পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্জ্য এখন আর ঝামেলা নয়, বরং সম্পদে পরিণত হচ্ছে। বহির্বিশ্বে শহরগুলোর মতো আমাদের দেশের শহরগুলোকে আধুনিক সুন্দর ও সাবলিলভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরকে বর্জ্যমুক্ত ও বর্জ্যকে সম্পদে পরিবর্তনের জন্য রিসাইক্লিংয়ের বিকল্প নেই। আমাদের পরিবার, কলকারখানা, মিল-গার্মেন্ট, চিকিৎসালয় থেকে উৎপাদিত বর্জ্যকে যদি আধুনিক পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং করা যায়, তাহলে একদিকে উৎপাদন ব্যবস্থায় নতুন কাঁচামালের উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, প্রকৃতি তার পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্য সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপ হলো:
নাগরিক সচেতনতা ও উদ্ভুদ্ধকরণ কর্মসূচি: এই বিষয়ে নগর বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পাড়া বা মহল্লায় নাগরিক সমাবেশের আয়োজন বা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। বর্জ্য থেকে যে আয় করা যায় তা বোঝাতে হবে। এই ব্যপারে যারা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করবে, তাদের বাসা-বাড়ির কর মওকুফ অথবা সংবর্ধনা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আগ্রহী মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। আলাদাভাবে বর্জ্য সংগ্রহের জন্যে কতৃপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের ডাস্টবিন ও ঝুড়ি সরবারহের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি পাবলিক প্লেস, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিজেদের বর্জ্য সংগ্রহের ডাস্টবিন ব্যবহারের পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং অথবা কঠিন আইনজারি ও জরিমানা ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি: বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা ও চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথককৃৎ বর্জ্যগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন যানের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে পচনশীল বর্জ্যগুলোকে প্রতিদিন সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। রিসাইক্লিং যোগ্য বর্জ্যগুলোকে সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন কেজি ধরে কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পচনশীল বা অনুজীব দ্বারা বিয়োজিত বর্জ্যগুলোকে খালি বা উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে না দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে জৈব সার ও গ্যাস ডিজেল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই বিষয়ে আশার কথা হচ্ছে যশোর শহরে ইতোমধ্যে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯ শত ৭ টাকা ব্যয়ে শহরতলি ঝুমঝুমপুরের ময়লা খানায় পৌরসভা নিজস্বভাবে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট স্থাপন করার মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করছে।
অপচনশীল ও যেগুলো রিসাইক্লিং করা যায় না, সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পুনঃপ্রক্রিয়া বা রিসাইক্লিং করা যায় এমন দ্রব্যগুলোকে তাদের ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথক করে রিসাইক্লিং কোম্পানিগুলোতে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি বছর দেশে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টন উৎপাদিত ই-বর্জ্য যার প্রত্যেকটি অংশই রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ও জাতিসংঘের হিসাব মতে, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রিসাইক্লিং বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করতে পারলে ই-বর্জ্য থেকে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন মূল্যবান ধাতু উদ্ধার করা সম্ভব। তা ছাড়া পুরাতন বোতল, প্লাস্টিক, কাগজ ইত্যাদি দ্রব্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়। ট্যানারি বর্জ্য থেকে রিসাইক্লিং করে জিলাটিন (এক ধরনের আঠা) তৈরি করা যায়। প্লাস্টিককে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলিয়ে প্রেট্রোল-ডিজেল তৈরি করা যায়। পুরাতন টায়ার থেকে তেল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়।
আধুনিক রিসাইক্লিং পদ্ধতি যেমন একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে, দুর্গন্ধ থেকে বাঁচায়, মানুষের জীবন যাত্রা সুষ্ঠু ও মানসম্মত করে তোলে তেমনি বহু মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। প্রয়োজন শুধু সরকারি-বেসরকারি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন জাপানের সাথে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করে সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাইকার যৌথ উদ্যোগে ক্লিন ঢাকা মাস্টার প্লান নামে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় স্থাপন করা হচ্ছে ক্লিন ওয়েস্ট মেশিন, যার মাধ্যমে বর্জ্যকে গ্রিন ওয়েস্টে পরিণত করা যাবে। কোনো প্রকার শব্দ ও ধোয়া ছাড়া ময়লাকে পরিশোধিত করে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় সিমেন্ট উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যাবে। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা, দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন ও ৩২৮টি পৌরসভা নিজেদের উদ্যোগে, সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর স্বাস্থ্য সম্মত বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।