পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ৮ম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন। তাঁর সভাপতি হওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনুমিত হলেও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বেশ জল্পনা-কল্পনার অবতারণা হয়। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, বিষয়টি কেবল তিনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। তিনি বিষয়টি সাসপেন্সের মধ্যে রেখে দেন। ওবায়দুল কাদেরকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পাবেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই চাঁদ হয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিল অধিবেশনের শেষ পর্বে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। তার এ প্রস্তাব সমর্থন করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এরপর বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলে সমর্থন করেন বিদায়ী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। দুটি পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রস্তাব না আসায় নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দু’জনকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় আমরা তাকেও আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।
সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩৫ বছর ধরে একটা দলের সভাপতি আমি। এত দিন ধরে একটা পদে থাকা উচিত নয়। একদিন তো আমাকে বিদায় নিতেই হবে। আপনারা আবারও আমাকে সেই কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন এবং আমি সেটা গ্রহণও করেছি। এ দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে সচেষ্ট থাকব। কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। উন্নয়নের কথা বলতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কমিটিকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, প্রত্যাশা করছি আওয়ামী লীগের নতুন এই কমিটি জাতির যে আশা-আকাক্সক্ষা গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, তার জন্য কাজ করবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। দলটি মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে। প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হওয়ায় দল এবং সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি বড় হয়ে দেখা দেয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলটির ভূমিকা যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে যেভাবে দলটি ক্ষমতাসীন হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল এবং দেশের নাগরিক সমাজ এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রগুলো ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ, দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক কর্মকা- কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী দল দলন ও মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ, রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন ও গণতান্ত্রিক দলের সরকারের কাছ থেকে দেশের মানুষ এসব আশা করে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলটি ক্ষমতাসীন হয়ে যতটুকু উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই হয়েছে।
কাউন্সিল অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচন। আমি চাই না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক। প্রধানমন্ত্রীর এ কথায় দেশের মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ কেউই আশা করে না, আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হোক। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের নির্বাচন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বারবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আজীবন নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানুষের নশ্বরতা এবং সময়ের কারণেই এক সময় চলে যেতে হয়। কেউই আজীবন একই অবস্থানে থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর কথায় চিরন্তন এ সত্য কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। বলা বাহুল্য, দেশ পরিচালনা অনেক কঠিন একটি কাজ। একই সঙ্গে এটি একটি সম্মিলিত কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিকভাবে দেশে যে একধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে যে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে, সে কমিটি দেশে বিদ্যমান সংকট ও সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম হবে। দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে গণতন্ত্রকে বিকশিত করার আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।