পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সউদী আরব থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮৬ হাজার বিদেশী গৃহকর্মী কাজ ছেড়ে পালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সউদী প্রশাসন মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সউদী সরকার এ বিষয়টির হাল-হকিকত সম্পর্কে জানতে উদ্যোগী হয়েছে। গত শনিবার আরব নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে, সউদী প্রশাসন বিদেশ থেকে আসা এসব গৃহকর্মীর পলায়ন স্পৃহার মূল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তদন্তে নেমেছে এবং এ নিয়ে কাজ করতে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সউদী আরব থেকে গৃহকর্মী পলায়নের ঘটনায় দেশটির মজলিসে শূরার সদস্যরা বলছেন, এটি এখন সউদী আরবের অন্যতম মাথাব্যথা হয়ে গেছে। কারণ গৃহকর্মীদের এ পলায়ন প্রবণতা দেশটির অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবদুল্লাহ আল ওতাইবি নামের একজন শূরা সদস্য এ সমস্যা সমাধানে রিক্রুটমেন্ট নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সমস্যা সমাধানে কী কী সুপারিশ দেয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে জানতে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। আরব নিউজের খবরে বলা হয়, গৃহকর্মীদের ঠিকমতো বেতন ও খেতে না দেয়া এবং নির্যাতন, যৌন হয়রানি, সহিংসতা ইত্যাদি কারণে আজ এ অবস্থা। বিশেষ করে নারীকর্মীরা সউদী মালিকদের ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে ক্রমেই সউদী আরবে গৃহকর্মীদের এ সঙ্কট বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মজলিসে শূরা দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। বলা হচ্ছে, গৃহকর্মীদের এ সঙ্কটের দায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়। এ তাদেরই ব্যর্থতা। এছাড়া মন্ত্রী পরিষদে পাস হওয়া কর্মসংস্থান কৌশল বাস্তবায়নও তাদেরই দায়িত্ব। এ অবস্থার জন্য সউদীদেরই দায়ী করেছেন দেশটির অনেক নাগরিক। তারা বলেছেন, গৃহকর্মীদের পালানোর যে সমস্যা দিন দিনই বাড়ছে এর জন্য নাগরিকদের আচরণ দায়ী। এটি কমাতে হলে বা এর সমাধান চাইলে গৃহকর্মীদের সাথে মালিকদের অসদাচরণ বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সউদী আরব। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫২ হাজার ৬২৫ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ৫ হাজার ৭১৫ নারী কর্মরত রয়েছেন। সচ্ছলতার আশায় স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের অনেক নারী পাড়ি জমাচ্ছেন সউদী আরবে। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। একপর্যায়ে সউদী আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসেও আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখার এক জরুরি বার্তায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। ফলে এত দিন এ বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকলেও ওই বার্তায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বলা হয়েছে, আগামীতে সউদী আরবে নারীকর্মী পাঠানোর আগে অন্তত ৬টি বিষয়ে নিশ্চয়তার কথা ভাবা হচ্ছে। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত এক চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ গৃহকর্মী নেবে সউদী আরব। সউদী আরবে নারীকর্মী প্রেরণের ঘোষণা আসার পরও তেমন সাড়া পড়েনি। একসময় নারীর সাথে তার আত্মীয় পুরুষকর্মীর ভিসা দেয়ার সুযোগও উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের নেতিবাচক আবহ এখনো কেটে না যাওয়ার ফলে বাংলাদেশী নারীকর্মীরা সউদী আরবে যেতে ততটা উৎসাহ পাচ্ছেন না। যদিও সউদী আরবই আমাদের বৃহত্তর শ্রমবাজার এবং জনশক্তির কাক্সিক্ষত গন্তব্য। আলোচিত বাস্তবতার আলোকে এখন থেকে সউদী আরবে বাংলাদেশী নারীকর্মী পাঠানোর আগে ৬টি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এগুলোর মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পর্কে আরো বেশি যাচাই করা, তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, যেসব এজেন্সি চুক্তি ভঙ্গ করে স্পন্সর পরিবর্তন করেছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা, বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়া গৃহকর্মী, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি, স্পন্সর ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্যাদি বিএমইটি থেকে দ্রুততার সঙ্গে দূতাবাসে পাঠানো, নতুন কর্মী পাঠানোর আগে তাদের বয়স, স্পন্সরের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ও পুরুষ সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে অতি সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি পুরুষকর্মী এবং অন্য সেক্টরে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সউদী কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও ইতোমধ্যে পাঠানো গৃহকর্মীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নতুন নারীকর্মী পাঠানোর ব্যাপারে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টিও রয়েছে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সউদী আরবের আর্থ-সামাজিক ও চিন্তাচেতনাগত অবস্থার কিছু বাস্তবতাই গৃহকর্মী বিশেষত নারী গৃহকর্মীদের মনে এক ধরনের বিরূপ ভাবের জন্ম দিয়েছে। যার ফলে সম্প্রতিক সময়ে দুনিয়ার বহু দেশ আগের মতো আর নারীকর্মী পাঠাতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশ আগ্রহী হলেও নেতিবাচক আবহ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত কর্মীরাই উৎসাহবোধ করবে বলে মনে হয় না। তবে মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান করে সমস্যা দূর করার কৌশল নির্ধারণ করতে পারলে সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যাবে। বিশেষ করে সউদী সরকার এ বিষয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে এবং তদন্ত ও কৌশল নির্ধারণের যে পদক্ষেপ নিতে চলেছে তা হবে যথার্থ ও সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। সউদী মজলিসে শূরা ও শ্রম মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলে সমস্যা কেটে যাবে তবে এসব ক্ষেত্রে আইন ও কৌশলের পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক এবং মানবিক সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। একজন দরিদ্র শ্রমিক ও নিবেদিত গৃহকর্মীর প্রতি বিত্তবান মালিকের করণীয়, নারীকর্মীর প্রতি সম্মান ও তার ইজ্জত-আব্রুর সুরক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করার মতো দরদী মানসিকতা ও মূল্যবোধের বিস্তার করতে হবে। পাশাপাশি দূতাবাস কর্তৃক কর্মীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা, কোনো সমস্যায় যোগাযোগের হেল্পলাইন চালু করা, নিয়মিত সাক্ষাৎ ও কাউন্সিলিং ইত্যাদির মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব। তাছাড়া, সউদী ধর্মীয় পুলিশ ও অন্যান্য ধর্মীয় সচেতনতামূলক সংস্থার সাথে সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমেও বাংলাদেশী নারীকর্মীদের সামগ্রিক নিরাপত্তা, অধিকার ও সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করার প্রয়াস সম্ভব। উভয় দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে একসাথে কাজ করে সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসবেন এটাই প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।