পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বজুড়ে এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হলেও দ্রুতই বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই ধরন। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। সারা পৃথিবীতে এখন দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাংলাদেশেও এ নিয়ে আতংক কম নেই। কোভিড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে, যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। এই ভ্যারিয়েন্টটি সারা বিশ্বকে অশান্ত করে দিতে পারে। ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো, এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং অতি সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
আমারা সতর্ক নই বললেই চলে। জনসমাগম সবখানেই হচ্ছে। নির্বাচনও হচ্ছে। হাটবাজার পুরদমে জমছে। করোনা আছে আমরা তা হয়তো ভুলেই গেছি। খুব স্বাভাবিক চলাফেরা করছি আমরা। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে এমনিতেই শৈথিল্য আছে। মাস্কবিহীন চলাচল করছি আমরা। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় খেয়াল করলেই দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেনি। অনেকের মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝুলছে। এর বাইরে যেসব বিধি পালনীয় সেগুলো প্রতিপালনের তো প্রশ্নই ওঠে না। শৈথিল্য আছে স্বাস্থ্য খাতের পরিষেবা নিয়েও। মাস্ক খুলে চলার এখনো সময় হয়নি।
মানুষের আসলে হুঁশ নেই। আগের চেয়েও বাজারে এখন বেশি মানুষ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের ইনস্টিটিউট ও এপিডেমাইওলজি, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশকে এ ব্যাপাওে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্টের অসংখ্য রূপান্তর আছে। তার মধ্যে বেশ কিছু আছে ‘উদ্বেগজনক’। আর এটিকে করোনার ভয়াবহতম ভ্যারিয়েন্ট বলছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বেশির ভাগ টিকা ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তবে এটা কতটা সংক্রামক তার সঠিক তথ্য এখনও বিজ্ঞানীরা দিতে পারেনি। তা নির্ণয়ের কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন হেলাফেলা চলবে না। একেবারে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। ঘুরতে না যাওয়ার, অনুষ্ঠানাদি এড়িয়ে চলা, বেশি মানুষ এক জায়গায় না হওয়ার, আড্ডাবাজি বন্ধ করতে হবে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন যে কোন সময় এদেশে ঢুকে পড়বে। সবাই সতর্কতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে না পরলে আমরা এ যুদ্ধে হেরে যাব। যেহেতু করোনার টিকা নতুন ভ্যারিয়েন্ট তোয়াক্কা না করেই মানুষের শরীরে আঘাত হানতে পারে সেজন্য সতর্কতার বিকল্প নাই। দিশেহারা হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিকভাবে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সর্বদা বজায় রাখতে হবে। নিজে সতর্ক থাকতে হবে অপরকে সতর্ক করতে হবে।
মাত্র ১০ দিনে ৩০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন প্রজাতির করোনা। চিন্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডেল্টার থেকেও দ্রুত গতিতে এই প্রজাতি সংক্রমিত হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে নতুন প্রজাতির সমস্ত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, এই প্রজাতি কতটা ভয়ংকর তাও এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইসিডিসি ২ ডিসেম্বর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে ওমিক্রন মূল সংক্রমক স্ট্রেন বা ডমিন্যান্ট স্ট্রেনে পরিণত হতে পারে। এখন করোনার মূল সংক্রমক স্ট্রেন ডেল্টা। ওমিক্রন তার জায়গা নিয়ে নিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, ইউরোপে নতুন করে করোনা ছড়াচ্ছে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে ইউরোপে যত করোনা ধরা পড়বে তার অর্ধেকই হবে ওমিক্রন। ইসিডিসি এদিন দাবি করেছে, আফ্রিকার বোতসোয়ানায় ১১ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছিল। এরপর তা দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়ায়। এর পর অন্য দেশে তা দ্রুত ছড়াচ্ছে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার পরেই ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা নতুন করে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সমস্ত বিমান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও ওমিক্রনের সংক্রমণ আটকানো যায়নি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনার নতুন ধরণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব নির্দেশনা দেশের প্রতিটি নাগরিকের মেনে চলা উচিৎ। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে:
১. সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সময় সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। ২. সব ধরনের (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/ অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ৩. প্রয়োজনে বাইরে গেলে সবাইকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে। ৫. সকল প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল, থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে। ৬. মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ৮. আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ৯. সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সকল মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ১০. সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ১২. করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ১৩. কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে। ১৪. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ১৫. কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার নিমিত্তে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/ মন্দির/ গির্জা/ প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
ওমিক্রনের জন্য উপরের এই নির্দেশনাগুলো কড়াকড়ি শুরু হওয়া জরুরি। শতভাগ টিকাকরণ, যারা আগে টিকা দিয়েছেন তাদের বুস্টার ডোজের কথাও বলা হচ্ছে। তবে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। মাস্ক পরতে হবে। ঘনঘন হাত ধুতে হবে, নাকে মুখে হাত দেয়া যাবে না। এদিন ফের হোম অফিসের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। করোনাকে সামনে নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে সচেতন করছে সরকার । তারা একদিকে হাসপাতাল, ক্লিনিক ডাক্তার অন্যদিকে জনগণকেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলছে। মাস্ক ব্যবহার না করলে সরকারি অফিসে সেবা মিলবে না কিংবা ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক- সরকারের তরফে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সরকারি সে নির্দেশ আমাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।