবিতা কোবিন্দ এবং কন্যা স্বাতী কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে রমনা কালীমন্দিরে পৌঁছান। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান মন্দির প্রাঙ্গণে ভারতের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান। মন্দিরে পৌঁছলে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সিঙ্গা ফুঁকিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। মন্দিরের সংস্কারকৃত অংশের উদ্ধোধনের পর ভারতের প্রেসিডেন্ট তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে মন্দিরে পূজা দেন।
এরপর ভারতীয় সম্প্রদায় এবং ঢাকায় ভারতীয় বন্ধুদের জন্য এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ বলেন, একজন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করা আনন্দ ও সম্মানের। পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের উষ্ণতা ও ভালোবাসা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে। আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল ত্যাগের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।
ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের বিশেষ স্থান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে আত্মীয়তা, ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে রচিত এক অনন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের বিচক্ষণ নেতৃত্বের দ্বারা লালিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে ভারতের প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামের কথাগুলো আমার মনে পড়ছিল। আমি শ্রদ্ধা জানাই সেই সব নারীদের প্রতি, যাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করা হয়েছিল, অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আপনাদের সঙ্গে দেখা করার ঠিক আগেই আমি ঐতিহাসিক রমনা কালীমন্দির থেকে ফিরেছি, যেখানে আমার সংস্কারকৃত মন্দির উদ্বোধন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারতের সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধ্বংসকৃত মন্দিরটি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। দখলদার বাহিনীর হাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়। এই মন্দিরটি ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক। এটি আমার বাংলাদেশ সফরের একটি শুভ সমাপ্তি ঘোষণা করবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণের লড়াই ন্যায়সঙ্গত ছিল। এই লড়াই ছিল মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে ভারত প্রতিশ্রæতিবদ্ধ বলে জানান তিনি। ভারতের প্রেসিডেন্ট বলেন, একটি প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজে বাংলাদেশের মৌলিক মূল্যবোধ বজায় রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান অবদান। তিনি আরও বলেন, ভারত এমন একটি বাংলাদেশকে সমর্থন করবে, যা এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আবিভর্‚ত মূল্যবোধগুলোকে তুলে ধরে। বাংলাদেশের মানুষের সদিচ্ছা এবং বন্ধুত্বকে ভারত মূল্যায়ন করে বলে জানান রামনাথ কোবিন্দ।
রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে স্থল সীমানাও ভাগ করে নেয়া একটি দেশ হিসেবে ভারত এই সত্যটি সম্পর্কে সচেতন যে, একটি সুসংযুক্ত এবং উন্নত সমন্বিত উপ-অঞ্চল আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই চেতনার আলোকে, ভারত বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে তার যাত্রায় সহায়তা করতে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি উভয় পক্ষের ব্যবসায়ী স¤প্রদায়কে, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং আমাদের (ভারত) উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংযোগ নতুন উচ্চতায় নেয়ার জন্য এই সুযোগটি কাজে লাগাতে অনুরোধ করছি। আমরা তরুণ জাতি হিসেবে ভাগ্যবান, যাদের উদ্যমী এবং সৃজনশীল জনগোষ্ঠী রয়েছে। তরুণরাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের অবশ্যই এই জনসংখ্যাগত সুফল কাজে লাগাতে হবে, যাতে করে এটি জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে।
আমি আজ এখানে উপস্থিত সকল ভারতীয় নাগরিককেও অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি আপনারা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী, ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও দৃঢ় করেছেন।
তিন দিনের সফর শেষে গতকালই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই ছিল তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। এছাড়া গত বছর করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবের পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। তিনি এই সফরকে সবচেয়ে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। এরপর গতকাল দুপুরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ প্লেনে শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানান। গত বুধবার স্ত্রীসহ ঢাকায় আসেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ