মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ওয়াহাবি তরিকা ইসলামের একটি অতিচরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্করণ, যা ইসলামের প্রোটেস্ট্যান্টবাদ বা বিশুদ্ধবাদী ও চরমপন্থী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত এবং সুন্নি তরিকা থেকে ভিন্ন। ৯/১১-এর সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ওয়াহাবিবাদ আলোচনায় আসে এবং সমালোচিত হয়। এরপর, ২০১৮ সালের ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে ওয়াহাবি কার্যক্রম নিয়ে ‘সউদী প্রিন্স ডিনাইস কুশনার ইজ ইন হিজ পকেট’ শীর্ষক ৭৫ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার দেন সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান।
প্রিন্স সালমান সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলায় সউদী আরব মুসলিম দেশগুলোতে ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারে অর্থায়ন করে। এর লক্ষ্য ছিল, মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে পশ্চিমাদের জয়লাভ পাইয়ে দেয়া। রাশিয়াভিত্তিক স্পুটনিক নিউজ, আরটিসহ বিশ্বের আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়।
প্রাচীনতম সূত্র অনুসারে, ওয়াহাবিবাদের জনক মুহাম্মদ ইব্নে আব্দুল আল-ওয়াহাব মনে করতেন যে, কুরআনের মতো পবিত্র গ্রন্থ ঐশ্বরিক নয়। ডেনিশ পরিব্রাজক খাস্তেঁ নিবুহ্ তার ‘বেশাঁইবুং ফন আহাবিয়ন বা ‘আরবের বর্ণনা’ (১৭৭২) গ্রন্থে ওয়াহাবিদেরকে দেবতাবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিবুহ্রের মতে, মুহাম্মদ ইবনে আব্দ আল ওয়াহাব বিশ্বাস করতেন না যে, নবী মুহাম্মদ একজন নবী ছিলেন, বরং তিনি তাকে একজন মহান পন্ডিত বলে মনে করতেন।
ওয়াহাবিবাদ অনুসারে, নবীদের আত্মার কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া, বুজুর্গদের কবর জিয়ারত করা এবং তাদের ওছিলায় প্রার্থনা করা, কবরের ওপর মাজার নির্মাণ করা এবং নবী মুহাম্মদ (সা:) এবং পীর-পয়গম্বরদের রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নগুলোর প্রতি সম্মান জানানো হ’ল শিরক। এ মতবাদ অনুসারে, যারা এসব কাজ করে এবং নামাজ পড়ে না, তাদের কাফের বলে গণ্য করা হয়।
সউদী আরবের মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব (জন্ম ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) ছিলেন একজন সালাফি পন্ডিত এবং ওয়াহাবি তরিকা বা মতবাদের জনক। মূলত তার নামানুসারে এ তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। তিনি মক্কা ও মদিনাসহ বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেন এবং বহু বছর ধরে বসরায় অবস্থান করেন, যেখানে পূর্ব ভারতীয় কোম্পানিগুলো অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। তিনি এরিস্টটলীয় দর্শন অধ্যয়নের জন্য ইরানে যান এবং ইসমাইলি ধর্মপ্রচারক আল-মাকরামির সাথে সাক্ষাৎ করেন।
পরে, আল-ওয়াহাব নিজের শহরে ফিরে এসে তার ভ্রমণের সময় যে সংস্কারবাদী ধারণাগুলো অর্জন করেছিলেন তা প্রকাশ করেন। তিনি ইসলামিক পন্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এবং তার নিজের মতবাদের সাথে সুন্নিবাদের মাযহাবের ধারণাগুলোকে মিশিয়ে একটি নতুন সম্প্রদায় গঠন করেন। নিজস্ব মতবাদ প্রচারের জন্য তিনি দিরিয়ার প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সউদ আল মুকরিনের সাথে একটি জোট গঠন করেন এবং তার সুরক্ষার অধীনে আশয় নেন।
ব্রিটেনের রানী প্রথম এলিজাবেথের শাসনামলে এবং পরে সংস্কারের মাধ্যমে যখন ব্রিটেনে প্রোটেস্ট্যান্টবাদ বা কট্টর খ্রিস্টবাদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল, তখন সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিতে বিশ্বাস, মৃতদের জন্য প্রার্থনা করা, সাধুদের কাছে আবেদন জানানো এবং পবিত্র ধ্বংসাবশেষকে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিরোধিতা করা হয়েছিল। আল-ওয়াহাব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ওয়াহাবিবাদও একসময় ইসলামের প্রোটেস্ট্যান্টবাদে পরিণত হয়।
বর্তমানে বিশ্বের ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কাতার (৪৬.৮৭ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪৪.৮ শতাংশ), এবং সউদী আরবে (২২.৯ শতাংশ) বাস করে। এছাড়া, বাহরাইনের ৫.৭ শতাংশ এবং কুয়েতের ২.১৭ শতাংশ জনগণ ওয়াহাবীপন্থী। সউদী আরবের ওয়াহাবীপন্থীদের অধিকাংশ নজদ (রিয়াদ) অঞ্চলে বাস করে। সউদী আরব, কাতার, শারজাহ এবং রা’স আল খাইমাহ’তে সরকারিভাবে ওয়াহাবী তরিকা অনুসরণ করা হয়। (চলবে) সূত্র : ডেইলি সাবাহ, উকিপেডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।