পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজ মহান বিজয় দিবস। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অবসান ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। অবিস্মরণীয় এই বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জাতীয় জীবনে সূচিত হয় নতুন অধ্যায়। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও অগণিত মুক্তিকামী মানুষের অপরিসীম ত্যাগ মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই যুদ্ধ ও বিজয় জাতীয় অগ্রগতির অভিযাত্রায় অন্তহীন প্রেরণার উৎস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় অনাগতকাল অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে। ইতিহাসের নানা পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠা যাদের রক্ত ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, আজকের দিনে সেই মুক্তিসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় স্মরণ করছি। তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সঙ্গত বিবেচনাতেই আমরা কী পেয়েছি, কী পাইনি, সাদামাঠা হলেও তার একটা হিসাব করা দরকার। একথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতার কিছু লক্ষ্য থাকে, যা আমাদেরও ছিল। স্বশাসন, সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল এবং সে সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হয়েছি। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ও জনসমর্থিত লক্ষ্যগুলো অর্জিত না হলে এ বিজয়কে সার্বিক অর্থে বিজয় বলে চিহ্নিত করা যায় না। সত্য বটে, পরাধীনতা ও পরশাসন থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকেও আমরা মুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সে মুক্তি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন করে মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার লড়াইয়ে আমাদের অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে প্রত্যাশিত মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আজকের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, সেই ৭১-এর জাতীয় ঐক্য অনেকাংশেই এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির একটা রাজনৈতিক খেলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ বেড়েছে। অপরাজনীতির চর্চা ব্যাপকতা লাভ করেছে। এটা জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কে না জানে, গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। গণতন্ত্রে জনগণই ক্ষমতার উৎস। অথচ, জনগণ আজ মূল্যহীন অনেকটাই। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই নির্বাচন, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের মতো মৌলিক বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। রাজনৈতিক বিভক্তি, দুর্নীতি, জবরদস্তির অভিযোগ স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। এসব সমস্যা ও সংকট নিরসনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হবে। স্বাধীনতার রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আশা, আকাক্সক্ষা ও সাধনা নিয়ে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা তিনি পূরণ করে যেতে পারেননি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন ও সাধনা বাস্তবায়নে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থনীতির যাবতীয় সূচক ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ এখন সোনার বাংলার পথে দ্রুত অগ্রসরমান। এ কৃতিত্ব সর্বাংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই।
স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে, উন্মুক্ত রাজনীতি, গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তা, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস ও দুর্নীতি রোধ করা অপরিহার্য। গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরন্তর প্রায়াস চালাতে হবে। এখন বেশি উন্নয়ন, কম গণতন্ত্রের কথা অনেকে বলেন। এতে মনে হতে পারে, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বুঝি পরস্পরবিরোধী। মোটেই তা নয়। আমাদের গণতন্ত্র যেমন দরকার, তেমনি উন্নয়নও দরকার। ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্রে উন্নয়ন সুষম ও দ্রুতায়িত হয়। সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে ও করছে। এসব প্রকল্প জাতীয় উন্নয়ন ও কল্যাণকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে গণতন্ত্র কোনো বাধা নয়, বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসন যদি প্রতিষ্ঠা লাভ করে তাহলে তা হবে উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অবারিত করা এবং গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্কুচিত গণতন্ত্রর দেশে টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে ওঠে। দুঃখের বিষয়, রাজনীতিতে এক ধরনের মেধার সংকট চলছে। এতে জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে বিভক্তির মধ্যে পড়েছে। এই বিভক্তি কাম্য হতে পারে না। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুবিচারের নিশ্চয়তা ও সুশাসনই কেবল দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ এক অমিত সম্ভাবনার দেশ। সম্পদ, শক্তি ও উদ্যমে ভরা দেশটি দ্রুতই মধ্যম ও উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান লাভ করেছে। আমরা পেছনে হাঁটতে চাই না, সামনে এগিয়ে যেতে চাই। জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রধান দায়িত্ব রাজনীতিকদের। আমরা আশা করতে চাই, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব শুভবুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দেবে। আমরা আশা করবো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন তাঁর বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তেমনি জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টিতে আরো দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। পরিশেষে মহান বিজয় দিবসে আমরা সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।