Inqilab Logo

সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৩ রবিউল সানী ১৪৪৬ হিজরী

গান শোনায় ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড হাসিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার আসনে কিম জং উনের ১০ বছর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

কখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নিজের চাচাকে হিংস্র কুকুরের মুখে ফেলে হত্যা করার। কখনো দেশের সেনাপ্রধানকে তিনি ‘গায়েব’ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার ‘কে পপ’ (দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় পপ গান) শোনার ‘অপরাধে’ সাতজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অভিযোগ উঠল উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের বিরুদ্ধে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে দাবি করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি ‘কে পপ’ শোনা এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করার ‘অপরাধে’ ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অন্তত সাতজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেন কিম। এর মধ্যে ৬টি ঘটনা ঘটেছে হেসান প্রদেশে। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে কিমের নির্দেশে প্রিয়জনের মৃত্যুদণ্ড দেখতে নিকটাত্মীয়দের বাধ্য করা হয়েছিল বলে জানায় সংগঠনটি। ২০১৫ সাল থেকে অন্তত ৬৮৩ জন কিম-বিরোধী উত্তর কোরিয়ানদের সাথে এ নিয়ে তারা কথা বলেছে। তাতে জানা গেছে, কিমের প্রথম পাঁচ বছরের শাসনকালে নানা কারণে ৩৪০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এই তালিকায় রয়েছেন কিমের চাচা জ্যাং সং থেক ও দেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান রি ইয়ং হো। পাশাপাশি, বাবা কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে কিমের সরকার। রেডিও ফ্রি এশিয়া খবর দিয়েছে, টানা ১১ দিন চলবে না মদ্যপান। হাসতেও পারবেন না কেউ। দেশবাসীর চোখেমুখে কোনোভাবেই যেন খুশির ঝলক দেখা না যায়। আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানায়। অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার আসনে ১০ বছর ধরে বসে আছেন কিম জং উন। ২৭ বছর বয়সে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কখনও আলোচিত, কখনও সমালোচিত, কখনও বা জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেছেন কিম। আসলেই কি তার নেতৃত্ব চমকপ্রদ নাকি অন্য কোনো কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার দেশ সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে উত্তরসূরীদের কাছ থেকে ক্ষমতার আসন পেলেও নিজেই এখন অন্যভাবে চিনিয়েছেন বিশ্বকে। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুকালে কিম জং ইলের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এরপর বাবা কিম জং ইলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর ২৮ ডিসেম্বর নিজেকে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করেন কিম জং উন। কিম জং উন ইল সাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এবং সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কিম ইল সাং সামরিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি ডিগ্রি নিয়েছেন। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য বহু অর্থ ব্যয় করা তার নেশায় পরিণত হয়। তবে এর খেসারত দিতে হয় দেশবাসীকেই। গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি। তার ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে দেশ আরও বেশি দারিদ্র্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। করোনা মোকাবিলায় কিম জং উন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে এতে শুধু মানুষ নয়, বাণিজ্যেও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। ফলে খাদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সংকট প্রকট হয় দেশটিতে। যেখানে দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন হয় চীনের সঙ্গে। কিমের সরকারের দাবি, করোনা মহামারি মোকাবিলায় সাফল্য লাভ করেছে তারা। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে গেলেও কিম জং উন মাথা নত করতে নারাজ। বিদেশি শক্তির কূটনৈতিক জালে আটকা পড়েন না কিম, যদিও নিজ দেশের মানুষের তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে। সব সময় নিজেকে নিয়ে রহস্যময় কাণ্ড ঘটান কিম জং উন। মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যান। ফলে তাকে নিয়ে বৈচিত্র্য খবরও চাওড় হয় বিশ্বজুড়ে। ভিন্নমতাবলম্বী ও দলত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও কিম জং উন তার বাবার চেয়েও বন্ধুসুলভ এবং স্মার্ট। এবিপি, বিবিসি, সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উত্তর কোরিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ