২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
দেশের সর্বত্র শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছে। শীতের সাথে করোনার সংক্রমণও বেড়ে যাওয়ার আশংকা আছে। দেশে এসেছে নতুন অতিসংক্রামক অমিক্রণ ভেরিয়েন্ট। কক্সবাজারসহ কোন কোন জায়গায় ডেঙ্গু জ্বরও একটু বেশী মাত্রায় হানা দিয়েছে। অমনিতেই শীতে সর্দি, কাশিসহ কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। এর উপর ডেঙ্গু ও করোনার আক্রমণ। শীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশংকার কথা সকল বিশেষজ্ঞই বলে আসছেন। করোনা ভাইরাস নাকী শীতে ছড়ায় বেশী। এর সত্যতাও ইতোমধ্যে দৃশ্যমান রয়েছে। শীত প্রধান দেশগুলোতে করোনার উদ্বেগজনক সংক্রমণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দেশে শীতে সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, টনসিলের প্রদাহ, শ্বাসতন্ত্রের অ্যাজমা, হাত-পা ফেটে যাওয়া, মুখ-জিহ্বায় ঘা, বিভিন্ন চর্মরোগের মধ্যে খোস-পাঁচড়া ইত্যাদি বেশি দেখা দেয়। বয়স্কদের হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, পুরানো কাশি ইত্যাদি জটিলতার সৃষ্টি করে। বাচ্চাদের সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলে প্রদাহ ইত্যাদি বেশি হয়ে থাকে।
শীতের এ ঠান্ডা বা ফ্লুর প্রকটতা ইত্যাদি বেশির ভাগ অসুখের প্রধান কারণ বাইরের ঠান্ডা নয় বরং ঘরের ভেতরের জনবহুলতা এবং সংক্রমণের পরিবেশ। শীতের অসুখগুলো রাস্তাঘাটের ধুলাবালি, দূষিত বাতাস, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জীবনযাপনের কারণে হয়ে থাকে। সর্দি-কাশি ও ভাইরাস জ্বর-রাইনোভাইরাস এর জন্য দায়ী। জ্বর, মাথাব্যথা, মাথা ভারি বোধ হওয়া, সঙ্গে প্রচন্ড হাঁচি, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরা, খুশখুশি কাশি হয়ে থাকে। জ্বর, মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট/সিরাপ বয়সানুসারে দিনে তিনবার খাওয়ার পর দেয়া হয়। বর্তমানে মেফেনামিক এসিড জাতীয় ওষুধ মাথাব্যথায় বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বেশি তাপমাত্রায় মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে, শরীর স্পঞ্জ করতে হবে। হাঁচি-কাশির জন্য হিসটাসিন, সিটিরিজিন, ওরাটিডিন, কিটোটিফেন গ্রুপের ওষুধ দেয়া হয় একটি করে দিনে দুবার। বাচ্চাদের জন্য সিরাপ বয়সানুসারে দিনে দুবার দেয়া হয়ে থাকে। সঙ্গে আদা, চা, তুলসী রস,লেবু,মধু খুব ভালো কাজ করে।
টনসিলে প্রদাহ,শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ-পুরনো সমস্যা নতুন করে অথবা নতুনভাবে দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ অ্যালার্জির কারণ হলে অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রুপের ওষুধ খেতে হবে। সেই সঙ্গে হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে হবে। কখনো কাপড় জড়িয়ে গলা গরম রাখা হয়। নিউমোনিয়া- ০-৫ বছরের বাচ্চাদের বেশী হয়ে থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট, শব্দ হওয়া, বুকের ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া, কাশি, সঙ্গে হালকা জ্বর হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে বয়স এবং ওজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর (সালবিউটামল, থিওফাইলিন) ১ চামচ করে দিনে ৩ বার, অ্যালার্জির জন্য ১ চামচ দিনে ২ বার এবং জ্বর ১০০ ডিগ্রির বেশি হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দিনে ৩ বার দিতে হবে। রোগীর অবস্থা বিপদজ্জনক হলে ( খাওয়া বন্ধ করা, নিস্তেজ হওয়া) অতি সত্বর হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে নেবুলাইজার দিয়ে ব্রংকোডাইলেটর গ্যাস দিতে হবে। ব্রংকাইটিস- ফুসফুসে প্রদাহের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক। কাশির জন্য কফ এক্সপোরেন্ট, সালবিউটামল, অ্যামাইনোফাইলিন দেয়া হয়।
জিহ্বায় মুখের কোনায় ঘা- খাদ্যে ভিটামিন বি২, আয়রনের অভাব হলে ঠোঁটের কোণায় ঘাঁ হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফল খাওয়া উচিত। মুখে ঘাঁয়ের জন্য ট্যাবলেট রাইবোফ্লোবিন, মালটিভিটামিন ট্যাবলেট-ড্রপ ব্যবহার করা হয়।
হাত-পা ফেটে যাওয়া- অতিরিক্ত ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। পিওর ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী।
হাঁপানি- বয়স্কদের মধ্যে যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, বিশেষ করে ঠান্ডা অ্যালার্জি যাদের আছে শীতে এর প্রকোপ বেশি বাড়ে। গুরুতর সমস্যায় ইলহেলার, অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া সালবিউটামল, ভেনটোলিন অ্যামাইনোফাইলিন ট্যাবলেট সব সময় খেতে হয়। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি থাকলে অ্যান্টিহিস্টাইমিন, কিটোটিফেন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। দীর্ঘ সময়ের রোগী বা অতিরিক্ত শ্বাস কষ্ট হলে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। রোগীকে মাথার দিক উঁচুতে রেখে আলো-বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। ঠান্ডা, ধুলাবালি, অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখতে হবে।
খোস-পাঁচড়া- বাচ্চা, বয়স্ক ব্যক্তি, বস্তি এলাকা, ঘনবসতি নিম্নস্তরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এ রোগ হয়ে থাকে। সাবান দিয়ে ঘষে শরীরের সমস্ত ফুসফুসি উঠিয়ে ফেলতে হবে। শরীর শুকিয়ে ২৫% বেনজাইল বেনজয়েট ইমালসন বা ০.৫% পারমেথ্রিন (লরিক্স, লট্রিক্স,স্কাবেক্স) গলার নিচ থেকে সমস্ত শরীরে লাগাতে হবে। বেনজাইল বেনজয়েট পরপর তিনদিন, পারমেথ্রিন একদিন লাগিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে। ব্যবহার্য কাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে সিদ্ধ করে ধুতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে ইনফেকশন থাকলে। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন দিনে তিনবার দিতে হবে।
পরামর্শ- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাতে সাধারণ অসুখ থেকে নিজেদের নিজেরাই রক্ষা করা সম্ভব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের এক বিশাল কর্মক্ষেত্র, যার সমষ্টি দশ লাখ কোটি শ্বেতরক্ত কণিকা। সুষম খাদ্য, নিয়মিত শরীর চর্চা, মানসিক কষ্ট লাঘব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই সবদিকে খেয়াল রেখে জীবনযাপন করলে ছোটখাটো অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।