২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মূলা একটি পরিচিত সবজী। তবে সবজী হিসাবে মূলা খেতে অনেকে আবার অপছন্দ করেন। কারন মূলা খেলে নাকি বদহজম হয়, পেটে বায়ু জমে ইত্যাদি। মূলা শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। মূলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সবজী। আমরা জানি ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শীত কালে সাধারনত অনেক রোগ দেখা দেয়। কারণ শীত মানেই রোগ জীবানুর আড্ডা। আমাদের চার পাশে জীবানু বাড়বে মানে আমাদেরকে আক্রমন করবে। আমরা বেশী অসুস্থ হব। মহান আল্লাহ তায়ালার কত দয়া যে, এই শীত কালেই সব চেয়ে বেশী শাক সবজী দিয়েছেন। গ্রামের মানুষ এই সময়ে অনেকেই নিজে শাক সবজী চাষ করেন এবং আমরা খুব সহজে, অল্প দামে শাক সবজী কিনতে পারি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশী শাক সবজী খেয়ে থাকি। ফলে শীতের রোগ জীবানু আমাদের উপর আক্রমন করে খুব সহজে টিকতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা যখন যা প্রয়োজন তখন বান্দাাকে তাই দিয়ে থাকেন, হয়তো আমাদের বুঝতে একটু সময় লাগে। এই শীতে মূলা কেন বেশী করে খাব তা জেনে নেই।
১০০ গ্রাম মূলার মধ্যে আছে শক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, শর্করা ৩.৪০ গ্রাম, চিনি ১.৮৬ গ্রাম, আঁশ ১.৬০ গ্রাম, ¯েœহ ০.১০ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬৮ গ্রাম, থায়ামিন ০.০১২ মিঃ গ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০৩৯ মিঃ গ্রাম, ন্যায়াসিন ০.২৫৪ মঃি গ্রাম, ভিটামিন বি৫ ০.১৬৫ মিঃ গ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৭১ মিঃ গ্রাম, ফোলেট ২৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ১৪.৮০ মিঃ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৫ মিঃ গ্রাম, লোহাা ০.৩৪ মিঃ গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১০ মিঃ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৬৯ মি গ্রাম, ফসফরাস ২০ মি গ্রাম, পটাশিয়াম ২৩৩ মি গ্রাম, দস্তা ০.২৮ মিঃ গ্রাম, ফ্লোরাইড ৬ মাইক্রোগ্রাম।
১। মূত্রকৃচ্ছতা: অল্প অল্প প্রশ্রাব হয়। দাঁড়িয়ে বসে কোন ভাবেই প্রশ্রাব পরিস্কার হচ্ছে না। বায়ূ জনিত কারনে সাধারনত এই রোগ হয়ে থাকে। কী এক সমস্যা। এই অবস্থায় মূলা বীজ চূর্ণ করে ১ থেকে দেড় গ্রাম পরিমাণ পানি সহ খেতে হবে। তাহলে এই সমস্যা থাকবে না। তাছাড়াও এটা খেলে কিডনীতে পাথর হবে না।
২। কিডনীতে পাথর হওয়ার কারনে : মূত্রকৃচ্ছতা দেখা দিলে মূলা শাক বেটে তার রস নিতে হবে। ৩-৪ চামচ রস নিয়ে তার সাথে পানি মিশিয়ে হালকা গরম করে সকাল বিকাল দুই বার খেতে হবে। কিডনীতে পাথর থাকলে পাথর গলে বের হয়ে যাবে। আর পাথর না থাকলে আর পাথর হবে না।
৩। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মূলায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি রয়েছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শীত জনিত সর্দিকাশি থেকে সুরক্ষা দেয়।
৪। হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: মূলার মধ্যে এন্থোসায়ানিন নামক পদার্থ রয়েছে। যা হার্টকে খুব সহজেই শক্তিশালী করে দেয়। তাই নিয়মিত মূলা খেলে হার্টের সমস্যা থাকে না বললেই চলে।
৫। ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ: নিয়মিত মূলা পাতার শাক খেলে দেহের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। তেমনি ভাবে আয়রন, ক্যালশিয়াম, ফলিক এ্যাসিড এর ঘাটতিও পূরণ হয়। ফলে খুব সহজে রোগ জীবাণু আক্রমন করে টিকতে পারে না।
৬। জন্ডিস: কারো জন্ডিস হলে ৩-৪ চামচ করে দিনে ২বার মূলা পাতার রস সেবন করুন জন্ডিস সেরে যাবে। তাছাড়া শুকনো মূলা চার ভাগ ও লেবু এক ভাগ পানিতে সিদ্ধ করে ক্বাথ যখন ঘন হবে তখন নামিয়ে নিন এবং দিনে দুই বার পান করুন । জন্ডিস সেরে যাবে।
৭। ওজন কমাতে: মূলায় খাদ্য আঁশ ও প্রচুর পানি রয়েছে তাছারা এতে ক্যালরির পরিমাণ কম। তাই মূলা খেলে খাদ্য চাহিদা কমে। ফলে অতি ভোজনের অভ্যাস কমে যায়। ফলে দেহের ওজন কমে আসে।
৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে: মূলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত মূলা খেলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯। মাসিক ¯্রাবে যন্ত্রণা: মাসিক ঋতু ¯্রাব হওয়ার সময় কোমরে ও তলপেটে অসম্ভব যন্ত্রণা, ¯্রাবও কম, কোন কোন সময় মাথায় যন্ত্রণা, মুখে অরুচি ভাব। এমতাবস্থায় এক গ্রাম পরিমাণ মূলা বীজ চূর্ণ পানি সহ খেলে উপকার পাওয়া যায়। কোন কিছু খাওয়ার পর এটা সেবন করা ভাল।
১০। ছুলি সারাতে: কালো ছুলি হলে ৫-৬ গ্রাম মূলা বীজ পানি সহ বেটে ঘষে ঘষে ছুলিতে লাগালে ছুলি ভাল হয়ে যায়।
১১। হিক্কা: হিক্কার প্রকৃত কারণ অনে সময় জানা যায় না। খাদ্য নালিতে কোন উত্তেজক দ্রব্য প্রবেশ করলেই হিক্কার উদ্রেক হয়। এমতাবস্থায় ৫-৭ গ্রাম আন্দাজ শুকনো মূলা ২ কাপা পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঐ নির্যাস একটু একটু করে ৫-৬ বাব সেবন করলে হিক্কা চলে যায়।
১২। ক্ষতিকর টক্সিন: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমে থাকা টক্সিনগুলো মূলা শরীর থেকে বের করে দিয়ে প্রত্যেকটি অঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৩। রক্ত সরবরাহ: মূলা রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
১৪। আমাশয়: প্রবল কোথানি যুক্ত আমাশয় ১০ গ্রাম পরিমাণ শুকনো মূলা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ঐ ক্বাথ দিনে ৪-৫ বাব খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যায়।
১৫। পায়ের দুর্গন্ধ: যাদের মোজা পরিধান করলেই পায়ে দুর্গন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় শুকনো মূলা পিষে মাঝে মাঝো পায়ে লাগালে পায়ের দুর্গন্ধ চলে যাবে।
১৬। যকৃত সুরক্ষা: মূলাই প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। যা হজম শক্তি ভাল করে। মূলা পিত্ত উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও গলব্লাডারকে রক্ষা করে।
১৭। কোষ্টকাঠিন্য: মূলার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য আস্তে আস্তে কমে যায়। পাইলস রোগেও আরাম পাওয়া যায়।
১৮। মায়ের দুধ বৃদ্ধি: নিয়মিত মূলা খেলে দুগ্ধদানকারী মায়েদের দুধ পর্যাপ্ত হয়।
১৯। ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি: নিয়মিত মূলার রস খেলে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে থাকে । তেমনিভাবে ত্বকের বিভিন্ন রোগও কাছে ঘেঁষতে পারে না।
মুন্সি আব্দুল কাদির
সিনিয়র অফিসার ও জিবি ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ
লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।